Cvoice24.com

‘চা’ এ চমৎকার চুল!

ফিচার ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৮:১২, ২৩ জানুয়ারি ২০২৩
‘চা’ এ চমৎকার চুল!

চা-প্রেমীদের জন্য অন্য কিছু হোক বা না হোক, চা ছাড়া কিন্তু এক দিনও চলে না। সকালে ঘুম থেকে উঠে এক কাপ চা আমাদের চাইই চাই। তা সে কড়া এক কাপ লিকার চা হোক, কিংবা ঘন দুধের সাঙ্গে গরম মশলা মেশানো চা। সারা রাতের আলিশ্য ভরা ঘুম তাড়িয়ে নিমিষেই চাঙ্গা করে তুলতে চায়ের জুড়ি মেলা ভাড়।

কিন্তু চুলের পরিচর্যায় চায়ের জুড়ি নেই। এই চা পাতা যে আমাদের শরীরের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের চুল গুলোকেও চাঙ্গা করে তুলতে পারে সেটা কি আপনারা জানেন? অনেকেরই হয়তো অজানা। আসলে চা পাতা আমাদের চুলের যত্নে অনেক কার্যকরি ভূমিকা পালন করে। চুলের পরিচর্যায় চায়ের জুড়ি নেই। এতে থাকা বিভিন্ন উপাদান মাথার ত্বকের যত্নেও বেশ ফলপ্রদ। 

অবশিষ্ট চা কিংবা চা-পাতা বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা যায়। চুল ধোয়ার ব্যাপারটা অনেকেরই জানা। তবে এর পদ্ধতি ও উপকারিতা সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। চুলে পুষ্টি আসে চা দিয়ে ধুলে। কেননা এতে ক্যাফেইন আর ট্যানিন থাকে। ফলে চুল স্বাস্থ্যোজ্জ্বল হয়ে ওঠে। তবে কোন ধরনের চা কী রকম উপকারিতা দেয়, তা নির্ভর করবে চুলের ধরন এবং চা কতক্ষণ চুলে রাখতে হবে তার ওপর। এ ছাড়া ভেষজ চা, ব্ল্যাক টি, গ্রিন টি এবং হিবিসকাস টি পুষ্টিগুণে ভরপুর, এগুলো চুলের বৃদ্ধিতে কাজ করে। চুলের উজ্জ্বলতা বাড়ায়, মাথার চুলকানি দূর করে ও খুশকি প্রতিরোধে সহায়ক। ব্ল্যাক টি-তে থাকা ক্যাফেইন ওই সব হরমোনের প্রভাব কাটিয়ে দিতে পারে, এতে চুল পড়া ও চুলের ক্ষতি রোধ করা যায়।

  • চুল বৃদ্ধিতে সহায়ক
  • প্রাকৃতিক ডাই হিসেবে কাজ করে
  • ময়শ্চারাইজ করে
  • চুল পড়া কমায়
  • মরা কোষ দূর করে এবং নতুন কোষ উৎপাদনে সহায়ক
  • চুলের হারিয়ে যাওয়া শাইন ফিরিয়ে আনে
  • চুল মজবুত করতে এবং নতুন চুল গজাতে ভূমিকা রাখে

টি প্রিপারেশন
৩ টেবিল চামচ চা পাতা প্রথমে দুই কাপ ঠান্ডা পানিতে ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাখতে হবে। এরপর চুলায় দিয়ে পানি টগবগ করে ফুটে উঠলে চুলার আঁচ কমিয়ে দিতে হবে। বেশ কিছুক্ষণ ফুটানোর পর যখন পানি কমে এক কাপ হয়ে আসবে তখন চুলা বন্ধ করে দিতে হবে। এই অবস্থায় চায়ের লিকার এক ঘণ্টা রেখে দিতে হবে। এই সময়ের মধ্যে চায়ের লিকার ঠান্ডা হয়ে রুম টেম্পারেচারে চলে আসবে। তখন এটি ব্যবহার করা যাবে। ব্যবহারের জন্য এই পানি একটি ছোট স্প্রে বোতল ভরে নিতে হবে।

চায়ের জাত অনুযায়ী ব্যবহারেও আসতে পারে ভিন্নতা। তাই চুলের জন্য কোন চা সবচেয়ে কার্যকর, দেখে নেওয়া জরুরি—

ব্ল্যাক টি
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পান করা পানীয়ের মধ্যে ব্ল্যাক টি বা লাল চা অন্যতম। এটি চুলের ফলিকলে প্রচুর পুষ্টির সরবরাহ করে। এতে ক্যাফেইনের পাশাপাশি ক্যাটেকিন, থিয়াফ্লিভিন এবং থিয়ারুবিজিনের মতো ট্যানিন উপাদান রয়েছে, যা চুল স্বাস্থ্যকর রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া লাল চা সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম এবং ফসফরাসের মতো পুষ্টিকর খনিজে সমৃদ্ধ, ফলে চুল বৃদ্ধিতে সহায়ক।

লাল চা ওমেগা-৩ এবং ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিডেরও ভালো উৎস, এগুলো মাথার ত্বকের শুষ্কতা দূর করতেও সাহায্য করে—

  • ব্ল্যাক টি চুল পড়া রোধ করে এবং চুলের বৃদ্ধি সহজ করে
  • ক্ষতিকর ইউভি রশ্মি থেকে চুলকে রক্ষা বাঁচায়
  • প্রাকৃতিক রঞ্জক হিসেবে এটি ব্যবহার করা যেতে পারে
  • চুল সিল্কি এবং শাইনি করতে ব্ল্যাক টি অতুলনীয়

গ্রিন টি
গ্রিন টি বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় একটি পানীয়। ব্ল্যাক টি-এর মতো, এটিও ক্যামেলিয়া সিনেনসিসের পাতা থেকে তৈরি হয়। একাধিক ডার্মাটোলজিস্টের দাবি, গ্রিন টি ত্বকের পাশাপাশি চুলের যত্নেও বেশ কার্যকর। সে কারণেই অনেক হেয়ার প্রডাক্টের উপাদান হিসেবেই গ্রিন টি ব্যবহার করা হয়। গ্রিন টি হলো এপ্লিগালোকেটেকিন গ্যাললেটের একটি চমৎকার উৎস। এই যৌগ ক্যাটেচিন নামে পরিচিত একটি গ্রুপের অন্তর্গত। এটি চুলকে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল করার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।

গ্রিন টি দিয়ে চুল ধোয়ার উপকারিতাগুলো হলো—

  • মাথার ত্বকে পুষ্টি এবং অক্সিজেন সরবরাহ বাড়িয়ে রক্তসঞ্চালন উন্নত করে এটি
  • ক্ষতিকর ইউভি রশ্মি থেকে চুলকে বাঁচায়
  • বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে
  • চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে

হিবিসকাস টি
স্বাস্থ্যকর উপায়ে চুল বৃদ্ধিতে হিবিসকাস একটি জনপ্রিয় প্রাকৃতিক উপাদান। বাগানে এই গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ অলংকার হিসেবে রাখা ছাড়াও চুলের যত্নে এর পাতা ও ফুল ব্যবহার করা যায়। এটি ভিটামিন সি, অ্যামিনো অ্যাসিড এবং মিউসিলেজ সমৃদ্ধ, যা চুলের যত্নে অনেক উপকারী।

হিবিসকাস টি দিয়ে চুল ধোয়ার উপকারিতাগুলো—

  • হিবিসকাস চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে
  • অল্প বয়সেই চুল পেকে যাওয়া থেকে রক্ষা করে
  • প্রাকৃতিক কন্ডিশনারের কাজে লাগে
  • মাথার ত্বকে চুলকানি ভাব থাকলে তা কমায়

ক্যামোমাইল টি
ক্যামোমাইল এমন একটি উদ্ভিদ, যা ডেইজির মতো ফুল উৎপন্ন করে। ক্যামোমাইল চা শুকনা ক্যামোমাইল ফুল ব্যবহার করে তৈরি করা হয়। এটি হলো লাল চা এবং গ্রিন টি এর ক্যাফেইন মুক্ত বিকল্প। ঐতিহ্যগতভাবে বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত সমস্যার প্রতিকার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আর চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতেও এর অবদান অপরিসীম। 

ক্যামোমাইল টি দিয়ে চুল ধোয়ার উপকারিতাগুলো হলো—

  • এর অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি উপাদান চুলের খুশকি দূর করে
  • ব্লন্ড কিংবা ডাই করা চুলের উজ্জ্বলতা বাড়ায়
  • চুলকে ফ্রি র‌্যাডিকেলের ক্ষতি থেকে বাঁচায়

এগুলো ছাড়াও রোজমেরি টি, সেজ টি, নেটেল টি রিন্সও চুলের স্বাস্থ্য রক্ষায় কাজে লাগে। কোনোটা হয়তো শুষ্ক স্ক্যাল্পে তেলের সঞ্চার করে, কোনোটা কাজ করে চুলের তেল চিটচিটে ভাব দূর করতে। তবে চা দিয়ে চুল ধোয়া সব ক্ষেত্রেই উপকারী।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়