Cvoice24.com

বিশ্বকাপ থেকে ইরানের বিদায়ে উল্লাস, যুবককে গুলি করে হত্যা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:৩১, ১ ডিসেম্বর ২০২২
বিশ্বকাপ থেকে ইরানের বিদায়ে উল্লাস, যুবককে গুলি করে হত্যা

চলমান কাতার বিশ্বকাপ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হেরে বিদায় নিয়েছে ইরান। আর নিজ দেশের এমন পরাজয়ের পর তা উল্লাস করে উদযাপন করেছে দেশটির সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীরা। সেখানেই নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে মেহরান সামাক (২৭) নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। এর আগে নিজেদের সর্বশেষ ম্যাচে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে হারার পর বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়েছিল ইরান।

ইরানের জনগণের বিশ্বাস কাতারে যে ফুটবল দলটি বিশ্বকাপ খেলতে গেছে তারা ইসলামি প্রজাতন্ত্রের প্রতিনিধিত্ব করে। এ কারণে জাতীয় ফুটবল দলকে সমর্থন দিতে অস্বীকার করে তারা। বিশ্বকাপের আগেই আসর থেকে ইরানকে বাদ দিতে দেশটির জনগণ ফিফার কাছে চিঠি লিখে। 

গত মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের কাছে পরাজয়ের পর ইরানের রাজধানী তেহরানসহ কয়েকটি শহরে দেশটির জনগণকে রাস্তায় নেমে নাচতে এবং গাড়ির হর্ন বাজিয়ে ফুটবল দলের হার উদযাপন করতে দেখা গেছে। 

এ হার উদযাপনের সময় উত্তর ইরানে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে একজন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। দেশটির হিউম্যান রাইটস বলছে, মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) রাতে ফুটবল দলের পরাজয় উদযাপনের জন্য কাস্পিয়ান সাগরের শহর বন্দর আনজালিতে নিজের গাড়ির হর্ন বাজাচ্ছিলেন ২৭ বছরের মেহরান সামাক। এ সময় নিরাপত্তা বাহিনী তার মাথায় গুলি করে। এতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় মেহরানের।

বিবিসি ফার্সি বুধবার (৩০ নভেম্বর) সকালে সুনাকের দাফনের একটি ভিডিও পায়। এ সময় সেখানে উপস্থিত জনতাকে বলতে শোনা যায়- ‘তুমি নোংরা, তুমি অনৈতিক, আমি একজন স্বাধীন নারী’। ইরানের বিক্ষোভে প্রায়শই ব্যবহৃত একটি স্লোগান এটি।

বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে ইরানের ফুটবলাররা জাতীয় সঙ্গীত গাননি। ওই ম্যাচে ইংল্যান্ডের কাছে ৬-২ ব্যবধানে হারে ইরান। তবে দ্বিতীয় ম্যাচে ওয়েলসের বিপক্ষে খেলায় তারা জাতীয় সংগীত গেয়েছিল। সে ম্যাচে ২-০ গোলে জয় পায় ইরান। আর এতে অনেক বিক্ষোভকারী এটাকে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখছেন। যদিও এমন খবর ছিল যে দলটি ইরানের কর্তৃপক্ষের তীব্র চাপের মধ্যে ছিল। 

উল্লেখ্য, সেপ্টেম্বর মাসে হিজাব না পরায় ইরানের পুলিশ মাহসা আমিনিকে গ্রেপ্তার করে। পরে পুলিশি হেফাজতে তার মৃত্যু হয়। পুলিশের বিরুদ্ধে মাহসাকে মেরে ফেলার অভিযোগ উঠে। এরপর শুরু হয় বিক্ষোভ। কঠোরভাবে সেই বিক্ষোভ দমনের চেষ্টা করে পুলিশ। এতে করে পুরো দেশে সে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভ দমন করতে গিয়ে এখনও পর্যন্ত নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে শিশুসহ ৩০০-র বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর।নৈতিকতা পুলিশ ২২ বছর বয়সী কুর্দি ইরানি তরুণী মাহসা আমিনিকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর পুলিশি হেফাজত থেকে কোমায় নেওয়া হয় এই তরুণীকে। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেদিনই মারা যায় মাহসা আমিনি।

সংবাদমাধ্যম বলছে, মাহসা আমিনিকে তেহরানে নৈতিকতা পুলিশ তার চুল সঠিকভাবে না ঢেকে রাখার অভিযোগে আটক করেছিল। ২২ বছর বয়সী ইরানি কুর্দি এই তরুণী গ্রেপ্তার হওয়ার তিন দিন পর ১৬ সেপ্টেম্বর পুলিশ হেফাজতে মারা যায়। তার মৃত্যুর পর থেকেই ইরানজুড়ে ব্যাপক প্রতিবাদ-বিক্ষোভ চলছে।

ইরানের কর্মকর্তারা দাবি করছেন, ওই তরুণী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন, তবে ভুক্তভোগীর পরিবার এই বিষয়ে বিরোধিতা করে বলেছে, তাকে নৈতিকতা পুলিশ মারধর করেছে।

নরওয়েভিত্তিক মানবাধিকার গ্রুপ ইরান হিউম্যান রাইটস বলেছে, ইরানে এই বিক্ষোভ শুরুর পর থেকে কমপক্ষে ৪৪৮ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ৬০ জন শিশু।

তবে ইরানি জনগণের এই বিক্ষোভকে দেশটির কর্তৃপক্ষ বিদেশি-সমর্থিত ‘দাঙ্গা’ হিসাবে আখ্যা দিয়ে দমন-পীড়ন চালাচ্ছে। বিক্ষোভ দমাতে আরও ১৮ হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলেও জানা গেছে।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়