Cvoice24.com

চট্টগ্রামে লাখ পেরিয়েছে করোনা রোগী

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৩:৫১, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২১
চট্টগ্রামে লাখ পেরিয়েছে করোনা রোগী

ছবি: সিভয়েস

২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম যখন ‘অজানা’ ক্ষুদ্র এক ভাইরাস আক্রমণ করে তখন মানুষ ঘুণাক্ষরেও চিন্তা করতে পারেনি সেই ভাইরাসটি পুরো পৃথিবীকে লণ্ডভন্ড করে দেবে। পৃথিবীর মানচিত্রের ছোট কোণে অবস্থান করা চট্টগ্রামেও এর ঢেউ এসে লেগেছে। সাংহাই নদীর ঢেউ যেন লাগে কর্ণফুলীর তীরেও।

তিন মাসের মাথায় ২০২০ সালের ৩ এপ্রিল চট্টগ্রাম নগরের দামপাড়ার ৬৭ বছর বয়সী এক ব্যক্তির শরীরে প্রথম করোনা ভাইরাস ধরা পড়ে। ৫ এপ্রিল ওই ব্যক্তির ২৫ বছর বয়সী ছেলের শরীরেও করোনা ভাইরাস শনাক্ত করা হয়। এভাবেই পুরো চট্টগ্রামজুড়ে করোনা ভাইরাসের কমিউনিটি সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। যেটা প্রথম মাসে ৭২ জনের সীমাবদ্ধ থাকলেও বাড়তে বাড়তে চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা গত ১৭ মাসে লাখ পেরিয়ে গেছে। 

সর্বশেষ শনিবার (৪ সেপ্টেম্বর) ১২০ জন আক্রান্তের মধ্য দিয়ে চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা লাখের ঘর অতিক্রম করেছে। নতুন করে ১২০ জনসহ চট্টগ্রামে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪৫ জনে। একই দিন ৫ জনের মৃত্যুও হয়। এনিয়ে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৪৪ জনে। 

শনিবার চট্টগ্রামের ১০টি ল্যাবে ১ হাজার ১৫ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১২০ জনের করোনা শনাক্ত হয়। এরমধ্যে নগরের ৫৮ ও উপজেলার ৬২ জন। মৃত ৫ জনই বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা। 

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের হিসাব মতে, চট্টগ্রামে ২০২০ সালের ৩ এপ্রিল থেকে ২০২১ সালের ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা মোট ১ লাখ ৪৫ জন। এর মধ্যে নগরে ৭২ হাজার ৬৪৮ জন আর উপজেলায় ২৭ হাজার ৩৯৭ জন। 

তবে আক্রান্তের হার নগর ও উপজেলার মধ্যে বিস্তর তফাৎ হলেও মৃত্যুর হিসাবে তা সমানে সমানে। মোট ১ হাজার ২৪৪ জনের মধ্যে নগরে ৬৯৩ জন আর উপজেলায় ৫৫১ জন। এর কারণ হিসেবে চিকিৎসকরা বলেছেন, গ্রামের রোগীরা আক্রান্ত হওয়ার পরও দেরিতে হাসপাতালে আসা ও দেরিতে চিকিৎসা শুরু করায় তাদের মৃত্যুর হার বেশি। 

গত বছরের ৩ এপ্রিল দামপাড়ায় শনাক্তের মাধ্যমে সংক্রমণের যে সূচনা চট্টগ্রামে চালু হয় তা ওই বছরের শেষ ৯ মাসে এক লাখের মধ্যে প্রায় ৩০ হাজার আক্রান্ত হয়েছিল। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এসেই চট্টগ্রামে ব্যাপক প্রাণহানির পাশাপাশি সংক্রমণও আশঙ্কাজনক হারে বাড়ে। যেখানে গেল বছরের ৯ মাসে ৩০ হাজার করোনায় আক্রান্ত হয় সেখানে চলতি বছরের গত ৮ মাসেই প্রায় ৭০ হাজারের কাছাকাছি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়। অর্থাৎ মোট এক লাখ করোনা আক্রান্ত রোগীর মধ্যে ৩০ শতাংশ ২০২০ সালে হলেও ২০২১ সালে আক্রান্তের সংখ্যা তা উদ্বেগজনকহারে বেড়েছে, যার পরিমাণ প্রায় ৭০ শতাংশ।

চীন থেকে আসা ভাইরাসে চট্টগ্রামের লোকজন সংক্রমিত হলেও সর্বপ্রথম আক্রান্তদের জিনোম সিকোয়েন্স বিশ্লেষণ করে গবেষকরা জানিয়েছিলেন, চট্টগ্রামে প্রথম আক্রমণকারী ভাইরাসটি আলফা তথা আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট। এরপর বিটা তথা যুক্তরাজ্যের ভেরিয়েন্ট এবং পরবর্তীতে ডেল্টা তথা ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হয়েছে। 

তবে প্রথম দু’টি ভ্যারিয়েন্টে তেমন রোগী আক্রান্ত ও মারা না গেলেও গত রোজার ঈদের পর থেকেই চট্টগ্রামের করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছে, চট্টগ্রামের সরকারি-বেসরকারি কোন হাসপাতালেই আইসিইউ দূর জেনারেল কোভিড বেডের সিটও খালি নেই। তবে স্বস্তির খবর হচ্ছে, বর্তমানে করোনার সংক্রমণ কমে এসেছে। হাসপাতালগুলোতেও আইসিইউ ও সিট খালি রয়েছে। নমুনা বিবেচনায় শনাক্তের হার নিচে নেমে এসেছে। গত তিন মাস আগেও যেখানে শনাক্তের হার ৩৫ শতাংশের বেশি ছিল সেখানে সর্বশেষ শনিবারের চট্টগ্রামে শনাক্তের হার মাত্র ১১ দশমিক ৮২ শতাংশ। 

চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর বলেন, ‘ চট্টগ্রামে সংক্রমণ আগের চেয়ে অর্ধেকের বেশি কমেছে। যার প্রভাব পড়েছে হাসপাতালগুলোতেও। রোগীও ধীরে ধীরে কমে আসছে। এখন সংক্রমণ কমার ধারাবাহিকতা রক্ষা করাই আসল কাজ।’ 

সংক্রমণ ও মৃত্যু কমলেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুযায়ী তা এখনও প্রায় তিনগুণ বেশি। এমন বাস্তবতায় সাধারণ মানুষকে আরও বেশি সতর্ক থাকার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়