Cvoice24.com

নগরের ১১ থানায় অ্যান্টিবডি টেস্ট করছে আইসিডিডিআরবি

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০:২৭, ৪ মার্চ ২০২১
নগরের ১১ থানায় অ্যান্টিবডি টেস্ট করছে আইসিডিডিআরবি

নগরের ১১ থানায় অ্যান্টিবডি টেস্ট করছে আইসিডিডিআরবি।

করোনার ধকল কাটিয়ে উঠতে যাওয়া বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে কতটুকু অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে তা নির্ণয়ে কাজ শুরু করেছে ঢাকার আন্তর্জাতিক উদরাময় কেন্দ্র (আইসিডিডিআরবি)। দেশের ৬ সিটি করপোরেশনের নির্দিষ্ট জনগণের মাঝে অ্যান্টিবডি টেস্ট করা হচ্ছে। অন্য সিটির মতো চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনেও অ্যান্টিবডি টেস্ট কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

চট্টগ্রাম মহানগরের ১১টি থানার ২৫টি মহল্লায় এ অ্যান্টিবডি টেস্ট করা হচ্ছে। প্রতি মহল্লায় ৫০ জনের টেস্ট করা হচ্ছে। সে হিসেবে চট্টগ্রাম সিটির ১১ থানার ২৫ মহল্লায় মোট ১২শ ৫০ জনের টেস্ট করা হচ্ছে। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে নগরের ১১ থানায় এ টেস্ট শুরু হয়ে যা আগামী ১৮ মার্চ পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছেন জরিপ টিমের সদস্য আইসিডিডিআরবির সিনিয়র ফিল্ড রিসার্চ অফিসার মিজানুর রহমান।

সিভয়েসকে বলেন, ‘এই জরিপের প্রধান লক্ষ্য হলো করোনাকালে দেশের কোন বয়সে করোনা সংক্রমণের হার বেশি, কোন স্তরে বেশি সংক্রমিত হয়েছে তার মাত্রা নির্ণয় ও লক্ষণ ছাড়াই সংক্রমণের হার এবং সংক্রমণের সংখ্যা অনুমান করা। এই রোগের মাত্রার উপর নির্ভর করে জীবনযাত্রার মান কীভাবে প্রভাবিত হয় তা নির্ধারণ করা ও মহামারী ছড়িয়ে পড়ার পর তার প্রভাবগুলি মূল্যায়ন হবে এই সমীক্ষার মূল লক্ষ্য।’

তিনি জানান, চট্টগ্রাম সিটির ১১ থানার ২৫ মহল্লায় মোট ১২শ ৫০ জনের ওপর এ অ্যান্টিবডি টেস্ট করা হচ্ছে। রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমেই মূলত এ অ্যান্টিবডি টেস্ট করা হবে। যেসব থানায় এ অ্যান্টিবডি টেস্ট করা হচ্ছে তা হলো—ইপিজেড, বন্দর, ডবলমুরিং, হালিশহর, পাঁচলাইশ, বায়েজিদ, চান্দগাঁও, কোতোয়ালী, সদরঘাট, আকবর শাহ, চকবাজার থানা। এসব টেস্ট করার পর ঢাকার আইসিডিডিআরবি থেকে ৬ সিটির পরীক্ষার ফল একসাথে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা প্রতিরোধ ক্ষমতার গবেষণায় এতদিন বেশি মনোযোগ দিয়েছে অ্যান্টিবডির দিকেই। এখন করোনার ভ্যাকসিন আসলেও টিকা নেওয়ার পরও যে আক্রান্ত হচ্ছে না বা হবে না তার কোনও গ্যারান্টি নেই। অ্যান্টিবডি হচ্ছে ইংরেজি ওয়াই অক্ষরের মতো দেখতে একটা প্রোটিন যা ঠিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়ে একটা লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করার মতো করেই কাজ করে। করোনাভাইরাস মানুষের দেহকোষে ঢোকার আগেই এই অ্যান্টিবডিটা ভাইরাসের সাথে আটকে গিয়ে তাকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। আর যদি অ্যান্টিবডি এটা করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে করোনাভাইরাসে দেহকোষের মধ্যে ঢুকে পড়ে এবং সেটাকে আরো ভাইরাস তৈরির কারখানায় পরিণত করে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেশ কয়েকটি কারণে অ্যান্টিবডি টেস্ট দেশের ক্রমবর্ধমান মহামারি পরিস্থিতি মোকাবিলায় ফলপ্রসূ ভূমিকা বয়ে আনতে পারে। প্রথমত, পূর্বে সংক্রামিত হয়েছিল, কিন্তু রোগের লক্ষণ প্রকাশিত হয়নি তাদের অবস্থা জানার জন্য। গবেষণায় দেখা গেছে, করোনাভাইরাসে সংক্রামিত হলেও অনেকের শরীরে অসুস্থতার কোনো হালকা লক্ষণ নাও দেখা যেতে পারে। ফলে তারা নিজের অজান্তেই রোগ ছড়াতে পারে। তাই এ ক্ষেত্রে অ্যান্টিবডি টেস্ট এসব রোগীকে (যাদের রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়নি) শনাক্ত করতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। এ ছাড়া এই পরীক্ষার ফলাফল ডাক্তারকে রোগীর পরবর্তী চিকিৎসা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করতে পারে। দ্বিতীয়ত, বর্তমানে বহুল আলোচিত কনভ্যালসেন্টস প্লাজমা থেরাপির জন্য অ্যান্টিবডি টেস্ট অত্যন্ত জরুরি।

কনভ্যালসেন্টস প্লাজমা থেরাপি (Convalescent plasma therapy) হলো একজন রোগ নিরাময় হওয়া কোভিড-১৯ রোগীর অ্যান্টিবডি–সমৃদ্ধ রক্তরস (প্লাজমা), যা অন্য একজন কোভিড-১৯ রোগীর চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা। অ্যান্টিবডি টেস্টের মাধ্যমে কোনো ব্যক্তির রক্তে কোভিড-১৯–এর বিরুদ্ধে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডির মাত্রা নির্ধারণ করা যেতে পারে। ভ্যাকসিন তৈরি করতে বা এর বিকাশে সহায়তা করার জন্যও অ্যান্টিবডি টেস্ট জরুরি ভূমিকা পালন করে থাকে। যখন কোনো জীবাণুর বিরুদ্ধে শরীরে নির্দিষ্ট কোনো ভ্যাকসিন ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রয়োগ করা হয়, তখন এটি মানুষের শরীরে ওই নির্দিষ্ট জীবাণুর সংক্রমণ অনুকরণ করে। ফলে এটি সংক্রমণের বিরুদ্ধে শরীরের প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা তৈরিতে সহায়তা করে, যাকে অ্যান্টিবডি বলা হয়ে থাকে। কোনো সম্ভাব্য ভ্যাকসিনের প্রতি শরীরের প্রতিক্রিয়া তথা তৈরি করা অ্যান্টিবডির যাচাই করার জন্য অ্যান্টিবডি টেস্টের প্রয়োজন।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়