Cvoice24.com

সক্ষমতা থাকলেও করোনা চিকিৎসায় অনাগ্রহী ৪ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

আতীয়া নওশীন

প্রকাশিত: ১৮:০১, ১ আগস্ট ২০২১
সক্ষমতা থাকলেও করোনা চিকিৎসায় অনাগ্রহী ৪ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

করোনা মহামারি শুরুর পর থেকেই কোভিড রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল। সেবা দিতে গিয়ে হাসপাতালটির চিকিৎসক নার্সসহ অসংখ্য কর্মী করোনায় আক্রান্তও হয়েছেন। মৃত্যুর খাতাতেও প্রথম নাম লিখিয়েছিলেন এ হাসপাতালেরই চিকিৎসক। নিজের নবজাতককে বাসায় রেখে সেবা দিতে এগিয়ে এসেছেন এ হাসপাতালেরই এক নারী চিকিৎসক। যা চট্টগ্রাম ছাড়িয়ে দেশজুড়েই আলোচিত ঘটনা। 

সম্প্রতি চট্টগ্রামে সাধারণ শয্যা ও আইসিইউ শয্যার সংকট দেখা দেয়ায় হাসপাতালটি দিনে দিনেই তা বাড়িয়েছে। বেসরকারি পর্যায়ের সবচেয়ে বেশি আইসিইউ সেবাও এতদিন দিয়েছিলো এ হাসপাতাল। শয্যার দিক থেকেও এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ রোগী ভর্তি আছে হাসপাতালটিতেই। চিকিৎসক, নার্স কিংবা কর্মকর্তা বা কর্মীরা করোনার সাথে লড়ে মৃত্যু আক্রান্ত সব কিছু হলেও বর্তমানে হাসপাতালটির কর্তৃপক্ষ বলছে, যদি পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও নার্স সরবরাহ করা যায়, তাহলে আরও শয্যা বাড়াতে প্রস্তুত আছে তারা। 

হাসপাতালের কোভিড ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম আজাদ বলেন, আমাদের প্রস্তুতি আছে। শয্যা আমরা দ্বিগুণ করতে পারি। কিন্তু আমাদের জনবল নেই। জনবল হলেই আমরা কোভিড সেবা দিতে চাই।

অন্যদিকে দেরিতে হলেও সেবা দেয়া শুরু করেছে শমসের পাড়াস্থ ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালও। ইতোমধ্যে হাসপাতালটিতে ৯০ শয্যার কোভিড ওয়ার্ড ও দুইটি আইসিইউ এবং এইচডিইউ সেবা দেয়া হচ্ছে। গেল এক সপ্তাহ ধরে হাসপাতালটিতে শয্যা খালি নেই। 

হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা আব্দুর রাজ্জাক খান বলেন, আরও দুটি আইসিইউ শয্যা বসানোর কাজ করছি। বাড়ানো হবে এইচডিইউ শয্যাও।  

চট্টগ্রামের ৬ বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালগুলোর মধ্যে এই দুই হাসপাতাল যখন 
কভিড চিকিৎসায় আপ্রাণ চেষ্টা করছে। সেখানে একদম ভিন্ন চিত্র অন্য চার মেডিকেল কলেজ ও  হাসপাতালের। এই চারটি হাসপাতালে প্রায় এক হাজারের বেশি শয্যা থাকলেও কোভিড রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে মাত্র ৬১ জনকে। যদিও সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি এ সংখ্যা দ্বিগুণ। তবুও হিসেবে দেখা যায়, ৮৭ শতাংশ বা ৮ গুণের বেশি শয্যা খালি থাকছে হাসপাতালটিতে। 

স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুধুমাত্র চট্টগ্রামের বেসরকারি ৬টি হাসপাতাল যদি সঠিকভাবে কোভিড রোগীদের সেবা দেয়, তাহলে শয্যাতো দূরের কথা, সেবা নিয়েও কোন সংকট তৈরি হবে না। কিন্তু বাস্তবে দুইটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অতি আন্তরিকতা থাকলেও বাকি চারটি নিয়েই মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ চারটি হাসপাতালে কাগজে কলমে আর বাস্তবে মিল খুঁজে পাওয়াই এখন দুষ্কর। এমন অবস্থায় আলোচ্য চার হাসপাতালকে আরও বেশি আন্তরিক হওয়ার পরামর্শ সংশ্লিষ্টদের। 

যদিও গত সপ্তাহে সকল বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে বৈঠক করে চট্টগ্রামের প্রশাসন সাত দিনের ভেতর শয্যাসহ কভিড চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে বললেও সাউদার্ন, মেরিন সিটি, ইউএসটিসি ও বিজিসি ট্রাস্ট হাসপাতাল যেন তা আমলেই নিচ্ছেনা। 

তথ্য অনুসারে, গতবছরে করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর ফয়েস’লেকের বঙ্গবন্ধু মেমরিয়াল হাসপাল বা ইউএসটিসিতে ১০০ শয্যার কোভিড ডেডিকেটেডওয়ার্ড প্রস্তুত করা হয়। যা স্বাস্থ্য ও প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মর্কারা ঢাকঢোল বাজিয়ে উদ্বোধনও করেন। কিন্তু বর্তমানে সেই হাসপাতালে ৬ আইসিইউ  ও ২২টি এইচডিইউ নিয়ে মোট শয্যা আছে মাত্র ৫৮টি। অথচ সক্ষমতা থাকার পরও শয্যা বাড়ানো হয়নি তাতে। 

স্বাস্থ্য বিভাগের প্রতিবেদনে হাসপাতালটিতে রোববার (১ আগস্ট) রোগী ভর্তির তথ্য দেয়া আছে, মাত্র ২৫ জনের। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হাসপাতালটিতে এদিনে সর্বসাকুল্যে রোগী ভর্তি আছেন মাত্র ৩৮ জন। সম্প্রতি ইউএসটিসি হাসপাতালে শয্যা কমিয়ে আনা ও রোগী ভর্তির ব্যাপারে আন্তরিক না হওয়ার বিষয়ে খোদ স্বাস্থ্য বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যেই আলোচনা ছিল। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য বিভাগের উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, আমাদের ধারণা ছিল অন্তত ইউএসটিসি হাসপাতালে পর্যাপ্ত রোগীদের  ভর্তি করানো যাবে। কিন্তু তারা হঠাৎ শয্যা কমিয়ে ফেলেছে। তাছাড়া রোগীর চাপ নিতেও রাজি হচ্ছে না। তবুও তাদের এ বিষয়ে সহযোগিতা চাওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি রোগী ভর্তি কিছুটা তারা বাড়িয়েছে। আমরা আশারাখি, এ সংকট মুহুর্তে তারা আরও আন্তরিক হবেন। 

ইউএসটিসি হাসপাতালের পরিচালক ডা. কামরুল হাসান বলেন, ‘এক বছর আগে ১০০ শয্যা ছিল। যখন রোগী কমে যায়, তখনই আমরা তা কমিয়ে ফেলেছি। বর্তমানে আমাদের ৫৮ শয্যা আছে। আমরাতো সেবা দিয়ে যাচ্ছি। যদি দরকার হয়, প্রয়োজনে বাড়ানো হবে। কিন্তু কথা হচ্ছে, বাড়ালেতো আমাদের অক্সিজেন সাপোর্ট লাগবে। সেটার যোগান দিতে এখনই হিমশিম খেতে হচ্ছে। তা যদি সরবরাহ ঠিক থাকে, আমরা বাড়াতে পারব। তাতে সমস্যা নেই।’

রোগী ভর্তি কম হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কাগজে হয়তো ভুল তথ্য দিচ্ছে। কিন্তু বর্তমানে আমাদের ৩৮টা রোগী ভর্তি রয়েছে। সেটাতো তারাই জানেন।’

অন্যদিকে সাউর্দান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. আবু মনসুর মোহাম্মদ দিদারুল আলম বলেন, আমাদের ৩০ শয্যার মধ্যে ২০টি রেডি আছে। ইতোমধ্যে ১১ জন রোগী ভর্তিও আছেন। ২টা আইসিইউ ও ৪টা এইচডিইউ শয্যা বাড়ানো হয়েছে। গতকালও স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিদর্শনে এসেছেন। তারা দেখেছেন। 

২৫০ শয্যার ধারণ ক্ষমতা হাসপাতালটিতে স্বাস্থ্য বিভাগের প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায়, রোববার (১ আগস্ট) হাসপাতালে রোগী ভর্তি আছে মাত্র ৭ জন। আইসিইউ ও এইচডিইউ শয্যা উল্লেখই নেই। এ হাসপাতালের মতো আরও করুণ চিত্র দক্ষিণ চট্টগ্রামে অবস্থিত বিজিসি ট্রাস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ৩০০ শয্যার ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন হাসপাতালটিতে রোগী ভর্তি রয়েছেন মাত্র ৪ জন।

একই অবস্থা নগরের বায়েজিদের মেরিন সিটি হাসপাতালের। স্বাস্থ্য বিভাগের ‘ভরসাস্থল’ এ হাসপাতালে শয্যা রয়েছে ২৫০। অথচ এ হাসপাতালেই রোগী ভর্তি আছে মাত্র সর্বসাকুল্যে ২৫ জন।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর বলেন, শয্যা সংকট থাকায় গেল মাসে ৬ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিঠি পাঠানো হয়েছিল। সকলকে অনুরোধ করা হয়েছিল, যেন শয্যা বাড়ানো হয়। ইতোমধ্যে কমবেশ সব কয়টি হাসপাতালেই বাড়িয়েছে। তবে ২/৩টি মেডিকেল কলেজে রোগী ভর্তির পরিমাণ কম দেখা যাচ্ছে। হয়তো প্রচার প্রচারনা নেই, সেজন্য রোগী কম হতে পারে।

রোগীদের শয্যার বাইরে রাখা যাবে না হুঁশিয়ারি দিয়ে স্বাস্থ্য পরিচালক আরও বলেন, একটি রোগীও শয্যার বাইরে থাকবে না। যে হাসপাতাল বা মেডিকেল কলেজ রোগী ভর্তি নিবে না কিংবা অনীহা দেখাবে, এমন অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য হব। আমরা চাই, মহামারির এই সময়ে সকলেই যেন সেবা পায়।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়