Cvoice24.com

বসন্তে আজি ভালোবাসার দিন

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০৯:০১, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১
বসন্তে আজি ভালোবাসার দিন

বসন্ত ও ভালোবাসা দিবস ঘিরে সেজেছে চেরাগী পাহাড়ের ফুল দোকানগুলো। ছবি : আজীম অনন

প্রকৃতির দখিণা দুয়ারে বইছে ফাগুনের হাওয়া। কোকিলের কণ্ঠে বসন্তের গান। ফুলে ফুলে ভ্রমরের খেলা। পলাশ আর শিমুলের মেলা বসেছে গাছে গাছে। কৃষ্ণচূড়ার ডালে আগুনলাগা রঙ। সব কিছুই জানান দিচ্ছে আজ পহেলা ফাল্গুন। মাঘের জড়তা ভেঙে এসেছে ঋতুরাজ বসন্ত। একই দিনে আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। চারদিক তাই লাল-বাসন্তির খেলা। 

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে উদযাপন করা হয় ভালোবাসা দিবস হিসেবে। আর ইংরেজি বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী এতোদিন বসন্তের প্রথম দিন অর্থাৎ পহেলা ফাল্গুন ছিল ১৩ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু বাংলা বর্ষপঞ্জি সংশোধনের পর এবার একই দিনে পড়েছে বসন্ত উৎসব আর ভালোবাসা দিবস। 

বাঙালির যতো ভালোবাসা, সব বসন্তকে ঘিরেই। বসন্তকে নিয়ে কবি, সাহিত্যিক, শিল্পীদেরও ভালোলাগা ও ভালোবাসা অশেষ। তাই ঋতুরাজের আগমনে গলা ছেড়ে শিল্পী গেয়েছেন— ‘পলাশ ফুটেছে শিমুল ফুটেছে এখন দারুণ মাস/আমি জেনে গেছি তুমি আসিবে না ফিরে/মিটিবে না পিয়াস।’ কিংবা ‘বসন্ত আজ আসলো ধরায়/ফুল ফুটেছে বনে বনে/শীতের হাওয়া পালিয়ে বেড়ায় ফাল্গুনী মোর মন-বনে...।’ 

কলিযুগের ছেলে-মেয়েরা অবশ্য উড়ায় নতুনের কেতন। তাদের গানেও এসেছে বৈচিত্র্য— ‘আকাশে বহিছে প্রেম, নয়নে লাগিল নেশা/কারা যে ডাকিল পিছে! বসন্ত এসে গেছে...।’ কেউ কেউ আবার গেয়ে উঠে— ‘জেগেছে বাঙালির ঘরে ঘরে, এ কি মাতন দোলা, বছর ঘুরে এলো আরেক প্রভাত নিয়ে, ফিরে এলো সুরের মঞ্জুরি, পলাশ শিমুল গাছে লেগেছে আগুন, এ বুঝি বৈশাখ এলেই শুনি, মেলায় যাইরে মেলায় যাইরে...।’

সে যাই হোক, ফাল্গুনী হাওয়া উদাস করে প্রেমিক-প্রেমিকার হৃদয়ের জমিনে ঋতুরাজ বসন্ত ভালোবাসার ঢেউ তুলবেই। মিলেমিশে সব একাকার বসন্ত ভালোবাসায়। বাসন্তী আবীরের সঙ্গে খোঁপায় হলুদ গাঁদা আর মাথায় লাল গোলাপের টায়রায় তারুণ্যের ভাঁজে ভাঁজে আজ শৈল্পিকতা। আবহমান বাংলার বাসন্তীদের হৃদয়ে তরুণরাও ধরা দিয়েছে একরাশ ফাল্গুনী সাজে। লাল কিংবা হলুদ শাড়ি আর পাঞ্জাবীতে তরুণ-তরুণীর বাঁধভাঙা উল্লাসে নতুনভাবে সেজেছে দেশ।

বসন্ত ও ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে চেরাগী পাহাড় থেকে ফুল কিনছেন এক তরুণী। ছবি : আজীম অননসকাল থেকেই চট্টগ্রাম নগরের বিনোদন কেন্দ্র, হোটেল-রেস্টুরেন্ট ও বিনোদন পার্কগুলোতে ভালোবাসা ও বসন্তের মিছিল। তারুণ্যের বাঁধভাঙা জোয়ারে বাঁধনহারার দেশে ছুটছে প্রেমের তরীতে ভেসে চলা যাত্রীরা। বসন্তমিশ্রিত ভালোবাসার এমন দিনে পরস্পরের শুভেচ্ছায় সিক্ত কপোত-কপোতী। ফুল, কার্ড, চকলেট বিনিময়ের পাশাপাশি কবিতা ও ছন্দ মিশ্রিত ক্ষুদে বার্তায় ভরে যাচ্ছে মুঠোফোনের ম্যাসেজ বক্স। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, হোয়াটস আপেও ছড়িয়েছে পরাণের গহীনের উষ্ণতা।  

সারাদেশের মতো এই বন্দরনগরের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোও নাচ, গান, আবৃত্তিসহ নানা আয়োজনে আজ বসন্ত ও ভালোবাসাকে উদযাপন করছে। তবে বৈশ্বিক মহামারি করোনা দুর্যোগের কারণে এবারের আয়োজন হচ্ছে স্বল্প পরিসরের ও সীমিত সময়ের জন্য। 

এদিকে দুটি ফুল নির্ভর উৎসব একদিনে হওয়ায় ফুলে ফুলে ভরে গেছে পথঘাট। বাহারি ফুলের সমাগম হয়েছে নগরের চেরাগী পাহাড়ের ফুলের দোকানগুলোতে। থরে থরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে নানা ফুল। ভালোবাসার মানুষের জন্য অনেকে তা কিনে নিচ্ছেন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, কয়েকদিন ধরেই ফুল বিক্রি কিছুটা বেড়েছে। বসন্ত ও ভালোবাসা দিবস ঘিরে গাঁদা ও লাল গোলাপ বেশি বিক্রি হলেও দোকান রাঙাচ্ছে গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা ও নানান রঙের দেশি-বিদেশি ফুলও। 

চেরাগী পাহাড়ের ফুল দোকানী আবু তাহের সিভয়েসকে বলেন, ‘করোনার কারণে গত কয়েক মাসে ফুলের বাজার অস্থিতিশীল থাকলেও এখন কিছুটা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে। বসন্ত, ভালোবাসা দিবস ও একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে বেশ বেচা-বিক্রি হচ্ছে। তবে এখনো পাইকারি বাজারে ফুলের দাম কিছুটা বাড়তি। একশ গোলাপ কিনতে হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়।’ চেরাগীর পাইকারী বাজারে চট্টগ্রামের চকরিয়া, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ, যশোর ও থাইল্যান্ড থেকে ফুল আসে বলে জানান আবু তাহের।

ফুল ব্যবসায়ী মো. ফারুক সিভয়েসকে বলেন, ‘প্রতিটি গোলাপের খুচরা দাম ২০ টাকা। আর চায়না গোলাপ প্রতিটি ৮০ থেকে ১২০ টাকা বিক্রি করছি। সাধারণত প্রতিটি গোলাপ ৮ থেকে ১০ টাকা বিক্রি করি। ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে দাম একটু বেড়েছে। এছাড়া মেয়েদের মাথায় ব্যবহৃত ফুলের ক্রাউনুলো ১০০ থেকে ২২০ টাকা পর্যন্ত, খোঁপায় পরার ফুলের গাজরা ৬০ টাকা করে দাম নেওয়া হচ্ছে।’ 

তবে কয়েকজন ফুল ব্যবসায়ী বলছেন, করোনার কারণে স্কুল কলেজসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ক্রেতা কম এবছর। ব্যবসার ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেওয়ার ইচ্ছা থাকলেও তা নিয়ে সংশয়ে আছেন তারা।
 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়