Cvoice24.com

চট্টগ্রামে ৮ মাসে ২০৭৭ জনের জলাতঙ্ক, কুকুরের কামড়ে বেশি

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০০:৫৪, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২
চট্টগ্রামে ৮ মাসে ২০৭৭ জনের জলাতঙ্ক, কুকুরের কামড়ে বেশি

প্রতীকি ছবি

জলাতঙ্ক। যাকে বলা হয় হাইড্রোফোবিয়া কিংবা পাগলা রোগ। এ রোগে আক্রান্ত রোগী লক্ষণ দেখা দেওয়ার এক থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যেই মারা যান। কোনো অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে না। তবে জলাতঙ্কের বিরুদ্ধে কার্যকর টিকা রয়েছে। যা রোগের লক্ষণ প্রকাশের আগে শরীরে প্রয়োগ করতে পারলে মৃত্যু এড়ানো সম্ভব। চট্টগ্রামে গত আটমাসে এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৭৭ জন। এরমধ্যে কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ২২১ জন। অন্যান্য প্রাণীর দ্বারা সংক্রমিত হয়েছেন ৯১৬ জন।  এছাড়া গত দুই বছরে এ রোগে পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে চলতি বছরেই মারা গেছেন দুজন।

যদিও চট্টগ্রামে কুকুরের কামড়ের শিকারের চেয়ে জলাতঙ্কে আক্রান্ত রোগী কম। আর চলতি বছরের নয় মাসেই কুকুর কামড়ানোর টিকা নিয়েছেন চট্টগ্রামের প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ। 

চিকিৎসকরা বলছেন— অপচিকিৎসা, টোটকা না নিয়ে কুকুর কামড়ানো রোগীরা যথাসময়ে টিকা নিলে মৃত্যৃ এড়ানো সম্ভব এবং ২০৩০ সালের মধ্যে মৃত্যু সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। যদিও সচেতনতার প্রতিই জোর দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বরের ২৬ তারিখ পর্যন্ত জলাতঙ্ক রোগের জন্য অ্যান্টি র‌্যাবিস ভ্যাকসিন (এআরভি) নিয়েছেন ৬ হাজার ৮৫ জন। এরমধ্যে কুকুর কামড়ানোর জন্য টিকা নিয়েছেন ৩ হাজার ৫৮০ জন এবং অন্যান্য পশুর আক্রমণে টিকা নিয়েছেন ২ হাজার ৫০৫ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ ছিলেন সবচেয়ে বেশি। সংখ্যায় তা ৩ হাজার ৬০৩ জন এবং মহিলা ছিলেন ২ হাজার ৪৮২ জন। ভ্যাকসিন নেওয়া মানুষের মধ্যে ১৫ বছরের কম বয়সী রয়েছে ২ হাজার ৩০৩ জন এবং ১৫ বছরের বেশি বয়সী রয়েছে ৩ হাজার ৭৮২ জন। 

জেনারেল হাসপাতালের তথ্যমতে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে কুকুর কামড়ানোর জন্য টিকা নিয়েছেন ৩৭৫ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৬ জন, মার্চে ৪০৮ জন, এপ্রিলে ৪০১ জন, মে মাসে ৪৩৬ জন, জুনে ৪১৪ জন, জুলাইতে ৩৫০ জন, আগস্টে ৪২৩ জন এবং সেপ্টেম্বরে (২৬ তারিখ পর্যন্ত) ৩৯৭ জন। শুধুমাত্র নয় মাসেই এ হাসপাতালেই টিকা নিয়েছেন ৩ হাজার ৫৮০ জন মানুষ। 

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিকাল এন্ড ইনফেকসিয়াস ডিজিসেসের (বিআইটিআইডি) তথ্যমতে, চলতি বছর চট্টগ্রামে জলাতঙ্ক রোগী শনাক্ত হয়েছে ২০৭৭ জন। এরমধ্যে কুকুর কামড়ানো রোগীই বেশি। আট মাসে কুকুর কামড়ানোর কারণে জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন এক হাজার ২২১ জন। আর অন্যান্য পশুর কামড়ে জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৯১৬ জন। তারমধ্যে জানুয়ারিতে জলাতঙ্ক আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় ২৮৬ জন। ফেব্রুয়ারিতে ২৩০ জন, মার্চে ২৭৫ জন, এপ্রিলে ২৪৪ জন, মে’তে ২৪৯ জন, জুনে ২৫৭ জন, জুলাইয়ে ২৫১ জন, আগস্টে ২৮৫ জন। তবে জলাতঙ্কে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া দুইজনের কেউ ভ্যাকসিন গ্রহণ করেননি। তাদের একজন মারা যায় ফেব্রুয়ারিতে, অন্যজন মার্চে। 

এদিকে, ক্ষতের তীব্রতা ও আধিক্যের ওপর ভিত্তি করে জলাতঙ্কের জন্য দুই ধরনের টিকা দেওয়া হয়। কারও ক্ষেত্রে এক ধরনের, আবার কারও কারও ক্ষেত্রে উভয় ধরনের টিকা প্রয়োগের প্রয়োজন পড়ে। যত তাড়াতাড়ি জলাতঙ্কের এ টিকা গ্রহণ করা যায়, ততই রোগীর মৃত্যুঝুঁকি কমে। সাধারণত প্রথম দিন টিকা দেওয়ার পর ৩, ৭, ১৪, ২৮ ও ৯০তম দিনে টিকার মোট ৬টি ডোজ প্রয়োগ করতে হয়। নাভির চারপাশে চামড়ার নিচে এ টিকা নেওয়া হয়। টিকার সব কটি ডোজ সময়মতো গ্রহণ করে টিকার কোর্স সম্পন্ন করা আবশ্যক।
 
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিকাল এন্ড ইনফেকসিয়াস ডিজিসেসের (বিআইটিআইডি) সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. মামুনুর রশীদ সিভয়েসকে বলেন, ‘জলাতঙ্ক র‍্যাবিস ভাইরাসজনিত একটি মারাত্মক সংক্রামক রোগ। কুকুর রোগটির প্রধান বাহক। তবে বিড়াল, খেঁকশিয়াল, বেজি, বান, বাদুড়ের কামড় বা আঁচড়ের মাধ্যমেও জলাতঙ্ক হতে পারে। যদি যথাসময়ে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব হয় এবং টিকা নেওয়া যায় তাহলে মৃত্যু প্রতিরোধ সম্ভব। আর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে আক্রান্ত স্থান ১৫টি মিনিট ধরে পানির কল ছেড়ে সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে নিলে উপস্থিত ৭৫-৮০ ভাগ জলাতঙ্কের জীবাণু চলে যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘কুকুর বিড়াল কামড়ালে ভ্যাক্সিনেশনের কোনও বিকল্প নেই। কারণ জলাতঙ্কের উপসর্গ দেখা দিলে আর কোনও চিকিৎসা নেই। মৃত্যু নিশ্চিত। লক্ষণ দেখা দেওয়ার এক থেকে তিন সপ্তাহের ভেতর রোগী মারা যান। তাই সকলকে অবশ্যই সচেতন হতে হবে।’ 

একই বিষয়ে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক সেখ ফজলে রাব্বি সিভয়েসকে বলেন, ‘সিটি করপোরেশন থেকে পথ কুকুরদের টিকাদান কর্মসূচি চলমান আছে। চট্টগ্রামে জলাতঙ্ক রোগী কম কিন্তু কুকুরে কামড়ানোর টিকা নেওয়ার সংখ্যা বেশি। জলাতঙ্ক রোগী কম হওয়ার জন্য কুকুরের ভ্যাকসিন নিশ্চিত করতে হবে। আমরা বিনামূল্যে অ্যান্টি র‌্যাবিস ভ্যাকসিন (এআরভি) এবং র‌্যাবিস ইমোনোগ্লুবিন (আরআইজি) সম্পূর্ণ বিনামূল্যে সরবরাহ করে আসছি। কিন্তু আমাদের র‌্যাবিস ইমোনোগ্লুবিন (আরআইজি) টিকার অপ্রতুলতা রয়েছে। মানে এই টিকাটা আমরা সীমিত আকারে দিচ্ছি। যদি এটার অপ্রতুলতা না থাকতো তাহলে আমাদের রোগীরা সর্বোচ্চ সেফটিনেটের ভেতরে থাকতো। পাশাপাশি মানুষকে অবশ্যই সচেতন হতে হবে।’

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়