Cvoice24.com

শখের সাইকেলে পার্সেল ডেলিভারি করেন চট্টগ্রামের তানজিমা

ফাতিমা অ্যানি

প্রকাশিত: ১৮:৪৯, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১
শখের সাইকেলে পার্সেল ডেলিভারি করেন চট্টগ্রামের তানজিমা

শখের সাইকেলটি দিয়ে নারী উদ্যোক্তাদের পণ্য ডেলিভারি করেন তানজিমা।

‘নানা লোকের নানা কথাকে উপেক্ষা করতে শিখেছিলাম ছোটবেলা থেকেই। মেয়েরা মেয়েলি খেলা খেলবে কথাটা  আমার কখনোই ভাল লাগেনি। পুতুল বিয়ে না ব্যাডমিন্টন আর ক্যারাম আমার প্রিয় খেলা। সাইকেল চালানো ছিল আমার সব থেকে প্রিয়। এ নিয়ে কম কথা শুনিনি। পাছে কথাকে গুরুত্ব দিই না। সে পুরনো সাইকেলটি নিয়ে আজ আমি চট্টগ্রাম নগরে পার্সেল ডেলিভারি উইম্যান হিসেবে কাজ করছি। তবে সবার জন্য নয় অনলাইন নারী উদ্যোক্তাদের পণ্য আমি নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে দিই। অদ্ভূত ভাল সাড়া পেয়েছি। আমি কাজটিকে ধরে রাখতে চাই।’— কথাগুলো চট্টগ্রাম নগরীর অন্যরকম এক উদ্যোক্তা তানজিমা আকতারের। শুধু কাজের জন্য নয় নারীর জন্য নারীকে সহায়ক হতে হবে বলেই পার্সেল ডেলিভারির কাজের মত অন্যরকম উদ্যোগ নিয়েছেন বলে জানালেন তিনি।

চট্টগ্রামের হাটহাজারীর মেয়ে তানজিমা নগরের সাদার্ন ইউনিভার্সিটিতে স্নাতক পড়ছেন হোটেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট নিয়ে। ভবিষ্যতে তিনি পার্সেল ডেলিভারি নিয়ে বড় পরিসরে কাজ করতে চান নারী উদ্যোক্তাদের জন্য।

কীভাবে এ উদ্যোগের শুরু এমন প্রশ্নে তানজিমা বলেছেন, পার্সেল ডেলিভারির কাজটা শুরু করেছি সেটি খুব বেশিদিনের কথা নয়। এই তো মাসখানেক আগের।

তানজিমা বলেন, ‘লকডাউনে ঘরে তৈরি খাবার বিক্রি করেছিলাম অনলাইন প্লাটফর্মে। সাইকেল চালিয়ে নিজের অর্ডারগুলো আমি নিজেই পৌঁছে দিতাম। একদিন আমার বান্ধবী বলল তার একটি পণ্য পৌঁছে দিতে। বান্ধবীকে সাহায্য করতেই সেটি করেছিলাম। কাজটি করেই ভেবেছি, আমি তো সাইকল নিয়ে ঘুরতে পছন্দ করি তো অন্য আপুদের পণ্য পৌঁছে দেওয়ার কাজটি করি। ফেসবুকের একটি গ্রুপে পোস্ট করতেই অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছি। বিশেষত মেয়েদের কাছে। তখন থেকেই শুরু। এরপর থেকে প্রচুর কাজ হচ্ছে ও বিষয়টি আমি খুব এনজয় করছি।’

তানজিমা বলেন, ‘অবাক হওয়ার বিষয়টি কী জানেন? অনেকে আমাকে প্রশ্ন করেছে এ কাজটি আমি খুব প্রয়োজনে করছি না শখ। মানুষের মনে নারীর কাজ মানে হয় প্রয়োজন নয় শখ। কেন নারী নিজের ইচ্ছায় কোন কাজকে পেশা বা জীবিকা হিসেবে নিতে পারে না?’

তানজিমা বলেন, ‘আমি যখন প্রথম পোস্ট করি ফেসবুকে অনেক আপুরা আমাকে স্বাগত জানিয়েছেন। মনে হল যেন খুব কমফোর্ট জোনে আছি। অনেক সময় কষ্ট হলেও দূরে হলেও আপুদের জন্য সেখানে পিকআপ বা ডেলিভারিতে যাই। কিছুতো একটা মোটিভেটর থাকে। ‘আপুর জন্য আপু’ বা নারী উদ্যোক্তদের জন্য কাজ করাটা আমার মোটিভেটর। লক্ষ্য করলাম নারী উদ্যোক্তা থাকলেও নারী ডেলিভারি পারসন ছিল না। এ জায়গাটাতে আমি আমার মতো করে ভেবেছি। হয়ত এরপরে আরও অনেকেই এগিয়ে আসবেন।’

এ পর্যন্ত কতটা পার্সেল ডেলিভারি করেছেনে জানতে চাইলে তানজিমা বলেন, ‘দিনে অন্তত পাঁচটা পার্সেল ডেলিভারি করছি। অনেক কাজ আমি দূরের লোকেশন বলে নিতে পারি না। বাদ দিতে হয়। পেশা হিসেবে ভাবলে আমি এটিকে খুব ভাল বলব। নতুন নতুন ব্যবসায়ী আপুদের সাথে কথা হয়। কাজ হয়। সামাজিক সংযোগটা বাড়ে। বেশিরভাগ অনলাইন উদ্যোক্তা আপু জানিয়েছেন এটি তাদের জন্য একটি বিশেষ সুবিধা। পিক আপ ও পার্সেল ডেলিভারিতে নারীর সাথে কাজ করে তারা অনেক কমফোর্ট পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন। এছাড়া অনেক ছেলেরাও যোগাযোগ করেন ডেলিভারির জন্য। সময় পেলে তাদের কাজও করে দিই।’

আয় কেমন হচ্ছে জানতে চাইলে তানজিমা বলেন, ‌‘প্রতিটি পার্সেল ডেলিভারিতে আমি ৭০ টাকা নিই। আমি তো সাইকেল চালিয়ে যাই। সেটি কিছুটা শারীরিক কসরতের এবং সময়সাপেক্ষও। তাই খুব দূরের লোকেশন হলে করি না। একটা কাজ শুরুর সাথে সাথে খুব ভাল আয় হবে এমন আশা করছি না। তবে আলহামদুলিল্লাহ ভালোই যাচ্ছে। আশা করি ভবিষ্যতে নারী ডেলিভারি নিয়ে বড় কিছু করার প্রত্যাশাও আছে। আমার জন্য দোয়া করবেন।’

-সূত্র: উইম্যান ভয়েস বিডি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়