Cvoice24.com

জটিল অপারেশনকে সহজ করে হার্টে রিং স্থাপন এভারকেয়ার হাসপাতালে 

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২২:৩৭, ৮ মে ২০২১
জটিল অপারেশনকে সহজ করে হার্টে রিং স্থাপন এভারকেয়ার হাসপাতালে 

সফল অপারেশনের পর নিজের অভিজ্ঞতা বিনিময় করছেন রোগী বদিউল আলম।

ওমান প্রবাসী ৫০ বছর বয়সী বদিউল আলম। বোয়ালখালীর চরণদ্বীপ থেকে বুকে তীব্র ব্যাথা নিয়ে গত ৪ মে এভারকেয়ার হসপিটাল চট্টগ্রামে ভর্তি হন। এদিন এভারকেয়ার হাসপাতালের ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলোজি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. জহিরউদ্দিন মাহমুদ ইলিয়াছ এনজিওগ্রাম করে দেখতে পান রোগীর মূল রক্তনালীর ৩ টিতেই জটিল ব্লক রয়েছে। যার একটি ছিল ৯৫ ভাগ, একটি ৯০ ভাগ, অন্যটি ৯৯ ভাগ। রোগীর হার্ট পাম্পিং (কার্যক্ষমতা) ছিলো মাত্র ৩০ ভাগ। এমন জটিল পরিস্থিতিতে রোগীর সম্মতিতে মাত্র এক ঘণ্টার সফল অপারেশনের মাধ্যমে তার হার্টে তিনটি রিং পড়ানো হয় এবং রোগী সুস্থ হয়ে উঠেন দ্রুত সময়ের মধ্যেই। 

হাসপাতালের চিকিৎসকরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে মাত্র ৩০ ভাগ হার্ট পাম্পিং নিয়ে কোনও রোগীর হার্টে রিং পড়নো হয়নি। যা সফলতার সাথে করে দেখিয়েছে নব নির্মিত উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা এভারকেয়ার হাসপাতালটির দক্ষ কার্ডিয়াক টিম। আর জটিল ও বিরল এ অপারেশনের খরচও তুলনামূলক সাশ্রয়ী বলছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও রোগী উভয়েই। 

বিষয়টি জানতে শনিবার বিকেলে হাসপাতালটির কনফারেন্স হলে সাংবাদিকদের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় করা হয়। এসময় উপস্থিত থেকে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে রোগী বদিউল আলমও। 

এভারকেয়ার হাসপাতালের ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলোজি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. জহিরউদ্দিন মাহমুদ ইলিয়াছ বলেন, ‘দেশে তিনটি রিং অনেকের পড়ানো হয়েছে। তবে এই রোগীর ক্ষেত্রে তা জটিল ও বিরল। কেননা প্রথমত তার তিনটি রক্তনালীর ৯০, ৯৫ ও ৯৯ ভাগ ব্লক ছিল। সাধারণত এ রকম থাকে না। এছাড়া রোগীর  হার্ট পাম্পিং ছিল মাত্র ৩০ ভাগ। এ রকম পরিস্থিতিতে সচারচর কেউ ঝুঁকি নিতে চান না। কিন্তু রোগীর সাহসের সাথে আমাদের অভিজ্ঞতা আর অত্যাধুনিক সব ইকুইপমেন্ট ছিল বলে আমরা সেই ঝুঁকি নিয়েছি। অন্য রোগীদের হার্টের স্টেনটিং এর সাইজ সাধারণের চেয়ে দ্বিগুণ বসানো হয়। এরপরও আল্লাহর রহমতে আমরা সাকসেস হয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘রোগী এখন সুস্থ ও স্বাভাবিক সব কাজ করতে পারবেন। তার শারীরিক যদি কোনও জটিলতা হয় তাহলে চট্টগ্রামের বাইরে বা দেশের বাইরে যেতে হবে না। এখানেই বিশ্বমানের সব সেবা পাওয়া যাবে।’ 

হাসপাতালটির চীফ অপারেটিং অফিসার নীলেশ গুপ্ত বলেন, ‘সাধারণত চট্টগ্রামের অন্য হাসপাতালগুলোতে হার্টের তিনটি রিং পড়ানোর জন্য যে পরিমাণ টাকা খরচ হয় আমাদের বিশ্বমানের চেইন এ হাসপাতালেও সে রকম খরচ হয়েছে। রোগীর ভর্তি থেকে শুরু করে ফলোআপসহ রিং লাগানোয় খরচ পড়েছে তিন লাখ ২০ হাজার টাকা। একটি রিং লাগানো হলে সেক্ষেত্রে দেড় লাখ টাকার প্যাকেজ মূল্যে করা যাবে। এক কথায় বিশ্বমানের হাসপাতাল হলেও হার্ট বিভাগসহ সব বিভাগেরই সার্বক্ষণিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছে এভারকেয়ার হাসপাতাল চট্টগ্রামে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘কভিড পরিস্থিতিতে ইন্ডিয়া নেওয়ার দূরের কথা, ঢাকায় নিতেও যখন সমস্যা সেখানে একই খরচে বা তার চেয়ে কম খরচে চট্টগ্রামে বসেই সব জটিল রোগের বিশ্বমানের চিকিৎসা সেবা পাওয়া যাচ্ছে এভারকেয়ার হাসপাতালে। অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির সমন্বয়ে বিশ্বমানের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে নগরের অক্সিজেনে অনন্যা আবাসিক এলাকায় গড়ে উঠেছে এভারকেয়ার হাসপাতাল। 

৪৭০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটিতে থাকছে সর্বাধুনিক আইসিইউর ব্যবস্থা। চট্টগ্রামের সকল শ্রেণির বাসিন্দাদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে ৫০০ এর বেশি মেডিক্যাল প্রফেশনালদের নিয়ে তৈরি করা হয়েছে ২৭টি বিশেষ ও উপ-বিশেষ বিভাগ। এছাড়াও রয়েছে ২৪/৭ জরুরি বিভাগ ও সুসজ্জিত ক্যাবিন রুম। অনুমোদিত দুটি অ্যাম্বুল্যান্সসহ হাসপাতাল জুড়ে রয়েছে দশটি লিফট।’

তিনি জানান, বাংলাদেশি চিকিৎসকদের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের চিকিৎসকরা সেবা দেবেন এই হাসপাতালে। হাসপাতালটিতে রয়েছে অত্যাধুনিক এক্সরে, সিটি স্ক্যান ও এমআরআই মেশিন। জরুরি ভিত্তিতে রোগীদের রক্তের সংকট মোকাবেলায় রয়েছে ব্লাড ব্যাংক। গর্ভবতী রোগীদের জন্যও রয়েছে ফিমেল কেয়ার রুমসহ অন্যান্য সুব্যবস্থা। জরুরি ও জটিল অপারেশন করার সময় তথ্য আদান-প্রদানে ডাক্তারদের জন্য রয়েছে আলাদা কনফারেন্স রুম। তাছাড়া ডাক্তারদের জন্য রয়েছে লাইব্রেরি। বাচ্চাদের জন্যও রয়েছে প্লে-কর্ণার। এছাড়াও মহামারি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিবে হাসপাতালটি। তাই অনুমতি সনদ পেতে ইতোমধ্যে আবেদন প্রক্রিয়াও শেষ হয়েছে। তাছাড়া স্বল্প আয়ের মানুষের সেবা পেতে রয়েছে বহিঃবিভাগ। সেখানে স্বল্প মূল্যে সেবা প্রদান করা হবে।

বিশ্বমানের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে চট্টগ্রামে ‘এভারকেয়ার হাসপাতাল’

এভারকেয়ার চট্টগ্রাম হসপিটালে রয়েছে অত্যাধুনিক এবং বিশ্বমানের ক্যাথ ল্যাব এবং কার্ডিয়াক অপারেশন থিয়েটার। এখানে ২৪/৭ দক্ষ হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ, হৃদরোগ সার্জন এবং ক্রিটিকাল কেয়ার বিশেষজ্ঞগণের সমন্বয়ে হৃদরোগের যাবতীয় জটিল রোগের চিকিৎসা সুলভমূল্যে সম্পন্ন করা হয় বলেও জানানো হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থেকে। 

এভারকেয়ার হসপিটালে নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে রোগী বদিউল আলম বলেন, ‘অনেক দিন যাবৎ আমি ডায়াবেটিকে ভুগছি এবং সম্প্রতি তীব্র বুকে ব্যথা নিয়ে এভারকেয়ার হসপিটালে ভর্তি হই। হাসপাতালটির ব্যাপারে আগে শুনে থাকলেও, নিজে এসে তাদের উন্নত ব্যবস্থাপনা, আন্তর্জাতিক মানের স্বাস্থ্য সেবা এবং ডাক্তার-নার্স সহ সকল কর্মীদের আন্তরিক ব্যবহারে আমি সত্যিই মুগ্ধ। ডা. জহির উদ্দিন মাহমুদ স্যার-এর সাথে যোগাযোগের পর তার পরামর্শে আমি হার্টে রিং পড়তে সম্মতি জানাই এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে, স্বল্প খরচে আমার সুচিকিৎসা সম্পন্ন হয়। বর্তমানে আমি ভালো আছি এবং আগের চেয়ে অনেক সুস্থ অনুভব করছি। ডা. জহির উদ্দিন স্যার এবং এভারকেয়ার হসপিটালে কাছে এই জন্য আমি কৃতজ্ঞ।’

অভিজ্ঞতা বিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন হাসপাতালটির চীফ অপারেটিং অফিসার নীলেশ গুপ্ত, মেডিকেল সার্ভিসেস বিভাগের পরিচালত ডা. প্রকাশ কুণ্ডুর নারাসিমহাইয়া, মহা ব্যবস্থাপক ডা. মোহাম্মদ ফজল- ই- আকবর চৌধুরী।  

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, কেনিয়া এবং নাইজেরিয়া সহ দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকার উদীয়মান বাজারজুড়ে তাদের সমন্বিত স্বাস্থ্য সেবা সরবরাহকারী প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে এভারকেয়ার। ৩৪৪৫টি শয্যা সহ ৩০টি হাসপাতাল, ১৬টি ক্লিনিক, ৮২টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং ২টি ব্রাউনফিল্ড অ্যাসেটস এই প্রতিষ্ঠানের পোর্টফোলিও’র অন্তর্ভুক্ত। দেশের উদীয়মান বাজারে একটি সিস্টেম্যাটিক স্বাস্থ্য সেবা তৈরি করতে প্রায় ১১ হাজার কর্মী নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছে। একটি বিচিত্র স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে এভারকেয়ার গ্রুপ গর্বিত। এভারকেয়ার হেলথ ফান্ড-এর মালিকানাধীন একটি প্রতিষ্ঠান এভারকেয়ার, যা উদীয়মান বাজারে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমতুল্য রাইজ ফান্ডস পরিচালিত স্বাস্থ্য সেবা তহবিল, যা বৈশ্বিক বিকল্প সম্পদ ব্যবস্থাপক টিপিজি’র প্রভাব বিনিয়োগের একটি প্ল্যাটফর্ম। এভারকেয়ার স্বাস্থ্য তহবিল বিশ্বের শীর্ষ স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন সংস্থা এবং বিশ্বের অন্যান্য প্রভাবিত বিনিয়োগকারীদের সমন্বয়ে গঠিত একটি প্রতিষ্ঠান।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়