Cvoice24.com

সত্যই আমাদের পথচলার শক্তি

আলম দিদার

প্রকাশিত: ১৬:০৯, ১১ এপ্রিল ২০২১
সত্যই আমাদের পথচলার শক্তি

‘অতীতে লোকে মিথ্যা বলতো, মিডিয়া সত্য খুঁজে বের করতো! আর এখন মিডিয়া মিথ্যা বলে, লোকেরা সত্য খুঁজে বের করে!’ 

চিন্তাবিদ ও লেখক সলিমুল্লাহ খানের এই কথার সঙ্গে এক মত হবেন না, এমন লোক খুঁজে পাওয়া ভার। আসলে আজকের পৃথিবীতে সত্য কোথায়? চারদিকেই ছড়ানো-ছিটানো কেবল অসত্যের টক্সিন! করোনার ভাইরাসের মতোই এটি ছড়ায় দ্রুতগতিতে। আক্রমণ করে সবাইকে। লণ্ডভণ্ড করে দেয় ব্যক্তি-সমাজ। গড়ে তোলে অসত্যের শিক্ষায় অবগাহিত এক ভঙ্গুর জাতি। পালিয়ে যাওয়া সত্যের অভাবে একদিন সমাজ ভরে যায় সত্য না জানা লোকজনে। শুরু হয় সত্যকে আড়াল করে মিথ্যাকে সামনে আনার প্রতিযোগিতা। তাতে হয়তো গা হেলিয়েছেন সাংবাদিক সমাজও! সলিমুল্লাহ খানের সত্য-বাণীর যোগফল হয়তো সেটাই দাঁড়ায়। কিন্তু সত্যই কি তাই? 

একটু পেছনে ঘুরলেই ভেসে আসে করোনার প্রথম ঢেউ। চীনের এই ‘সন্তান’ আমাদের দেশে আসে ইতালি হয়ে। গত বছরের ৮ মার্চ প্রথম সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্তের ঘোষণা দেয় সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান—আইইডিসিআর। এর ১০ দিনের মাথায় ১৮ মার্চ দেশে প্রথম প্রাণ কাড়ে ভাইরাসটি। পরবর্তীতে যখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়, ততক্ষণে অনেক দেরি। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা। ধীরে ধীরে পুরো লকডাউনে যায় দেশ। গণপরিবহন থেকে শুরু করে অফিস আদালত— সব বেঁধে যায় সীমিত পরিসরের বেড়াজালে। থমকে যায় সবকিছু, যেন বন্দি হয় প্রকৃতির কাছে। 

‘মানবিক’ মানুষগুলো হয়ে উঠে অমানবিক। নিজেকে রক্ষায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে সবাই। করোনা আক্রান্ত মা-বাবাকে রাস্তায় বা জঙ্গলে ফেলে রেখে সন্তানরা চলে যায় নির্দ্বিধায়। ওই সময়ের মৃত্যুও দেখিয়েছে অনেক কিছু। বাবার লাশ স্পর্শ করেও দেখেননি সন্তান। করোনা আক্রান্তের ভয়ে নিঃসঙ্গ অনন্ত যাত্রায় পাশে থাকতে অস্বীকৃতি জানায় স্বজন। জানাজা তো দূরের থাক, কবর স্থানের আশপাশেও দেখা যায়নি। লাশ হাসপাতালে পড়ে থাকলেও খোঁজ নেয়নি কেউ। তখনই বিবেকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন সংবাদকর্মীরা। সত্যকে সামনে এনে ভেঙে চুরমার করে দেন পাষাণ হৃদয়। পাথরে পাথরে মাথা জাগায় ভালোবাসার ফুল। জাগ্রত হয় মানবতা। এগিয়ে আসে বেশকিছু স্বেচ্ছাসাবী সংগঠন। যেসব ব্যক্তির মরদেহ তার স্বজনরা গ্রহণ করেনি, তাদের জানাজা ও দাফনসহ সব দায়িত্ব নেন সংগঠনের কর্মীরা। তাদেরও অনেকে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, কিন্তু বিকিয়ে দেননি মানবতাকে। সত্যের জন্য জীবন বিলিয়েছেন সংবাদকর্মীরাও। সেই সময়েও ঝুকিঁ নিয়ে কাজ করেছিল টিম সিভয়েস। সর্বোচ্চ সর্তকতার সাথে কাজ করতে গিয়েও সিভয়েসের চীফ রির্পোটার আলম দিদার ও স্টাফ রির্পোটার মিনহাজ মুহী গত মে ও জুন মাসে করোনা আক্রান্ত হন। 

আসলে সাংবাদিকরাই এখনো সত্যকে সামনে এনে মানুষকে পথ দেখান। সামনে এগিয়ে যাওয়ার সাহস জোগান। মিথ্যার পাহাড় ডিঙিয়ে অন্যকে শক্তি দেন। উন্নয়নে, বেঁচে থাকায়, অগ্রগতিতে, এগিয়ে যাওয়ার কেন্দ্রবিন্দুতে সত্যকে অধিষ্ঠিত করাই যে একজন সংবাদকর্মীর কাজ। তবে সত্য আবিষ্কারের বিষয় নয়, উদঘাটনের ঘটক। সত্য আছে চোখের অদেখায়, আমাদের চারপাশে, ঠিক বায়ু-আলো-আঁধারের মতো। একে খুঁজে বের করে মানুষের সামনে আনাই অনুসন্ধানীর দায়িত্ব। 

যে কাজটা করে যাচ্ছেন চট্টগ্রামের বস্তনিষ্ঠ পাঠকপ্রিয় নিউজ পোর্টাল Cvoice24.com -এর এক ঝাঁক তরুণ সাংবাদিক। সমাজের দায়বদ্ধতা থেকে ‘ভয়েস অব চট্টগ্রাম’ স্লোগানকে ধারণ করে ২০১৮ সালের ১১ এপ্রিল এই সংবাদ মাধ্যমের যাত্রা। এরপর থেকে গত তিন বছরে সত্য উন্মোচনে কখনোই পিছপা হয়নি Cvoice24.com। দেশ ও মানুষের স্বার্থে বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দলের নেতার চক্ষুশূলও হতে হয়েছে। সাড়া জাগানো অনেক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করতে গিয়ে দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান নানা জায়গা থেকে এসেছে নানা হুমকি ও বাধা। পাঠকের ভালোবাসার মূল্য দিতে এবং সত্যকে খুঁজে আনতে উল্টো আরও গভীরে নেমে কাজ করেছে সিভয়েস পরিবার। লক্ষ্য আপোষহীন বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ। 

তবে এটা ঠিক, ফেসবুক, টুইটার, ইমো, ভাইবার, হোয়াটসআপ— সব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যার-তার আবেগতাড়িত মতামত আর নিজ নিজ মনোভাব যথেচ্ছভাবে ছড়িয়ে দিয়ে সত্যের ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে অহরহ। ফলে তার পেছনে ছুটে ধোঁকা খেতে হয়। সত্যকে আড়াল করার কাজটি করা হয় খুব সূক্ষ্মভাবেই। সমসাময়িক জীবনে ধোঁকাবাজিতে পড়া ওই ব্যক্তি এক সময় বিশ্বাস করতে পারেন না কোনো কিছু। আর সেই মিথ্যার দায় চাপান সংবাদমাধ্যমের ঘাড়ে।  

এমন পরিস্থিতিতেই একটি দায়িত্বশীল গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান হিসেবে Cvoice24.com-কে গড়ার তাগিদ অনুভব করেন উদ্যোক্তা ও সম্পাদক নিয়াজ মোর্শেদ এলিট। এ লক্ষ্যে তিনি অবিচল। নীতির সঙ্গে আপস করেননি কখনই। সংবাদ কর্মীদের দিয়েছেন অবাধ স্বাধীনতা ও আর্থিক সুযোগ-সুবিধা। তার স্বপ্ন লালনে প্রত্যেক কর্মী নিজের দায়িত্ব সুচারুরূপে পালনে অঙ্গীকারবদ্ধ। নতুন কিছুর প্রত্যয়ে সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন যে কোনো সংকট মোকাবিলায়। তারই ফল আজকের Cvoice24.com-এর পাঠকপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা। কেবল এক, দুই কিংবা তিন নয়; এমন ধারাবাহিকতা নিয়ে আমরা এগিয়ে যেতে চাই বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ। 

প্রিয় পাঠক-শুভানুধ্যায়ী, বিজ্ঞাপনদাতারা আপনাদের এমন ভালোবাসায় আমরা অভিভূত; আমরা কৃতজ্ঞ। করোনার এই ক্রান্তিকালেও পাশে থাকার প্রেরণা আমাদের সঙ্গী বলেই দ্বিধাহীন পথ চলছি অবিরত। জন্মদিনের এই শুভলগ্নে সিভয়েস পরিবারের নতুন-পুরনো সব সদস্যের প্রতিও রইল শুভকামনা। পাঠক, বিজ্ঞাপনদাতা, শুভানুধ্যায়ী ও সহযোদ্ধাদের প্রতি রইল আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও শুভেচ্ছা। সবার ভালোবাসা এবং সত্যের শক্তি নিয়ে আরও এগিয়ে যেতে চায় Cvoice24.com।

আরেকটি কথা। করোনার এমন মহামারিতে আমরা কোনও ধরনের আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক আয়োজন করছি না। তাই অনেকে সিভয়েসকে তাদের ভালোবাসার চাদরে মোড়াতে আমাদের অফিসে আসতে চেয়েছেন তাদের বারণ করায় ক্ষমা চাইছি। আপনার জীবনের নিরাপত্তায় এবার ঘরে থাকুন; বেঁচে থাকলে আগামী বছর দেখা হবে বড় কোনও আয়োজনে। সিভয়েসের সাথেই থাকুন। সংবাদে এগিয়ে থাকুন। সকলকে আবারও প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভেচ্ছা। 

হেড অব নিউজ

সিভয়েস২৪ডটকম  

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়