Cvoice24.com

সামুদ্রিক শৈবালে বিশাল সম্ভাবনার হাতছানি

সৈয়দ মুনিরুল হক

প্রকাশিত: ২০:৩২, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩
সামুদ্রিক শৈবালে বিশাল সম্ভাবনার হাতছানি

সমুদ্র বিজয় বর্তমান সরকারের নিঃসন্দেহে একটি উল্লেখযোগ্য অন্যতম সাফল্য। এই সমুদ্রের ভেতরে কত কিছুইনা লুকায়িত রয়েছে, যা আজও রয়ে গেছে আমাদের স্বপ্নের ঘোরে। সামুদ্রিক শৈবাল তার মধ্যে অন্যতম। ইতিহাস থেকে যতটুকু জানা যায়, ৬৭০ সালে  জাপানের রাজধানী টোকিওতে প্রথম সামুদ্রিক শৈবাল চাষ শুরু হয়। তবে বাণিজ্যিকভাবে বিষয়টি আসে ৯৪০ সালে। এই সামুদ্রিক শৈবাল নিয়ে ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড বহুকাল পূর্ব থেকে তারা শৈবাল চাষ করে আসছে। সুতরাং শৈবাল কে ঘিরে আবর্তিত হতে পারে আমাদের ব্লু ইকোনমি।

কক্সবাজারের মুনিয়ার চর এলাকায় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের অননফার্ম রিসার্চ ডিভিশনের একদল গবেষক এই সামুদ্রিক শৈবাল নিয়ে গবেষণা করে আসছেন। তাছাড়া বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট এই বিষয় নিয়ে গবেষণা করে আসছেন। বাংলাদেশের মানচিত্র ঘাটলে দেখা যায়, সমুদ্র উপকূলে যে জেলা রয়েছে, তার মধ্যে 147 টি উপজেলায় শৈবাল চাষ করার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। বহু বছর পূর্ব থেকেই রাখাইন সম্প্রদায় শৈবালকে সবজি হিসেবে খেয়ে আসছে। তাছাড়া বান্দারবানে শৈবাল সবজি হিসাবে বহুকাল পূর্ব থেকেই  প্রচলন রয়েছে। 
 
সাধারণত দুই গ্রাম থেকে ৩০থেকে ৪০ গ্রাম পর্যন্ত শৈবাল ২০ দিনের মধ্যে পাওয়া যেতে পারে। অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত এই ছয় মাস সাধারণত শৈবাল চাষ করা যায়। শৈবাল চাষ নিয়ে বিভিন্ন ধরনের গবেষণা চলছে।  গবেষণার তথ্য থেকে জানা যায় বাংলাদেশের 24000 77 বর্গকিলোমিটার কোস্টাল এরিয়া রয়েছে। যার গভীরতা সাধারণত ১০ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে।  এর মধ্যে কিছু কিছু প্রজাতির শৈবাল স্বল্প পরিসরে বাণিজ্যিক ভাবে চাষাবাদ হচ্ছে। 

আমাদের দেশের ওষুধ কোম্পানিগুলো এবং কসমেটিক কোম্পানি সামুদ্রিক শৈবাল থেকে প্রস্তুতকৃত বিভিন্ন পণ্য যেমন ইউনিক এসিড এবং জিলাটিন এই সমস্ত শিল্পের জন্য আমদানি করে থাকেন।তাছাড়া এই শৈবাল পোল্ট্রি এবং এনিমেল ফিড হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। শৈবাল কত রকম পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। শৈবালকে পাওয়ার প্যাক বলা যেতে পারে। 

এর কিছু উপকারিতা সম্পর্কে এখন বলা যাক ঃ
‌√শৈবালের মধ্যে রয়েছে এন্টিঅক্সিডেন্ট। 

√এর মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা এবং ফাইবার যা শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে থাইরয়েড গ্ল্যান্ড এক ধরনের হরমোন নিঃসরণ করে যা শক্তি উৎপন্ন এবং ক্ষতিকারক সেলগুলোতে মেরামতে সহায়তা করে, ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রনে কাজ করে। 
 
√এর মধ্যে অতিমাত্রায় আয়োডিন থাকে যা বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে কাজ করে।

√বর্তমান সময়ে সারাবিশ্ব অর্গানিক খাদ্যের দিকে ঝুঁকছে কারণ এটি শরীরের জন্য কম ঝুঁকিপূর্ণ। এই শৈবাল আমাদের Plant Based ফুড তৈরিতে অন্যতম সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে ডাল এবং ক্লিনজার প্রোটিনের অন্যতম উৎস এবং এর থেকে পাওয়া যায় কেনেন এবং খাদ্য তৈরিতে স্টেবিলাইজার এবং এজেন্ট হিসাবে ব্যবহৃত হয়। 

√এই সামুদ্রিক শৈবাল আমাদের  অন্যতম সম্ভাবনাময় একটা একটি খাত। যা বিভিন্ন ভাবে যেমন খাদ্য, কসমেটিক্স, ফার্মাসিটিক্যাল, সার তৈরিতে সারা বিশ্বে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই সামুদ্রিক শৈবাল আমাদের খাদ্যের গুণগত মান বৃদ্ধিতে ব্যাপকভাবে অবদান রাখতে পারে। 

√এই সামুদ্রিক শৈবাল ফুড ভ্যালু বৃদ্ধিতে অন্যতম উপাদান হিসেবে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। আমরা যে সমস্ত ফ্রজেন ফুট বিদেশে রপ্তানি করে তারমধ্যে যদি সামুদ্রিক শৈবাল যুক্ত করা যায় তবে খাদ্যের গুণগত মান উপযোগিতা এবং এর মূল্য, পাশাপাশি চাহিদা বৃদ্ধি পাবে তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। 

√এই সামুদ্রিক শৈবাল থেকে বিভিন্ন    Frozen  আইটেম যেমন আলু পাকোড়া, পিয়াজ, বাঁকুড়া, পালং শাকের পাকোড়া, স্পিরুলিনা বিভিন্ন ধরনের বিস্কিট, টি, সালাদ তৈরির উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। 

√তাছাড়া এই শৈবাল দিয়ে বিভিন্ন ধরনের আচার, ড্রিঙ্ক, সানস্ক্রিন এবং কসমেটিকস তৈরীর উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। 

√বাংলাদেশে দিন দিন জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে তারপরেও বর্তমান এই কৃষিবান্ধব সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ পাশাপাশি কৃষি বিজ্ঞানী, সম্প্রসারণ কর্মীরা এখন কৃষির সাথে জড়িত বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ নিরলসভাবে কৃষির উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। এখন আমাদের কৃষি বাণিজ্যের প্রসার  ঘটিয়ে অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটাতে হবে।

√এই ব্লু ইকোনমি নিয়ে গবেষণা এবং উদ্যোগ প্রয়োজন। বড় বড় বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান সামুদ্রিক শৈবালকে ঘিরে  শিল্প-কারখানা স্থাপন করে বিভিন্ন কৃষিজাত পণ্য উৎপাদনে এগিয়ে আসতে পারেন। বর্তমানে সমুদ্র বন্দর, চট্টগ্রাম দিয়ে বিভিন্ন পণ্য  বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে এবং এই তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। সরকারি উদ্যোগ পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তারা এগিয়ে এলে বাংলাদেশের এই অমিত সম্ভাবনাময় এই খাত হয়ে উঠতে পারে অর্থনীতির অন্যতম ভিত্তি।
 
আশা করি সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় পাশাপাশি বিভিন্ন শিল্প উদ্যোক্তারা বিষয়টি নিয়ে ভাববেন। বর্তমান এই কৃষিবান্ধব সরকারের সফল কৃষি মন্ত্রী মহোদয়ের বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য রপ্তানিতে ইতোমধ্যে প্রায় ৩৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। এখানে যে সাতটি খাতের তথ্য দেওয়া হয়েছে কৃষি বাণিজ্য তার মধ্যে অন্যতম। আগামীতে আমাদের গার্মেন্টস শিল্প কোন কারণে রপ্তানিতে বাধাগ্রস্ত হলে বিকল্প অর্থনৈতিক শক্তির ভিত্তি হিসেবে কৃষি বাণিজ্য স্থান পেতে পারে।  সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে সম্ভাবনাময় এই খাতকে সামনের দিকে অবশ্যই এগিয়ে নিতে হবে।


সৈয়দ মুনিরুল হক

কোয়ারেন্টিন প্যাথলজিস্ট
প্লান্ট কোয়ারেন্টিন স্টেশন
সমুদ্র বন্দর, চট্টগ্রাম।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়