সুবুদ্ধির প্রচারক হয়রত মতিয়র রহমান শাহ্ ফরহাদাবাদী
ড. মোহাম্মদ আবদুল আজিম শাহ্

আবির্ভাব
মানব যখন ধর্মের নৈতিকতা বাদ দিয়ে আচারিকতাকে ধর্ম হিসেবে গ্রহণ করেছে, ধর্ম বিচ্ছিন্ন হয়ে অনুভূতিহীন রোবটে পরিণত হয়েছে ; তখন হযরত গাউসুল আজম হযরত সৈয়দ আহমদ উল্লাহ (ক.) মাইজভাণ্ডারীর উন্মুক্ত আধ্যাত্মবাদের ধারাবাহিকতায় অষ্টাদশ শতকের শেষ লগ্নে মজজুবেসালেক, কাশফ ও কারামতের খনি, গাউসেভাণ্ডার হযরত মতিয়র রহমান শাহ্ (ক.) ফরহাদাবাদী (প্রকাশ শাহ্ছাহেব কেবলা) চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার নাজিরহাট পৌরসভাধীন পূর্ব ফরহাদাবাদ গ্রামে (মতিভাণ্ডার দরবার শরিফ নামে পরিচিত) ২৪ ফাল্গুন ১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দ মোতাবেক ৮ মার্চ সোমবার মাতৃগর্ভ আউলিয়া হিসেবে আগমন করে সুবুদ্ধির বাণী প্রচার করেছেন। পিতা- হজরত শাহ্সুফি আহমদ আলী (রহ.),মাতা- মোছাম্মৎ আলিমুন্নেছা । পিতা-মাতা উভয়েই সুফি ছিলেন।
অধ্যায়ন
স্থানীয় মক্তব ও (তৎকালীন) ব্রজমোহন স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করে ফরিদপুর ভাঙ্গা হাই স্কুল থেকে ১৯১৯ সালে (প্রথম বিভাগে) মেট্রিকুলেশন ও ফেনী কলেজ থেকে (প্রথম বিভাগে) ইন্টারমিডিয়েটে কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। এরপর কলকাতার বিখ্যাত সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে ডিগ্রিতে ভর্তি হন এবং টেস্ট পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করা সত্ত্বেও মজজুবিয়ত প্রকাশ পাওয়ায় পরিবারের সিদ্ধান্তে কেন্দ্র পরিবর্তন করে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে ডিগ্রি ফাইনাল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন।
পরীক্ষায় কয়েকটি বিষয়ে অংশগ্রহণ করে আল্লাহর প্রেমে ফানাফিল্লাহ থেকে বাকাবিল্লাহ (লয়প্রাপ্ত) স্তরে গমন করায় পূর্ণ পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। বাংলা, আরবি, ইংরেজি, উর্দু, ফার্সিসহ বিভিন্ন ভাষায় তাঁর অসাধারণ পাণ্ডিত্য ছিল। তিনি চট্টগ্রামের প্রসিদ্ধ দারুল উলুম মাদ্রাসায় বছরখানেক ফার্সি পড়াতেন।
ফার্সিভাষায় অসাধারণ পাণ্ডিত্যের জন্য সমসাময়িক আলেমগণ তাঁকে ‘ফার্সি সাহেব’ বলে সম্বোধন করতেন। এছাড়া আদালত ভবনের শেষ ভ্যালুয়েশন বিভাগেও কিছুদিন কর্মরত ছিলেন। এরই মধ্যে পার্শ্ববর্তী বাবুনগর গ্রাম নিবাসী আহমদুল হকের কন্যা মোসাম্মৎ মরিয়ম বেগমের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ডিগ্রিতে অধ্যয়নকালিন বেলায়তের প্রকাশ পেলেও মূলত মাতৃগর্ভে থাকাকালীনই বিভিন্ন কেরামতের মাধ্যমে বহিঃপ্রকাশ ঘটে।
চার প্রকার বেলায়েত অর্জন
তিনি চার প্রকার বেলায়ত হাঁসিল করেন। প্রথমত-তিনি, পীরানেপীর দস্তগীর হজরত সৈয়দ আবদুল কাদের (ক.) জিলানী যেভাবে মাতৃগর্ভ থেকে মাকে সর্প দংশন হতে রক্ষা করেন, তদ্রূপ শাহ্ছাহেবও মাতৃগর্ভ থেকে মাকে হারাম মাছ ভক্ষণ থেকে রক্ষা করেন। অর্থাৎ প্রকৃতিগত অলি (বেলায়তে বিল আছালত) হিসেবে তিনি আবির্ভূত হন।
এ বিষয়ে হযরত কেবলাও ভবিষ্যত বাণী করেছেন। শিশুবয়সে শাহ্ছাহেব কেবলার বাড়ির দিকে ইশারা করে হযরত কেবলা বলেছেন, ‘হালদার তীরে আমার একটি ঘর উঠবে; আপনারা সেখানে যাবেন; অন্যথায় ধরা হবেন’। হযরত কেবলার বেলায়তের ধারাবাহিকতায় বাবাভাণ্ডারী কেবলা পরবর্তী শাহ্সাহেব কেবলাও যে বেলায়তে ওজমার অধিকারী হয়ে গাউসিয়তের আধ্যাত্মিক রাজসিংহাসনের উত্তরাধিকার হবেন, এটি ভবিষ্যৎবাণী দ্বারা জগতকে বুঝিয়ে দিয়েছেন।
দ্বিতীয়ত- নফস ( প্রবৃত্তি)র বিরুদ্ধচারণ করে কঠোর সাধনার মাধ্যমে বেলায়তে বিল মালামাত অর্জন করেন। মাঘের কনকনে শীতে (রাত-দিন) দীর্ঘসময় পানিতে ডুবে থাকতেন, শুধু নাক মোবারক দেখা যেত। তৃতীয়ত- পঞ্চতত্ত্বের সাধনা সহ প্রকৃতিতে নিমগ্ন থেকে কঠোর সাধনা দ্বারা ‘এলমে লাদুনি’ (প্রাকৃতিক জ্ঞান) অর্জন করে বেলায়ত (বিদ দারাছত) প্রাপ্ত হন। চতুর্থ- রুহানি উত্তরাধিকার সূত্রেও বেলায়ত (বিল বেরাছত) প্রাপ্ত হয়েছেন। এবং হযরত শাহ্সুফি সৈয়দ গোলামুর রহমান শাহ্ মাইজভাণ্ডারী (প্রকাশ মাইজভাণ্ডারী) থেকে রুহানি উত্তরাধিকার সূত্রে বেলায়তপ্রাপ্ত হয়েছেন।
পরবর্তীতে বাবাভাণ্ডারীর মাধ্যমে আধ্যাত্মিক রাজ সিংহাসনের পূর্ণক্ষমতা (বেলায়তে ওজমার অধিকারী হয়েছেন) শাহসাহেব কেবলার নিকট স্থানান্তরিত হয়। অর্থাৎ চারপ্রকার বেলায়ত অর্জন করে, বেলায়তের সর্বোচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত হয়ে জজবিয়ৎ ও সলুকিয়তের সংমিশ্রণে মজজুবেসালেক অলি হিসেবে প্রকাশ পায়।
মাইজভাণ্ডার আধ্যাত্মিক শরাফতের যুবরাজ
তিনি ছিলেন মাইজভান্ডার শরিফের রাজ সিংহাসনের যুবরাজ। হযরত শাহসুফি সৈয়দ গোলামুর রহমান শাহ (ক.) (প্রকাশ বাবাভাণ্ডারী) কেবলা আধ্যাত্মিকরাজ সিংহাসনে অধিষ্ট থাকাকালীন,গাউসে ভাণ্ডার হযরত মতিয়র রহমান শাহ্ ছিলেন মাইজভাণ্ডার দরবার শরিফের আধ্যাত্মিক সম্রাজ্যের যুবরাজ। এ জন্য সমসাময়িক আউলিয়াগণ তাঁকে মাইজভাণ্ডার শরিফের যুবরাজ সম্বোধন করতেন। বিভিন্ন ঘটনা ও মনীষীদের বাণী থেকে যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়। শাহ্ছাহেব কেবলা মাইজভাণ্ডার শরিফ গমন করলে (কোনো সময় জজবা হালে, কোনো সময় ছুলুক অবস্থায়) অসিয়ে গাউসুল আজম হযরত মওলানা শাহ্সুফি সৈয়দ দেলাওর হোসাইন মাইজভাণ্ডারী শাহ্ছাহেব কেবলাকে অতীব সম্মান সহকারে পাশে চেয়ারে বসাতেন এবং সর্বোচ্চ আপ্যায়ন করতেন।
অনেক সময় দুজনের মধ্যে দীর্ঘ কথোপকথন চলত। একদা দরবার শরিফের- মওলানা শাহ্ ছুফি সৈয়দ মাহফুজুল করিম ছাহেব দেখলেন অছিয়ে গাউসুল আজম শাহ্ছাহেব কেবলাকে অতিব সম্মানের সাথে আপ্যায়ন করছেন। মাওলানা সৈয়দ মাহফুজুল করিম ছাহেবের সাথে শাহ্ছাহেব কেবলার একটি নিবিড় আত্মিক সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও মনে পিপাসা সৃষ্টি হল শাহ্ছাহেব কেবলা কে? কী তাঁর শান,মর্যাদা? তিনি ভাবতে লাগলেন, মাইজভাণ্ডার শরিফের সাথে শাহ্ছাহেব কেবলার কী এমন গভীর সম্পর্ক থাকলে অছিয়ে গাউছুল আজম তাঁকে এত সম্মান প্রদর্শন করেন।
সেদিন রাতে মাওলানা সাহেব স্বপ্নে দেখেন, দরবারে শরিফের শাহী ময়দানে এক বিশাল মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। মঞ্চে একটি রাজকীয় সিংহাসন। মাঠভর্তি পাগড়িপরা মানুষ। উপস্থিত সবাই আলোচনা করছেন মাইজভাণ্ডার শরিফের যুবরাজ আসবেন সেজন্য এত আয়োজন। এমতাবস্থায় মাওলানা সৈয়দ মাহফুজুল করিম সাহেব অছিয়ে গাউছুল আজমকে জিজ্ঞেস করলেন, সবাই যে যুবরাজের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন ; তিনি কে? এ কথা বলতেই অসিয়ে গাউছুল আজম ইঙ্গিত করলেন ঐ দেখ যুবরাজ আসছেন।
মওলানা সাহেব দেখলেন তিনি আর কেউ নন স্বয়ং শাহ্ছাহেব কেবলা। তিনিই মাইজভাণ্ডার শরিফের যুবরাজ। শাহ্ছাহেব কেবলা মঞ্চে উঠে সিংহাসনে উপবেশন করলেন। উপস্থিত সকলে দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করলেন। এ থেকে মাওলানা সাহেব স্পষ্ট বুঝতে পারলেন অছিয়ে গাউছুল আজম, শাহ্ছাহেবকে কেন এত সম্মান করেন এবং তিনি তাঁর জিজ্ঞাসার উত্তর পেয়ে সন্তুষ্ট হলেন। শাহ্ছাহেবের প্রতি মওলানা ছাহেবের ভক্তি দ্বিগুণ হয়।
এ স্বপ্নটি দেখার পর মাওলানা সাহেব প্রথমে অসিয়ে গাউছুল আজমকে বলেন এবং পরবর্তীতে মতিভাণ্ডার শরীফে এলে শাহ্ছাহেব কেবলার ভাতিজা ডা. আবুল কাসেম মিয়াকে নিজের স্বপ্নের কথা বর্ণনা করেন। (এ ছাড়াও শাহ্ছাহেবের আরো কিছু কেরামতের বর্ণনা করেন। তার মধ্যে একটি মাওলানা সাহেব একদিন শহর থেকে মাইজভাণ্ডার শরীফে ফিরছিলেন। নাজিরহাট আসতে গভীর রাত হয়ে যায়। বাজার তখন জনশূন্য। ঘুটঘুটে অন্ধকার। তিনি চিন্তা করতে লাগলেন কীভাবে বাড়ি যাবেন। হঠাৎ শাহ্ছাহেব কেবলা সামনে এসে বলেন, মাওলানা সাহেব সামনে একটা আলো দেখা যাচ্ছে ঐ আলো দেখে দেখে চলে যান। ঐ আলো লক্ষ করে কিছুক্ষণের মধ্যে তিনি বাড়ি পৌঁছে যান। এরপর আলোটি অদৃশ্য হয়ে যায়। পরবর্তীতে মাওলানা সৈয়দ মাহফুজুল করিম ছাহেব যতদিন শারীরিকভাবে সক্ষম ছিলেন, ততদিন শাহ্ছাহেব কেবলার ওরশ শরিফে হাজিরা দিতেন।)
আধ্যাত্মিক রাজসিংহাসনে অধিষ্ঠিত মতিয়র রহমান শাহ্
গাউসুল আজম (বিলবেরাসত) হযরত সৈয়দ গোলামুর রহমান শাহ্ মাইজভাণ্ডারী (প্রকাশ বাবা ভাণ্ডারী) কেবলা যখন গাউসিয়তের রাজসিংহাসনে অধিষ্ঠিত; তখন হযরত মতিয়র রহমান শাহ আধ্যাত্মিক সিংহাসনের যুবরাজ হিসেবে অধিষ্ঠিত। পরবর্তীতে বাবাভাণ্ডারীর সোহবতের মাধ্যমে যুবরাজ থেকে আধ্যাত্মিক রাজসিংহাসনের অধিকারী হন।
(যিনি যুবরাজ, তিনিই পরবর্তীতে রাজসিংহাসনের অধিকারী বা বাদশাহ্ হন)। একদা শাহসাহেব কেবলা, বাবা ভাণ্ডারীর নিকট গমন করলে তিনি তাঁর আসন মোবারকের নিচ থেকে কতগুলো রান্না করা (গরু/মহিষের) নলা শাহ্, সাহেবকে দান করেন। (মগজ হল মূল আধার বা শক্তি)। অর্থাৎ নলার মাধ্যমে বাবাভাণ্ডারী কেবলা,শাহসাহেব কেবলাকে বেলায়তের মূল ক্ষমতা (দান) স্থানান্তর করেন।
এ সময় হযরত কেবলার অন্যতম খলিফা,শাহনগর নিবাসী হযরত রেজওয়ান শাহ (ক.) উৎফুল্লচিত্তে(উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে ) বলেন, ‘বাবাভাণ্ডারী কেবলার এত যোগ্যখলিফা থাকা সত্ত্বেও মাইজভাণ্ডারী সিংহাসন মতিয়র রহমান শাহকে দিয়ে দিলেন’। এভাবে হযরত কেবলার রুহানি ফয়েজ এবং বাবা ভাণ্ডারীর প্রত্যক্ষ ফয়েজপ্রাপ্ত হয়ে শাহসাহেব কেবলা বেলায়তি ক্ষমতার সর্বোচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত হয়ে মাইজভাণ্ডারী গাউসিয়তের রাজসিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন ।
তিনি যে এই ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন,এটি তাঁর শান-মর্যাদা, শ্রেষ্ঠত্ব, অলৌকিকতা, রহস্যপূর্ণ কালাম ও সকলকে অকাতরে দয়া বিতরণের মাধ্যমে এর বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। তিনি বলেছেন,‘আমার দরবার হতে কেউ খালি হাতে ফেরে না; কেননা আল্লাহর পক্ষ থেকে আমি সৃষ্টির কল্যাণে নির্ধারিত’। এজন্য এই দরবার সৃষ্টিকুলের মিলনকেন্দ্র। এছাড়াও ,শাহ আমানত শাহ্ (র.),হযরত বায়েজিদ বোস্তামী (র.)সহ অসংখ্য মাজার শরিফে গমন করে তাঁদের সোহবত ও ফয়েজ অর্জন করেন।
তাঁর শান বর্ণনা করে হযরত আজিজুল হক (রহ.) শেরে বাংলা (দিওয়ানে আজিজ কিতাবে) লিখেছেন, ‘হযরত মতিয়র রহমান শাহ্ (ক.) মজজুবে সালেক, আরিফ বান্দাদের আদর্শ, আউলিয়াগণের চোখের মনি, কাশফ ও কারামতের খনি, যুগশ্রেষ্ঠ বুজুর্গ। এবং তাঁর মাজার শরিফ সৃষ্টিকুলের মিলনকেন্দ্র ও জান্নাতের বাগান’। উপমহাদেশের প্রখ্যাত ছায়ের ও কাওয়াল জনাব সৈয়দ আমিনুল ইসলাম (রহ.) লিখেন:-
ওয়াক্বিফে রাযে হাকিক্কত হে মতি ভাণ্ডারী (রঃ)
মওলা ভাণ্ডারী কি সুরত হে মতি ভাণ্ডারী (র.)।
আপনে আশিক কো শূজাআ'ত কি তু দওলাত দে দে
তুঝ্ মে তো শানে শুজাআ'ত হে মতি ভাণ্ডারী।
গর্ তলবগারে তরিক্বত হো তো আ-জাও ইয়াহাঁ ল
রাহবারে রাহ তরিক্বত হে মতি ভাণ্ডারী (র.)।
ওহ্ হে খুদ ছাহিবে রাহমত সুনো দুনিয়া ওয়ালো
আশিকোঁ কে লিয়ে রাহমত হে মতি ভাণ্ডারী (র.)।
আরশ্ মে ফরশ্ মে আওর লাহুত ও জাবরুত মে ভি
তেরি আজমত তেরি ইজ্জত হে মতি ভাণ্ডারী (র.)।
জানে বে-জান না ঘাবরা জু ম্যায় কেহতাহ্ ওহ্ সুন্
খোদ খোদাওয়ান্দ কি কুদরত্ হে মতি ভাণ্ডারী।
দয়া বিতরণ
তিনি না চাইতেই সকলকে দয়া করতেন। যিনিই তাঁর সান্নিধ্য পেয়েছেন, কিংবা দূর থেকে স্মরণ করেছেন তিনিই দয়াপ্রাপ্ত হয়েছেন। মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে দয়া করেছেন, এরকম নজির ইতিহাসে বিরল। তাকে চেনে না, জানে না এদেরও দয়া করেছেন। সেটা হোক জাগতিক কিংবা আধ্যাত্মিক।
মৃত লোককে জীবিত, বিনামেঘে বৃষ্টি, এমপি-মন্ত্রী হওয়ার ভবিষ্যৎবাণী, হাজারো কঠিন সমস্যা থেকে মুক্তি দেওয়া, ’৭১ সালে স্বাধীনতার ভবিষ্যৎবাণী, নাকেস বান্দাকে কামেল -এ পরিণত করাসহ অসংখ্য কেরামতের নজির রয়েছে। তিনি ইশারা করলেই অঝোর ধারায় বিনামেঘে বৃষ্টি হতো।
তিনি বলতেন -এই বৃষ্টি সেই বৃষ্টি নয়, এটি করুণার বৃষ্টি। একুশ মাঘ তাঁর ওরশ শরিফের দিন এখনো মাঝে মাঝে বৃষ্টি পড়ে। জীবদ্দশায় যেভাবে মানুষকে অকাতরে দয়া বিতরণ করেছেন, একইভাবে মাজার শরিফ থেকেও সমভাবে দয়া পাচ্ছেন।
কেরামত ১
বোয়ালখালী নিবাসী অঘোর চন্দ্র আইচ নামক জনৈক ডাক্তার কাটিরহাট বাজারে চেম্বার করতেন। বাড়ি থেকে টেলিগ্রাফ আসে যে, তাঁর স্ত্রী খুবই অসুস্থ এবং তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। টেলিগ্রাফ পেয়ে স্বামী ডা. অঘোর চন্দ্র আইচ অতিসত্বর চেম্বার বন্ধ করে বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে ট্রেন ধরতে রওনা হবেন এমন সময় শাহ্ছাহেব কেবলা কাবা বিদ্যুৎগতিতে এসে তাঁর চেম্বারে প্রবেশ করে ডাক্তার সাহেবকে বলেন, ‘আমার জ্বর আসতেছে, আমাকে ইনজেকশন দেন।’ ডা. সাহেব দেখলেন বাবাজানের কোন জ্বর নেই। কেন তিনি ইনজেকশন দিতে বলছেন। আর দেওয়ার মত একটা ডিসট্রিল ওয়াটার ছাড়া চেম্বারে আর কিছুই নেই।
ডাক্তার সাহেব ভাবনায় পড়ে যান। একদিকে স্ত্রীর অসুস্থতার দরুন বাড়ি যাওয়া অপরদিকে শাহ্ ছাহেব কেবলা বিনা অসুস্থতায় ইনজেকশন দিতে বলা সব মিলে তিনি ভাবনায় পড়ে যান। তিনি চিন্তা করেন বাবাজান যখন বলছেন ইনজেকশন দেওয়ার জন্যে তাহলে নিশ্চই কোনো কারণ আছে।
ডাক্তার সাহেব ইনজেকশন পুশ করার জন্য বাবাজানকে তাঁর বিছানায় শয়ন করতে বললে তিনি বলেন, জামাইর শয়নস্থলে শ্বশুরের শয্যা গ্রহণ অনুচিত। তাই লম্বা বেঞ্চিতে শয়ন করেন এবং ডাক্তার সাহেব বাবাজানের আদেশে তাঁর বাহুতে ডিসট্রিল ওয়াটার পুশ করেন এবং ইনজেকশন দেওয়ার পর এখন একটু ভাল লাগতেছে বলে চলে আসেন।
এরপর ডা. সাহেব প্রথম ট্রেনে বোয়ালখালী গোমদণ্ডীর বাড়িতে পৌছে দেখেন তার স্ত্রী স্নান শেষ করে ঘরে বসে আছেন। তিনি তাঁর ভাইকে অহেতুক তারবার্তা প্রেরণ করে রোজগারে বিঘ্ন সৃষ্টির জন্যে বিরক্ত হন।
তখন তাঁর ভাই বলেন, বৌদি অসুস্থ ছিল ঠিকই এবং মন্ত্র পাঠদান শেষে তুলশী তলে শয়ন করিয়ে নৈতিক দোষ এড়ানোর জন্যে তারবার্তা প্রেরণ করেছি। তিনি মুমূর্ষু অবস্থায় ছিলেন কিন্তু ভগবানের কৃপায় তিনি সুস্থ হয়ে যান।
পরবর্তীতে স্ত্রীর সাথে কথোপকথনে জানা যায়, তাকে যখন তুলশী ধামে শয়ন করানো হয় তখন তার বাহুতে অনুভব হল কে যেন একটা ইনজেকশন পুশ করেন। এর পরই তিনি ভাল হয়ে যান। তখন ডা. সাহেবের শাহ্ছাহেব বাবাজানকে ইনজেকশন পুশ করার কথা স্মরণে আসে এবং তখন তিনি বুঝতে পারেন বাবাজান নিজের শরীরে ইনজেকশন পুশ করে আমার স্ত্রীকে দয়া করে মৃত্যুশয্যা থেকে রক্ষা করেছেন। (বর্ণনাকারী: প্রবীণ সাংবাদিক ওবায়দুল হক, কাটিরহাট।)
কেরামত ২
ফটিকছড়ি উপজেলা বিবিরহাটে জামেউল উলুম সিনিয়র মাদ্রাসার সহ-অধ্যক্ষ মওলানা তৈয়ব খান সাহেবের পিতা মওলানা আবুল বশর সাহেব সম্পর্কে বাবাজানের আত্মীয় হন। বাবাজান প্রায় সময় তাদের বাড়িতে যেতেন। যথারীতি একদিন বাবাজান তাদের বাড়ি গেলে ইজ্জত সহকারে বসতে দেন। তার নিকট দয়ার জন্য ঐ বাড়ির বেশিরভাগ লোক আসতেন।
ঐ বাড়ির জনৈক লোক ১২ বছর ধরে পেট কামড়ানো রোগে ভুগছিলেন। অনেক ডাক্তার দেখিয়েছেন ওষুধ খেয়েছেন কিন্তু কোনমতেই রোগ থেকে মুক্তি পায় না, আবার কিসের রোগ তা শনাক্ত করাও যাচ্ছে না। বাবাজান তাদের বাড়িতে তশরীফ নিয়েছেন শুনে দৌড়ে গিয়ে বাবাজানের চরণে পড়ে তাকে ভাল করে সুস্থতা দান করার জন্যে আরজি করতে থাকেন।
আবুল বশর সাহেবও তার জন্য বাবাজানের নিকট সুপারিশ করতে আাকেন। আরজির পরিপ্রেক্ষিতে বাবাজান আবুল বশর সাহেবকে বললেন, এই লোক গভর্নমেন্টের মানুষকে মেরেছে সে ভাল হবে না। বাবাজানের কথা শুনে তার ভয় আরও বেড়ে গেল। তখন লোকটি নিরুপায় হয়ে কাঁদতে থাকেন এবং বলেন আপনি যদি আমাকে ভাল না করেন তাহলে পৃথিবীর কোন শক্তিই আমাকে সুস্থ করতে পারবে না।
বাবাজানের এক কথা ‘এই লোক গভর্নমেন্ট-এর মানুষকে মেরেছে।’ কীসের গভর্নমেন্ট, কোন গভর্নমেন্ট কেউ কিছু বুঝে উঠতে পারছে না। তখন আবুল বশর সাহেব আবারও লোকটির জন্যে আরজি করতে থাকলে অবশেসে তার প্রতি বাবাজানের দয়া হল।
হঠাৎ বাবাজান উপরের দিকে তাকান এবং বলতে থাকেন, ‘বহুদূরে কলকাতা শহরের অলিগলিতে শহর কুতুব হাঁটছেন’। উপরে তাকিয়ে শহর কুতুবকে লক্ষ্য করে বলতে লাগলেন- আল্লাহ্ আপনাকে দয়া করে বেলায়তের ক্ষমতা দিয়েছেন মানবকল্যাণ করার জন্যে, অভিশাপ দেওয়ার জন্যে নয়। আপনাকে না চিনে হয়ত একটা থাপ্পর মেরেছেন তাই বলে অভিশাপ দিতে হবে? এই কথা বলার সঙ্গে সঙ্গেই লোকটি নিমষেই পেটকামড়ানো রোগ থেকে মুক্তি পান।
কলকাতা শহরে কখন কাকে মেরেছেন তিনি নিজেও ভুলে গেছেন। বাবাজান যখন কলকাতা শহরের নাম উচ্চারণ করলেন তখন পূর্বের ঘটনা মনে পড়ল। তিনি কলকাতায় ব্রিটিশের আওতায় চাকরি করতেন। একদিন ছুটির দিবসে তার স্ত্রীর পরিচিত এক মেয়েকে নিয়ে পার্কে ঘুরতে গেলেন এবং বসে বাদাম খাচ্ছিলেন। এমন সময় ফকির বেশে এক লোক এসে তার নিকট টাকা ভিক্ষা চাইলেন। আরও কয়েক বার টাকা ভিক্ষা চাইলে তিনি বিরক্ত হয়ে ফকিরকে গালে থাপ্পর মারে।
এরপর থেকে তার পেটে কামড়ানো রোগ শুরু হয়। এই অসুস্থতার কারণে চাকরি ছেড়ে দিয়ে গ্রামে ফিরে আসতে হয়। অবশেষে বাবাজানের দয়ায় সুস্থ হন। ঐ ফকিরটি ছিলেন তৎকালীন কলকাতার শহরের শহর কুতুব। এজন্য তাঁকে গভর্নমেন্টের লোক বলা হয়েছে।
দর্শন
জগৎ দাম্ভিকতায় ভরপুর। সু এবং কু দুয়েরধারা সর্বক্ষেত্রে বিরাজমান। কুবুদ্ধি ও অন্ধকার বিদূরিত করার জন্যই সুবুদ্ধির বাণী শুনিয়ে মানুষকে স্রষ্টামুখী করেছেন। ভক্তদের সবসময় বলতেন কী বুদ্ধি?অধিকাংশই বলতেন- সুবুদ্ধি। অনেকে ভয়ে কিংবা যে কোনো কারণে জবাব না দিয়ে চুপ থাকলে উত্তরে তিনিই বলতেন, সুবুদ্ধি।
সবসময় ভক্তদের আরো বলতেন, ‘গাল চাবা দিয়ে দক্ষিণে যাও।’ অর্থাৎ সিরাতুল মুস্তাকিম পথে চলো (সহজ সরল পথ যে পথে আল্লাহর নেয়ামত রয়েছে)। সকল সাধনার মূল সুবুদ্ধির চর্চা। সিরাতুল মুস্তাকিম পথে গমন সহ সুবুদ্ধির চর্চাব্যতীত সর্বসাধন বৃথা। কুবুদ্ধির চর্চা মানুষকে ধ্বংস করে। সুবুদ্ধির চর্চা কালজয়ী শ্রেষ্ঠ মানুষে পরিণত করে। কুবুদ্ধির চর্চা মানুষকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। মানবের কুবুদ্ধির চেয়ে বড় শত্রু হতে পারে না। তাই শ্রেষ্ঠ বিজয় হচ্ছে কুবুদ্ধিকে জয় করে সুবুদ্ধি চর্চায় থেকে স্রষ্টার সাথে সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে হৃদয়কে বিশ্বজনীন মমতা ও ভালোবাসায় পূর্ণ করা।
তাই শাহসাহেব বলেছেন, ‘সুবুদ্ধিতে খোদা, সুবুদ্ধিতে রসূল (দ.), সুবুদ্ধিতে কোরআন,সুবুদ্ধিতে ইসলাম, সুবুদ্ধিতে ঈমান, সুবুদ্ধিতে মানবতা।’ সু- অর্থ ভালো, উত্তম, সুন্দর আর বুদ্ধি অর্থ বোধ, বিচারশক্তি, কৌশল, জ্ঞান। আত্মার পরিশুদ্ধতা অর্জনের পূর্বে সুবুদ্ধির জাগরণ ঘটাতে হবে। মানবতার জাগরণের জন্য প্রয়োজন নৈতিক জাগরণ, নৈতিক জাগরণের জন্যই প্রয়োজন আত্মিক জাগরণ এবং আত্মিক জাগরণের জন্য প্রয়োজন সুবুদ্ধির চর্চা।
এটি মানুষকে মহাজাগরণের পথে পরিচালিত করে। আত্মা যদি পরিশুদ্ধ হলে তার প্রভাব কর্মের ওপর পড়বে। অর্থাৎ যেরকম দৃষ্টি, সে রকম সৃষ্টি। তাই শাহসাহেব কেবলা নৈতিকতার মূলে হাত দিয়েছেন। মানুষের শরীর সুস্থ রাখার জন্য প্রতিদিন খাবারের প্রয়োজন, রোগমুক্ত করার জন্য যেমন ওষুধের প্রয়োজন, তেমনি আত্মা পবিত্র করতে সুবুদ্ধির চর্চা প্রয়োজন।
বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় সুবুদ্ধির প্রয়োজনীয়তা
বর্তমান বিশ্ব অশান্তির আগুনে জ্বলছে। যেদিকে তাকাই না কেন অশান্তি আর অশান্তি। মূল কারণ সুবুদ্ধির পথ থেকে বিচ্যুতি। পৃথিবীতে হানাহানি, মারামারি, ধ্বংস, বোমাবাজি, রাজনৈতিক অস্থিরতা, হত্যা, ধর্ষণ,সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি- সবকিছুর মূল কারণ কুবুদ্ধির চর্চা ও সুবুদ্ধির অনুপস্থিতি।
ধর্মবিবজিত, নীতিহীন কুবুদ্ধির চর্চা পরিহার করে গাউছেভাণ্ডার হযরত মতিয়র রহমান শাহ্ (ক.)'র দেখানো সুবুদ্ধির পথ গ্রহণ করলে পৃথিবীতে হানাহানি, মারামারি, বোমাবাজি, জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদ থাকবে না। জাতি-ধর্ম-নির্বিশেষে মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত হবে। মানুষের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না।
ধর্ম ও বিজ্ঞানের সমন্বয়ে মানুষ নৈতিক হয়ে উঠবে। তাই সকলের উচিত শাহ্ছাহেব কেবলার সুবুদ্ধির বাণী অনুসরণ করা। তাহলে বিশ্বশান্তি সুনিশ্চিত। বিশ্বে অশান্তির মূল কারণ কুবুদ্ধির চর্চা ও সুবুদ্ধির অনুপস্থিতি। সুবুদ্ধি ব্যক্তিজীবন থেকে আন্তর্জাতিক অঙ্গন পর্যন্ত সর্বস্থানে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
বিশ্ব যখন কুবুদ্ধিকে নীতি হিসেবে গ্রহণ করেছে, তখনই তিনি মানুষকে শুনিয়েছেন সুবুদ্ধির বাণী। তিনি শিক্ষা দিয়েছেন -সমগ্র বিশ্ব একটি পরিবার; তাই কর্তৃত্ব নয় ;বরং সহমর্মিতা ও সহযোগিতার মাধ্যমে বিশ্বকে একটি পরিবার ভেবে মানবতার কল্যাণ করা।
আরো শিক্ষা দিয়েছেন - বিজ্ঞানের সাথে আধ্যাত্মিকতার সমন্বয় করে মানবতার কল্যাণ করা। শাহ্ছাহেব কেবলার জীবনী পর্যালোচনা করলে দেখা যায় - তাঁর লক্ষাধিক অলৌকিকতা প্রকাশ পেয়েছে। এই অলৌকিক ঘটনা, রহস্যাবৃত কর্মকাণ্ডে নিহিত আছে বিভিন্ন কল্যাণমূলক বার্তা। অর্থাৎ সুবুদ্ধি ও বিজ্ঞানের দর্শন দ্বারা আধ্যাত্মিক জ্ঞান সম্পন্ন আধুনিক মানুষ হবার শিক্ষা দিয়ে গেছেন।
তার প্রতিটি অলৌকিক কর্মকাণ্ড গবেষণা করলে এতে বিজ্ঞান পাওয়া যায়। যা দিয়ে,বিশ্বমানবতার কল্যাণ সম্ভব। তাঁর দেখানো দর্শন বিশ্বের নিকট পৌঁছানো যায় তাহলে মানুষ আধ্যাত্মিকতায় নিহিত বিজ্ঞান(রহস্য)কে গবেষণা করে নৈতিকতাসম্পন্ন আধুনিক মানুষে পরিণত হবে।
অপরদিকে আধ্যাত্মিক জ্ঞানে নিহিত বিজ্ঞান গবেষণা করে মানবতার কল্যাণ করবে। বর্তমানে বিজ্ঞান দ্বারা মানবতার কল্যাণের চেয়ে অকল্যাণই হওয়ার কারণ বিজ্ঞান থেকে ধর্মকে বিচ্ছিন্ন করা। অপরদিকে মুসলিম উম্মাহ জ্ঞান-বিজ্ঞানে পিছিয়ে পড়ার অন্যতম কারণ ধর্ম থেকে বিজ্ঞানকে বিচ্ছিন্নকরণ। তিনি এই দুটোকে সমন্বয় করার ইঙ্গিত দিয়েছেন। দুয়ের সমন্বয়ে বিশ্বে আধ্যাত্মিক জ্ঞানসমৃদ্ধ নৈতিক আধুনিক মানুষ তৈরি সম্ভব।
তিনি তাঁর বংশীয় উত্তরাধিকার (আওলাদ) হযরত শাহসুফি মওলানা আবুল ফয়েজ শাহ( রহ.) কে রহমত -দয়াদান সহ সাজ্জাদানশীন (আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারী) মনোনীত করে ২১ মাঘ, ১৯৬৪ সাল ধরাধাম ত্যাগ করে আল্লাহর সাথে মহামিলনে গমন করেন।
জানাজাশরিফের ইমামতি করেন সাজ্জাদানশীন হযরত মওলানা আবুল ফয়েজ শাহ্। তিনি ছিলেন শাহ্ছাহেব কেবলার সুবুদ্ধির ধারক, বাহক ও প্রচারক। শাহ্ছাহেবের ধারাবাহিকতায় তিনিও মানুষকে সুবুদ্ধির শিক্ষা-দীক্ষা দিয়েছেন। তিনি ছিলেন মানবকল্যাণে সর্বদা উৎসর্গিত।
নাজিরহাট পূর্ব ফরহাদাবাদ (ঐতিহ্যবাহী মতিভাণ্ডার দরবার শরিফে) শাহ্ছাহেব কেবলা ও তাঁর আধ্যাত্মিক উত্তরসূরি হযরত শাহ্সুফি মওলানা আবুল ফয়েজ শাহ্ (রহ.)'র নূরানী মাজার শরিফ অবস্থিত। এই মহানসুফি নিঃসন্দেহে চট্টগ্রামের গৌরব। আধ্যাত্মিকতায় তাঁর অবদান চট্টগ্রামবাসী আজীবন স্মরণ করবে। এই মহান সত্তার চরণে রইল ভক্তি ও শ্রদ্ধা।
লেখক- ড. মোহাম্মদ আবদুল আজিম শাহ্
আধ্যাত্মিক উত্তরসূরি
মতি ভান্ডার দরবার শরীফ।
কলম সব খবর