Cvoice24.com

চট্টগ্রামে প্রথমদিনে ভ্যাকসিন নিলো ১০৯০ জন, নেই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০:৩৭, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১
চট্টগ্রামে প্রথমদিনে ভ্যাকসিন নিলো ১০৯০ জন, নেই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

ছবি : সিভয়েস

চট্টগ্রামে একযোগে শুরু হয়েছে করোনা ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম। প্রথম দিনে নগরে ও ১৪টি উপজেলায় ১ হাজার ৯০ জনকে করোনা ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে ৪২৩ জন নগরের এবং ৬৬৭ জন বিভিন্ন উপজেলার। এদিকে ভ্যাকসিন গ্রহণের পর কারো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন।

রবিবার (৭ ফেব্রুয়ারি) শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল কেন্দ্রে সকাল সাড়ে ১০টায় নিজে ভ্যাকসিন গ্রহণের মাধ্যমে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। 

এরপর একে একে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবীর, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী, বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির, সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বিদ্যুৎ বড়ুয়া, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন ভ্যাকসিন গ্রহণ করেন। করোনা পরবর্তী জটিলতা পর্যবেক্ষণের জন্য তাদের বুথের ভেতরে রাখা হয়।  

আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর দিনব্যাপি করোনা ভ্যাকসিনের মূল কর্মসূচি চলে। এতে নগরের ৬টি কেন্দ্রে ও ১৪ টি উপজেলায় দেওয়া হয়েছে ভ্যাকসিন। যারা ভ্যাকসিন নিয়েছেন তারা সাধারণ মানুষকে এ ভ্যাকসিন নিতে উদ্বুদ্ধ করছেন। তারা সারাদিন কোন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হননি বলেও জানান।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সেলিম আক্তার চৌধুরী সিভয়েসকে বলেন, ‘আজ (রবিবার) চট্টগ্রামে আনুষ্ঠানিকভাবে করোনা ভ্যাকসিন প্রদান শুরু হয়েছে। এতে মোট ৬টি কেন্দ্রে মোট ৪২৩ জনকে করোনা ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল কেন্দ্রে ২৩৫ জন, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ৪০ জন, নেভি হাসপাতালে ৫০ জন, বিমান বাহিনী হাসপাতালে ৫০ জন, সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ২৮ জন, বাংলাদেশ মিলিটারি (বিএম) হাসপাতালে ২০ জনকে ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে কোন ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়নি। ভ্যাকসিন নেওয়ার পর পূর্ব নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী প্রতিজনকে আধঘণ্টা করে অবজারবেশনে রাখা হয়েছ। এতে কারো কোন ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।’

ভ্যাকসিন নেওয়ার পর নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সকালে চমেক হাসপাতালে করোনা ভ্যাকসিন নিয়েছি। সারাদিন আমার দৈনন্দিন কাজ করেছি। এতে আমার কোন সমস্যা হয়নি। এ ভ্যাকসিনে কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। নগরবাসী নিঃসন্দেহে এ ভ্যাকসিন নিতে পারবেন।’ নিয়ম মেনে নিবন্ধন করে ভ্যাকসিন নিতে আহ্বান জানান তিনি।

সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘চট্টগ্রাম নগরের সাথে সাথে উপজেলাগুলোতেও শুরু হয়েছে করোনা ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম। এতে ১৪টি উপজেলায় মোট ৬৬৭ জনকে করোনার ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে ৪৮৭ জন পুরুষ ও ১৮০ জন মহিলা। 

উপজেলার মধ্যে লোহাগাড়ায় ২০ জন, রাঙ্গুনিয়ায় ৭০ জন, ফটিকছড়িতে ১৮ জন, বাঁশখালীতে ৪০ জন, আনোয়ারায় ৭০ জন, সীতাকুণ্ডে ৩৯ জন, সাতকানিয়ায় ৪০ জন, রাউজানে ১০ জন, মিরসরাইয়ে ৫০ জন, চন্দনাইশে ২০ জন, বোয়ালখালীতে ৫০ জন, হাটহাজারীতে ১৫০ জন, সন্দ্বীপে ২০ জন, পটিয়ায় ৭০ জনকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে কোন ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি বলেও জানান তিনি। 

করোনা ভ্যাকসিন নেওয়ার পর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন বলেন, ‘করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে সারাদিন নিজের অফিসিয়াল কাজ করেছি। কোন ধরনের খারাপ লাগা কাজ করেনি। অন্যদিনের মতই স্বাভাবিক ছিলাম।’ সকল শ্রেণী পেশার মানুষকে ভ্যাকসিন নিতে উৎসাহিত করেছেন তিনি।

চট্টগ্রামের বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক হাসান শাহরিয়ার কবীর সিভয়েসকে বলেন, ‘ভ্যাকসিন নেয়ার পর সারাদিন কোন ধরনের সমস্যা অনুভব করিনি। তবে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে ভ্যানসিন নেয়া দুইজনের হালকা মাথা ঘুরালেও কিছুক্ষণ পর স্বাভাবিক হয়ে যায়।’

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) পরামর্শক্রমে ভ্যাকসিন পরবর্তী জটিলতা পর্যবেক্ষণে ১৪ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে চট্টগ্রামে। বিভাগীয় পর্যায়ে পোস্ট ভ্যাকসিন ইনফেকশন কন্ট্রোল নামে এ কমিটির চেয়ারম্যান চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক। কো-চেয়ারম্যান হিসেবে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক এবং সদস্য সচিব হিসেবে রয়েছেন সিভিল সার্জন। ইতোমধ্যে ডব্লিউএইচও এর আয়োজনে দুই দিনের একটি ওয়ার্কশপেও অংশ নিয়েছেন কমিটির সদস্যরা।

টিকাদানে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) এলাকায় প্রাথমিকভাবে টিকাদান কেন্দ্র চূড়ান্ত করেছে চসিক করোনা ভ্যাকসিন প্রদান কমিটি। কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নগরের ১৫টি কেন্দ্রে করোনার টিকাদান কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। আর এসব কেন্দ্রে টিকাদানে নিয়োজিত থাকবে ৪২টি টিম। টিকাদানকারী হিসেবে ২ জন মিড ওয়াইফ, স্টাফ নার্স বা সিনিয়র স্টাফ নার্স এবং ৪ জন স্বেচ্ছা সেবকের সমন্বয়ে প্রতিটি টিমে মোট ৬ জন সদস্য থাকবেন। নগরের এ কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এবং উপজেলায় ইউএনও। 

নগরের ১৫ কেন্দ্রে মোট ৪২টি টিম কাজ করবে। আর ১৪টি উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে দেওয়া হবে করোনার টিকা। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে দুটি করে টিম টিকাদানে নিয়োজিত থাকবে বলে জানান জেলা সিভিল সার্জন।

রেজিস্ট্রেশন ছাড়া কেউ টিকা পাবেন না। তাই অগ্রাধিকারের জন্য 'সুরক্ষা' অ্যাপ্লিকেশন অথবে ওয়েবসাইটে অনলাইন নিবন্ধন করতে হবে। মোবাইলে অ্যাপটি বিনামূল্যেই ডাউনলোড করা যাবে। (www.surokkha.gov.bd) মোবাইলে অ্যাপ ডাউনলোড করে নিবন্ধন করতে পারবেন।

করোনা ভাইরাসসের টিকা দেওয়া হবে নগরীর যে ১৫টি কেন্দ্রে তা হলো- চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল, সিটি করপোরেশন জেনারেল হাসপাতাল, মা ও শিশু মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম সেনানিবাস হাসপাতাল, চট্টগ্রাম পুলিশ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম নৌ-বাহিনী হাসপাতাল, চট্টগ্রাম বিমান বাহিনী হাসপাতাল, চট্টগ্রাম বন্দর হাসপাতাল, চসিক বন্দরটিলা হাসপাতাল, চসিক মোস্তফা হাকিম মাতৃসদন হাসপাতাল, চসিক ছাফা মোতালেব মাতৃসদন হাসপাতাল, ইউএসটিসি হাসপাতাল, সাউদার্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং মেরিন সিটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।

-সিভয়েস/আরএস

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়