Cvoice24.com

আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এপির প্রতিবেদন
ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট উদ্বেগ বাড়াচ্ছে বাংলাদেশে 

সিভয়েস ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৪:১৯, ৯ মে ২০২১
ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট উদ্বেগ বাড়াচ্ছে বাংলাদেশে 

শিমুলিয়া ঘাটে ফেরিতে উঠতে কঠিন লড়াই

ভারতে পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ও মৃত্যুর ঘটনা— দুই-ই হু হু করে বাড়ছে। করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট এতোই ভয়াবহ যে, টিকাতেও দমছে না। এ নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান বিজ্ঞানী সৌম্য স্বামীনাথনও।

আন্তর্জাতিক একটি বার্তা সংস্থাকে দেওয়া শনিবারের এক সাক্ষাৎকারে সৌম্য বলেন, ‘ভারতে করোনার যে ধরনটি ছড়াচ্ছে, তা অনেক বেশি সংক্রামক। এটি সম্ভবত টিকা দিয়েও দমন করা যাচ্ছে না। এ কারণেই ভারতের এই ভয়াবহ পরিস্থিতি।’

ভারত ফেরত বাংলাদেশি যাত্রীদের মধ্যে দিন দিন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। তাই শঙ্কা ছিল ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট বাংলাদেশেও ঢুকে পড়তে পারে। সে কারণে বন্ধ করে দেওয়া হয় সীমান্ত চলাচল। কিন্তু সব ভয়কে এবার বাস্তবে রূপ দিয়ে প্রতিবেশী দেশের সেই ধরন শনাক্ত হয়েছে বাংলাদেশেও। 

সেই খবর উদ্বেগ বাড়িয়েছে বহুগুনে, কেননা অধিক মাত্রায় সংক্রমণের বৈশিষ্ট্যযুক্ত এ ভাইরাস। মৃত্যুহারও ভয়াবহভাবে এগিয়ে। এমনকি সেরে উঠলেও নিস্তার নেই। সুস্থদের বাসা বাঁধছে শরীরে জটিল আরো একটি রোগ। ফলে অধিকাংশেরই চিরস্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়ে যেতে হচ্ছে।  

এমন পরিস্থিতে দেশে যখন করোনা ভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচি জোরালো করা উচিত, তখনই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সেটির সঙ্কটের সতর্কতা দিচ্ছেন। বার্তা সংস্থা এপির প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে শনিবার জানানো হয়েছে, ভারতে উৎপত্তি এমন একটি করোনা ভাইরাসের ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত করা হয়েছে বাংলাদেশে। তবে এ বিষয়ে তারা বিস্তারিত কোনো তথ্য দেয়নি। কয়েক সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশের নমুনাগুলোতে দক্ষিণ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্টের বিষয়টি আধিপত্য বিস্তার করে আছে। উদ্বেগের বিষয় হলো ভাইরাসের এসব ভ্যারিয়েন্ট অতিসহজেই বিস্তার লাভ করতে পারে। আর প্রথম পর্যায়ে যেসব টিকা এসেছে তা এসব ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে কমই কার্যকর হতে পারে। 

বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলছেন, মার্চ ও এপ্রিলের প্রথমদিকের তুলনায় গত দুই সপ্তাহের বেশি বাংলাদেশে সংক্রমণ তুলনামূলক কমে এসেছে। এর প্রকৃত কারণ এখনো পরিপূর্ণভাবে জানা যায়নি। তবে এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের কাছে টিকাদান প্রক্রিয়াকে জোরদারের একটি প্রকৃত সুযোগ এসেছে। 

চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের একজন বিজ্ঞানী সেঁজুতি সাহা বলেন, ‘টিকা দেওয়ার উপযুক্ত সময় এখনই। এর মধ্য দিয়ে সংক্রমণকে কমিয়ে রাখতে হবে। একই সঙ্গে নিশ্চিত করতে হবে যে, নতুন ভ্যারিয়েন্টের উদ্ভব যেন না ঘটে এখানে।’

ওদিকে করোনা সঙ্কটে ভারতই হাবুডুবু খাচ্ছে। এমন অবস্থায় টিকা রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছে দেশিটি। অথচ জুনের মধ্যে বাংলাদেশে প্রতিমাসে ৫০ লাখ ডোজ করে মোট তিন কোটি ডোজ টিকা দেওয়ার কথা ছিল সেরাম ইনস্টিটিউটের। কিন্তু তারা মাত্র ৭০ লাখ ডোজ টিকা সরবরাহ করেছে। ফেব্রুয়ারির পর থেকে তারা সব রকম শিপমেন্ট স্থগিত করে রেখেছে। 

বাংলাদেশ সরকারের ইনস্টিটিউট অব এপিডেমিওলজি, ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্সের (আইইডিসিআর) বিজ্ঞানী ড. এএসএম আলমগীর বলেন, ‘এ অবস্থাই আসল সমস্যা সৃষ্টি করেছে। সঙ্কটের আশঙ্কায় গত মাসে প্রথম ডোজ টিকার জন্য নিবন্ধন বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। অন্যদিকে দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেওয়াও বিঘ্নিত হচ্ছে।’

এমন পরিস্থিতিতে রাশিয়া ও চীনের টিকা তৈরির প্রযুক্তি বাংলাদেশে এনে তা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ। বেইজিং থেকে আগামী সপ্তাহে উপহার হিসেবে চীনা টিকার ৫ লাখ ডোজ পাওয়ার আশা রয়েছে। একই সঙ্গে সাহায্য চাওয়া হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কাছেও। 

ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়রিয়া ডিজিজ রিসার্সের (আইসিডিডিআর) বিজ্ঞানী ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘নতুন ভ্যারিয়েন্ট থেকে যে ঝুঁকি আসছে তা বিরাট উদ্বেগের। বিশেষ করে যখন টিকা পর্যাপ্ত নেই।’

করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে অবশ্য দফায় দফায় বাড়িয়ে ১৬ মে পর্যন্ত দেশজুড়ে লকডাউন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মার্কেট, স্থানীয় পরিবহন ব্যবস্থায় মানুষের গাদাগাদি ঠিকই অব্যাহত। বিশেষ করে ঈদযাত্রায় লাখ লাখ মানুষের গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ায় শঙ্কাটা আরও বাড়িয়েছে। 

এ বিষয়ে ড. আলমগীর বলেন, ‘যদি দেশজুড়ে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা রক্ষায় ব্যর্থ হই আমরা, তাহলে এটা নিশ্চিত করে বলা যায় যে, এই ভাইরাস তার প্রাকৃতিক নিয়ম অনুযায়ী ছড়িয়ে পড়বে।’

যদিও ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ থাকায় বিশেষ কারণ ছাড়া কোনো যাত্রীর যাওয়া আসা বন্ধ রয়েছে। তবে অব্যাহত আছে পণ্য পরিবহন। এর মাধ্যমেও ভারতীয় করোনা ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা। আবার বাংলাদেশে এ ভাইরাস শনাক্তের সুযোগও অনেক কম। এর অর্থ হলো, সহজেই অনেক ‘ব্লাইন্ড স্পট’ থাকতে পারে। অর্থাৎ এমন সব স্থান বা এলাকা থাকতে পারে যেখানে করোনা ভাইরাস বিদ্যমান থাকলেও কেউ তা জানে না। 

ড. আলমগীর বলেন, ‘ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট যে বাংলাদেশে নতুন করে করোনার ঢেউ তুলবে না, এমনটা আমরা বলতে পারি না। কারণ দেশটির সঙ্গে আমাদের রয়েছে অনেক স্পর্শকাতর সীমান্ত।’ 

গত বছরের মার্চ মাসে বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে গত ১৮ মার্চ। তারপর থেকে কমপক্ষে ৭ লাখ ৭০ হাজার ৮৪২ জনের শরীরে ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়েছে। এতে মারা গেছেন ১১ হাজার ৮৩৩ জন।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়