বিশ্ব হার্ট দিবস আজ
সিভয়েস২৪ ডেস্ক
আজ ২৯ সেপ্টেম্বর, বিশ্ব হার্ট দিবস। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘ইয়েস, ইউজ হার্ট ফর অ্যাকশন’ অর্থাৎ ‘হৃদয় দিয়ে হৃদরোগ প্রতিরোধের জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করতে হবে’।
দিবসটি উপলক্ষে সরকারি ও বেসরকারিভাবে আলোচনা সভা, র্যালি ও বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালিত হবে।
অসংক্রামক রোগগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো হৃদরোগ। চিকিৎসাশাস্ত্রের পরিভাষায় হৃদরোগকে মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন বলা হয়। হৃদরোগের কারণ হিসাবে চিকিৎসকরা বলে থাকেন সচল থাকতে গোটা শরীরের মতো হৃদযন্ত্রেরও অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়। আর করোনারি ধমনী হৃদযন্ত্রে ওই অক্সিজেন সরবরাহ করে। কিন্তু অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, অনিয়মিত জীবনযাপনে করোনারি ধমনীর ভিতরের দেওয়ালে ফ্যাট জমে যায়। এর ফলে সময়ের সঙ্গে অক্সিজেন সরবরাহ বাধাপ্রাপ্ত হয়। ফুসফুসে রক্তের সরবরাহ বাধাপ্রাপ্ত হয়। ফলে কার্ডিয়াক ইস্কেমিয়ার পরিস্থতি তৈরি হয়, যাতে হৃদযন্ত্রে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয়। বেশ কিছু সময় পর্যন্ত বুঝতে না পারলে, বা চিকিৎসায় দেরি হলে হৃদযন্ত্রের কোষগুলির একে একে মৃত্যু ঘটে। তাতেই হৃদরোগে আক্রান্ত হন মানুষ।
হৃদরোগ চিকিৎসায় ঢাকার বাইরে সরকারিভাবে শুধু একটি মেডিকেল কলেজ এবং বেসরকারিভাবে চারটি হাসপাতালে কার্ডিয়াক সার্জারির ব্যবস্থা রয়েছে। রোগটির উন্নত চিকিৎসায় ৮০ শতাংশ রোগীর ভরসা রাজধানীর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল। ফলে সঠিক সময়ে ব্যয়বহুল এই চিকিৎসা না পাওয়াসহ নানা কারণে প্রতিবছর পৌনে তিন লাখ (দুই লাখ ৭৩ হাজার) মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে হৃদরোগের বিশ্বমানের সেবা রয়েছে। কিন্তু সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠেছে ঢাকাকেন্দ্রিক। যার সামর্থ্য আছে, সে চিকিৎসা নিতে পারছে, আর যার সামর্থ্য নেই, সে নিতে পারছে না। দেশে যে চিকিৎসা আছে, সেখানে এনজিওগ্রাম, রিং পরানো, বাইপাস সার্জারি—সবই শহরকেন্দ্রিক।
প্রত্যন্ত অঞ্চলে সেগুলোর সুযোগ-সুবিধা নেই। এমনকি সারা দেশে ক্যাথল্যাবের ৭১ ও সিসিইউর ৫৭ শতাংশই ঢাকায়। কাগজে-কলমে ঢাকাসহ সাত জেলায় পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার কথা বলা হলেও ঢাকা বাদে বাকি ছয় জেলায় হৃদরোগ চিকিৎসা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্রপাতি প্রায় সময় নষ্ট থাকার কারণে রোগীরা চিকিৎসা বঞ্চিত হচ্ছে। সারা দেশে হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীর অস্বাভাবিক চাপ বাড়ছে রাজধানীর সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে। চিকিৎসাও ব্যয়বহুল।
জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিউট হাসপাতালের পরিসংখ্যান বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালে ১ হাজার ২৫০ শয্যার হাসপাতালটির জরুরি বিভাগে ৯৫ হাজার ২৪ জন ও বহির্বিভাগে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৭৯৬ রোগী চিকিৎসা নেন। ২০২১ সালে এই সংখ্যা বেড়ে জরুরি বিভাগে ১ লাখ ১৫ হাজার একজন এবং বহির্বিভাগে ১ লাখ ৫০ হাজার ৪৯৯ জন। পরের বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে রোগী আরও বেড়ে জরুরি বিভাগে ১ লাখ ৩১ হাজার ৯০৩ জন এবং বহির্বিভাগে ১ লাখ ৮৭ হাজার ৬৪৮ জন।
গত বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত জরুরি বিভাগে ৯৬ হাজার ৯৭ জন, বহির্বিভাগে ১ লাখ ৩২ হাজার ৪১৩ চিকিৎসা নিয়েছেন। এছাড়া এসময় অন্তঃবিভাগে ভর্তি হয়েছেন ৬৩ হাজার ৬১১ জন ও চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে ৫১১ জন হৃদরোগী।