Cvoice24.com

চট্টগ্রামে আজ, মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪

সময় ঘন্টা মিনিট সেকেন্ড

চট্টগ্রামে ৫৫ শতাংশ মানুষের দেহে অ্যান্টিবডি—আইসিডিডিআরবি’র সমীক্ষার ফল 

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৭:৫৬, ২২ জুন ২০২১
চট্টগ্রামে ৫৫ শতাংশ মানুষের দেহে অ্যান্টিবডি—আইসিডিডিআরবি’র সমীক্ষার ফল 

করোনার ধকল কাটিয়ে উঠতে চট্টগ্রামের ৫৫ শতাংশ মানুষ সক্ষম বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক উদরাময় কেন্দ্র (আইসিডিডিআরবি)। চট্টগ্রাম মহানগরের দুটি বস্তিসহ ১১ থানার ২৫টি মহল্লায় করোনা উপসর্গযুক্ত ও উপসর্গহীন মানুষের মধ্যে এ সমীক্ষাটি চালিয়েছিল সংস্থাটি। প্রতি মহল্লায় ৫০ জন করে মোট ১২৫০ জনের মধ্যে সমীক্ষা করে তাদের মধ্যে ৬৮৮ জনের করোনার অ্যান্টিবডি পাওয়ার কথা জানিয়েছে আইসিডিডিআরবি।  

মঙ্গলবার ঢাকায় এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে আইসিডিডিআরবি'র গবেষক ডা. রুবহানা রাকিব ও ড. আবদুর রাজ্জাক এ সমীক্ষা ফল উপস্থাপন করেন।

এর আগে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৮ মার্চ নগরের ১১ থানায় এ সমীক্ষা চালায় আইসিডিডিআরবি’র একটি দল। তারা নগরের ১১টি থানার ২৫টি মহল্লায় ৫০ জন করে চট্টগ্রাম সিটির ১১ থানার ২৫ মহল্লায় মোট ১২শ ৫০ জনের টেস্ট করে। 

আইসিডিডিআরবি বলছে, ঢাকা ও চট্টগ্রামের কয়েকটি নির্বাচিত বস্তি ও বস্তিসংলগ্ন এলাকায় সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে যে, ঢাকায় ৭১ শতাংশ এবং চট্টগ্রামে ৫৫ শতাংশ মানুষের দেহে করোনার অ্যান্টিবডি রয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে, নির্দিষ্ট এই এলাকাগুলোতে কী পরিমাণ মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন, সে সম্পর্কে একটা ধারণা মিলছে এই জরিপের ফলাফলে। আইসিডিডিআরবি জানায়, মোট ৩২২০ জন অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে চট্টগ্রামের তুলনায় ঢাকায় করোনায় অ্যান্টিবডি শনাক্তের হার বেশি। ঢাকায় যেটি ৭১%, চট্টগ্রামে তা ৫৫%। বয়স্ক ও তরুণদের এ হার প্রায় সমান। অন্যদিকে নারীদের মধ্যে শনাক্তের হার ৭০.৬%, যা পুরুষদের (৬৬%) তুলনায় বেশি।

তবে এ তথ্য শুধুমাত্র যেখানে সমীক্ষা চালানো হয়েছে সেখানকার জন্য এবং যে সময়ে হয়েছে সে সময়ের জন্য প্রযোজ্য বলে বলছেন গবেষকরা।

আবার যেসব অংশগ্রহণকারীদের (মোট ২২০৯) মাঝে সংক্রমণ পাওয়া গেছে তাদের মধ্যে শুধুমাত্র ৩৫ দশমিক ৫ শতাংশের ক্ষেত্রে মৃদু উপসর্গ দেখা দিয়েছিল।

এ গবেষণায় দেখা গেছে যে স্বল্প শিক্ষিত, অধিক ওজন, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস রয়েছে যাদের, তাদের মাঝে অধিক মাত্রায় সেরোপ্রিভেলেন্স (রক্তে কোভিড উপস্থিতির হার) দেখা গিয়েছে। অন্যদিকে বার বার হাত ধোয়ার প্রবণতা, নাক-মুখ কম স্পর্শ করা, বিসিজি টিকা গ্রহণ এবং মাঝারি ধরণের শারীরিক পরিশ্রম করা ব্যক্তিদের মাঝে কম মাত্রার সংক্রমণ দেখা গেছে।

অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশ নিয়ে আইসিডিডিআরবি’র প্রধান ড. তাহমিদ আহমেদ বলছেন, জ্বর, কাশি বা শ্বাসকষ্ট কিংবা এ ধরনের তিনটি উপসর্গ থাকলেই মনে করতে হবে যে করোনা সংক্রমণ ঘটেছে এবং টেস্ট করাতে হবে। তিনি বলেন, করোনা থেকে মুক্ত থাকতে অ্যাক্টিভিটি অর্থাৎ কায়িক পরিশ্রম বাড়ানো, মাস্ক পরাসহ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ওপরই গুরুত্ব দিতে হবে। 

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন বলেছেন, আইসিডিডিআরবি'র এ গবেষণার তাৎপর্যপূর্ণ দিক হলো অধিকাংশই মৃদু লক্ষণযুক্ত বা কোন লক্ষণ নেই অর্থাৎ উপসর্গহীন যারা ভাইরাসের সংস্পর্শে এসেছেন তারা সেটি ছড়াতে সক্ষম। একই সাথে যারা শারীরিক পরিশ্রম বেশি করছেন তাদের আক্রান্ত হবার ঝুঁকি কম সেটি এ গবেষণাতেও দেখা গেছে বলে জানান তিনি। 

আইসিডিডিআরবি’র সমীক্ষা টিমের সদস্য আইসিডিডিআরবির সিনিয়র ফিল্ড রিসার্চ অফিসার মিজানুর রহমান গত মার্চে সিভয়েসকে বলেছিলেন, ‘চট্টগ্রাম সিটির ১১ থানার ২৫ মহল্লায় মোট ১২শ ৫০ জনের ওপর এ অ্যান্টিবডি টেস্ট করা হচ্ছে। রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমেই মূলত এ অ্যান্টিবডি টেস্ট করা হবে। যেসব থানায় এ অ্যান্টিবডি টেস্ট করা হচ্ছে তা হলো— ইপিজেড, বন্দর, ডবলমুরিং, হালিশহর, পাঁচলাইশ, বায়েজিদ, চান্দগাঁও, কোতোয়ালী, সদরঘাট, আকবর শাহ, চকবাজার থানা।’

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা প্রতিরোধ ক্ষমতার গবেষণায় এতদিন বেশি মনোযোগ দিয়েছে অ্যান্টিবডির দিকেই। এখন করোনার ভ্যাকসিন আসলেও টিকা নেওয়ার পরও যে আক্রান্ত হচ্ছে না বা হবে না তার কোনও গ্যারান্টি নেই। অ্যান্টিবডি হচ্ছে ইংরেজি ওয়াই অক্ষরের মতো দেখতে একটা প্রোটিন যা ঠিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়ে একটা লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করার মতো করেই কাজ করে। করোনাভাইরাস মানুষের দেহকোষে ঢোকার আগেই এই অ্যান্টিবডিটা ভাইরাসের সাথে আটকে গিয়ে তাকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। আর যদি অ্যান্টিবডি এটা করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে করোনাভাইরাসে দেহকোষের মধ্যে ঢুকে পড়ে এবং সেটাকে আরো ভাইরাস তৈরির কারখানায় পরিণত করে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেশ কয়েকটি কারণে অ্যান্টিবডি টেস্ট দেশের ক্রমবর্ধমান মহামারি পরিস্থিতি মোকাবিলায় ফলপ্রসূ ভূমিকা বয়ে আনতে পারে। প্রথমত, পূর্বে সংক্রামিত হয়েছিল, কিন্তু রোগের লক্ষণ প্রকাশিত হয়নি তাদের অবস্থা জানার জন্য। গবেষণায় দেখা গেছে, করোনাভাইরাসে সংক্রামিত হলেও অনেকের শরীরে অসুস্থতার কোনো হালকা লক্ষণ নাও দেখা যেতে পারে। ফলে তারা নিজের অজান্তেই রোগ ছড়াতে পারে। তাই এ ক্ষেত্রে অ্যান্টিবডি টেস্ট এসব রোগীকে (যাদের রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়নি) শনাক্ত করতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। এ ছাড়া এই পরীক্ষার ফলাফল ডাক্তারকে রোগীর পরবর্তী চিকিৎসা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করতে পারে। দ্বিতীয়ত, বর্তমানে বহুল আলোচিত কনভ্যালসেন্টস প্লাজমা থেরাপির জন্য অ্যান্টিবডি টেস্ট অত্যন্ত জরুরি।

কনভ্যালসেন্টস প্লাজমা থেরাপি হলো একজন রোগ নিরাময় হওয়া কোভিড-১৯ রোগীর অ্যান্টিবডি–সমৃদ্ধ রক্তরস (প্লাজমা), যা অন্য একজন কোভিড-১৯ রোগীর চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা। অ্যান্টিবডি টেস্টের মাধ্যমে কোনো ব্যক্তির রক্তে কোভিড-১৯–এর বিরুদ্ধে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডির মাত্রা নির্ধারণ করা যেতে পারে। ভ্যাকসিন তৈরি করতে বা এর বিকাশে সহায়তা করার জন্যও অ্যান্টিবডি টেস্ট জরুরি ভূমিকা পালন করে থাকে। যখন কোনো জীবাণুর বিরুদ্ধে শরীরে নির্দিষ্ট কোনো ভ্যাকসিন ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রয়োগ করা হয়, তখন এটি মানুষের শরীরে ওই নির্দিষ্ট জীবাণুর সংক্রমণ অনুকরণ করে। ফলে এটি সংক্রমণের বিরুদ্ধে শরীরের প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা তৈরিতে সহায়তা করে, যাকে অ্যান্টিবডি বলা হয়ে থাকে। কোনো সম্ভাব্য ভ্যাকসিনের প্রতি শরীরের প্রতিক্রিয়া তথা তৈরি করা অ্যান্টিবডির যাচাই করার জন্য অ্যান্টিবডি টেস্টের প্রয়োজন। 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়