Cvoice24.com

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থীদের প্রতি...

মোহাম্মদ নূরুজ্জামান

প্রকাশিত: ১৯:৪২, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থীদের প্রতি...

ছবি : সিভয়েস

মুনীর চৌধুরীর প্রহসনধর্মী কমেডি ‘চিঠি’ নাটকে দেখা যায়— দেশ যখন স্বাধীনতার দাবিতে অসহযোগ আন্দোলনে উত্তাল, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে সোচ্ছার হয়ে উঠেছে। এসবের মধ্যেই দুই মেধাবী শিক্ষার্থীর নোটখাতা পরষ্পর অনিচ্ছাকৃত হাতবদলের পথ ধরে কাহিনীতে সৃষ্টি হওয়া অম্লমধুর রস শেষ পর্যন্ত প্রণয়ধর্মী স্বস্তিতে মধুর সমাপন হয়।

এদেশে পরীক্ষাকেন্দ্রিক যত ছাত্র আন্দোলন হয়েছে, পরীক্ষা পেছানোই ছিল তাদের বেশিরভাগের ‘এক দফা, এক দাবি’।

আমাদের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও একসময় এমন আন্দোলন করেছে। আমার অভিজ্ঞতা বলছে, এবারই প্রথম পরীক্ষা দেয়ার দাবিতে তারা সোচ্ছার। তাদের এই মরিয়া অভিব্যক্তি একজন শিক্ষক হিসেবে আমাকে আনন্দ-বেদনায় সিক্ত করেছে। আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি, দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া কিন্তু উদ্বিগ্ন অনুজের মুখ।

উচ্চশিক্ষার পথে পা দেয়া একজন শিক্ষার্থীর প্রধান লক্ষ্য অনার্স মাস্টার্স শেষ করে কর্মজীবনে প্রবেশ করা। টানাপোড়েনের বেকার জীবনে এটি নিজের জন্য যেমন উপার্জনের নিশ্চয়তা, তেমনি একটি উদ্বিগ্ন পরিবারের জন্য বড় স্বস্তির ও গৌরবের জায়গা।

কিন্তু ‘করোনা’ নামক বৈশ্বিক মহামারি কাউকে করুণা করেনি। বিশেষ করে শেষ দিকের পরীক্ষার্থীরা যেমন- অনার্স ৪র্থ বর্ষ ও মাস্টার্স, যারা পরীক্ষা শেষ করে বেকার থেকে আকার হওয়ার স্বপ্ন দেখছিল, তাদেরই সবচেয়ে বেশি স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে।
 
মাস্টার্সের শিক্ষার্থীদের দুঃশ্চিন্তা একটু কম। কারণ তাদের অনার্স সার্টিফিকেট মাস্টার্সের সমমান। তারা বিসিএস’সহ সকল প্রথম শ্রেণির চাকরিতে আবেদনের যোগ্য। কিন্তু আটকা পড়েছে অনার্স ৪র্থ বর্ষের হতভাগারা। যা-ও শুরু হয়েছিল, শেষ মুহূর্তে ভাইভার আগে তা থেমে গেল।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় অনুমতি দিয়েছিল— জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শুরু করেছিল, আমরাও দায়িত্ব পালন করছিলাম। সেশন এগিয়ে গেলে আমাদের সবারই লাভ হয়। কিন্তু সাময়িকভাবে থামাতে হয়েছে।

আমরা সাধারণ খালি চোখে অনেক কিছু দেখিনা, কিন্তু অনেকে ঘোলা পানিতেও মাছ দেখে। নিজের হাত ভিজিয়ে অজুহাত দাঁড় করান। পরের কাঁধে বন্দুক রেখে পাখি শিকার করে। সেজন্য জনবহুল শিক্ষার্থীর এই দেশে বিরাট শিক্ষাপরিবারকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সোহাগী মা’কে এমন সময় শাসনদণ্ড হাতে তুলে না নিলে চলে না।

‘ক্রাশ প্রোগ্রাম’র মাধ্যমে সেশনজট নিরসনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এর আগেও সাফল্য দেখিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীভুক্ত সাতটি কলেজ শর্তসাপেক্ষে পুনরায় অনুমতি পেয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ও নিশ্চয়ই পিছিয়ে থাকবে না। তাদের ইঞ্জিনিয়াররা নিশ্চয়ই কোনো বুলেট ট্রেন তৈরি করছে। অতএব, ‘আর ক’টা দিন সবুর কর, রসুন বুনেছি।’

সুমহান স্রষ্টার প্রতি অসীম কৃতজ্ঞতা— ভয়াবহ এই ভাইরাস আমাদের জানমালের বড় কোনো ক্ষতি করতে পারেনি। আমরা এখনো সুস্থ আছি। যখন অনেকেই অসীমের পথে চিরবিদায় নিয়েছেন, আমরা তখনো বেঁচে আছি— এটিই বা কম কীসে? পরম করুণাময় সকলের মঙ্গল করুন।

লেখক : সহকারী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, চট্টগ্রাম কলেজ। 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়