Cvoice24.com

জুলাইয়ে গড়ে দৈনিক মৃত্যু ৯ জন, আক্রান্ত ৭৭৯

আতীয়া নওশীন

প্রকাশিত: ০২:০০, ১ আগস্ট ২০২১
জুলাইয়ে গড়ে দৈনিক মৃত্যু ৯ জন, আক্রান্ত ৭৭৯

বিদায় নিল ভয়ঙ্কর এক জুলাই। যে মাসে করোনার তাণ্ডবে পুরো কাবু ছিল চট্টগ্রাম। জুলাইয়ে যে পরিমাণ করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে কিংবা মৃত্যু। তা এত কম সময়ে গেল ১৬ মাসেও দেখেনি চট্টগ্রাম। নগর ছাড়িয়ে মহামারি করোনার বিস্তার পৌঁছেছে গ্রামগঞ্জেও। তাও রেকর্ড দেখিয়েছে এ জুলাই মাসেই।

হিসাব করে দেখা গেছে, জুলাই মাসে যে পরিমাণ করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্তের খবর দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। তা গেল তিন মাসের সমপরিমাণ। মৃত্যুও প্রায় কাছাকাছি। 

স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুসারে, বিদায়ী জুলাই মাসে চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে ২৪ হাজার ১৬২ জন। আর মৃত্যু হয়েছে ২৭২ জনের। অর্থাৎ গড়ে প্রতিদিন রোগীর সন্ধান মিলেছে ৭৭৯ জনের বেশি। যা ঘণ্টা হিসেব করলে প্রতি ঘণ্টাতেই চট্টগ্রামে রোগী পাওয়া গেছে ৩২ জনের বেশি।

মৃত্যুর হিসেবেও দেখা যায়, গড়ে প্রতিদিন ৯ জনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। যদিও ধারণা এ সংখ্যা আরও কয়েকগুণ বেশি। দিনে ৯ জনের মৃত্যু আর ৭৭৯ জন রোগী শনাক্ত হওয়াও গেল ১৬  মাসের মধ্যে রেকর্ড। যদিও সংক্রমণ রোধে জুলাই মাসেই সরকার প্রায় চার সপ্তাহ লকডাউনের মধ্যে রেখেছিল, কিন্তু তবুও সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব হয়নি। বরং চোখ রাঙিয়েছে ভয়ঙ্কর করোনা। 

জুলাই মাসে কেন ভয়ঙ্কর হয়ে উঠলো করোনা?

প্রায় মাসজুড়ে কঠোর বিধিনিষেধ দিয়েও কেনই বা ঠেকানো যায়নি সংক্রমণ? প্রশ্ন থাকলেও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টই এর জন্য দায়ী। যা নিমিষেই ছড়িয়েছে নগর থেকে গ্রামজুড়ে। ফলে বেড়েছে সংক্রমণ আর মৃত্যুর সংখ্যা। যা কমিউনিটি ট্রান্সমিশনও উল্লেখ করছেন কেউ কেউ।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত এপ্রিল মাস থেকেই সংক্রমণ উর্ধ্বমুখী হতে থাকে। অর্থাৎ এপ্রিল মাসে যে পরিমাণ রোগী শনাক্ত হয়েছে তা জুলাইয়ে এসে পাঁচগুণ বেশি। এপ্রিল মাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় ৫ হাজার ২৮৪ জন। আর জুলাইয়ে ২৪ হাজার ১৬২ জন। মৃত্যুর সংখ্যাতো আরও চোখ উল্টো যাওয়ার মতো। এপ্রিলে মাত্র ১৩ জনের মৃত্যু হলেও জুলাইয়ে এ সংখ্যা ২৭২ জন। অর্থাৎ এপ্রিলের তুলনায় জুলাইয়ে ২১ গুণ বেশি মৃত্যু হয়েছে। 

এছাড়া মে মাসে রোগী পাওয়া যায় ৯ হাজার ৬৬২ জন আর মৃত্যু হয় ১৩২ জনের। জুন মাসে ৮ হাজার ৮১৯ করোনা আক্রান্ত রোগীর খোঁজ মিলে। আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারান ১৮১ জনের। সবমিলিয়ে এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৮২ হাজার ৮৮৬ জনে এসে দাঁড়িয়েছে। আর মৃত্যুর সংখ্যা ৯৭৩ জনে। 

জুলাই নিয়ে কি ভাবছেন স্বাস্থ্য বিভাগ? 

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি সিভয়েসকে বলেন, যদিও শঙ্কা ছিল তবে, কল্পনাও করা যায়নি জুলাই মাসে এত রোগী পাওয়া যাবে। কিংবা মৃত্যু হবে। এতে ধারণা করাই যায়, নিরবে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়েছে। এরপরও মানুষ যদি সচেতন না হয়, তাহলে সামনে আরও মারাত্মক খেসারত দিতে হবে। 

জুলাইয়ের হিসেবে উদ্বেগ প্রকাশ করে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন) ও কোভিড ফোকাল পার্সন ডা. আবদুর রব বলেন, সামাজিক সংক্রমণই এর জন্য দায়ী। শুরু থেকেই বারবার সতর্ক করার পরও কেউই সচেতন হয়নি। শেষ পর্যন্ত ফল দিয়ে দাঁড়ালো রেকর্ড সংক্রমণ। অন্যদিকে হাসপাতালগুলোতে মানুষের চাপ আর আহাজারী। মানুষ সচেতন না হলে ভবিষ্যতেও কিছুই করার থাকবে না।

এ পরিস্থিতিতে করণীয় কী? 

পূর্বে থেকেই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের শঙ্কা থাকলেও কর্নপাত না করায় এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে বলে মত সংশ্লিষ্টদের। তাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ও সংক্রমণ ঠেকাতে টিকা কার্যক্রম বাড়ানোর পাশাপাশি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণের তাগিদ সংশ্লিষ্টদের। 

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া বলেন, স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত ও মাস্ক ব্যবহারের বিকল্প কিছুই নেই। তাছাড়া সরকার ঘোষিত নির্দেশনা মানলেও সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আশা সম্ভব হতো। কিন্তু আমরা সকলেই উদাসীন। তাছাড়া চলমান লকডাউনেও কর্তৃপক্ষ আরও বেশি কঠোর হওয়ার দরকার ছিল। যা অতীতেই বলে আসা হয়েছিল। প্রশাসনেরও ভূমিকায় দুর্বল। কঠোর না হলে সংক্রমণ রোধ করা যাবে না। 

স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান বলেন, দ্রুতই সকল জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় আনতে হবে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, মহামারী রোধে একটি দেশের ৭০ শতাংশের বেশি মানুষকে টিকা দিতে পারলে, সংক্রমণ সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে। তাহলেই ধীরে ধীরে এটি কমতে থাকবে। তাছাড়া স্বাস্থ্যবিধি আর মাস্ক পড়া নিশ্চিত না করা গেলেও সংক্রমণ ঠেকানো কঠিন হয়ে পড়বে। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের বিকল্প নেই। মাস্ক পরতে হবে, সামাজিক দূরত্ব মানতে হবে, জনসমাগম করা যাবে না। এগুলো ঠিকমতো অনুসরণ করলেই কিন্তু করোনার সংক্রমণ ব্যাপকভাবে প্রতিরোধ করা সক্ষম। তাই এ বিষয়ে অবহেলা করা যাবে না।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়