Cvoice24.com

৩৪ বছরেও বাড়ি ফিরতে পারেনি রামগড়ের পাতাছড়ার বাসিন্দারা

রামগড় প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৬:৫৯, ১৩ জুলাই ২০২১
৩৪ বছরেও বাড়ি ফিরতে পারেনি রামগড়ের পাতাছড়ার বাসিন্দারা

১৯৮৬ সালের ১৩ জুলাই। সেদিনের বিভীষিকাময় স্মৃতি এখনও ভুলতে পারেনি খাগড়াছড়ির রামগড়ের পাতাছড়া ডাকবাংলা পাড়ার বাসিন্দারা। তৎকালীন শান্তিবাহিনীর একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসীর এলোপাতাড়ি গুলি ও অগ্নিসংযোগে সেদিন নিহত হয়েছিল ৫ শিশুসহ ৭ জন। কয়েকদিন পর ঘটনাস্থলের খুব কাছ থেকে আরও একজনের মরদেহ উদ্ধার করে স্থানীয়রা। একই বছরের ১৩ আগস্ট আরও এক নিরহ গ্রামবাসীকে গুম করে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। প্রথমদিনের ঘটনায় নিহতদের গণকবরে ঠাঁই হলেও পরবর্তীতে নিহতদের কপালে তাও জুটেনি।

নিরীহ গ্রামবাসীর ওপর পরপর এমন হামলায় ভয়ে বাড়ি ফেলে পালিয়েছিল ২ শতাধিক পরিবার। কয়েক বছর পর তারা নিজেদের বাস্তুভিটায় ফেরার চেষ্টা করলেও তৎকালীন পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রশাসন তাদের ফিরতে দেয়নি। এরপর ৩৪ বছরেও আর তাদের ফেরা হয়নি।

গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্শী, নিহতদের স্বজন ও স্থানীয়দের দাবি, ১৯৮৬ সালের ১৩ জুলাই নিহতদের গণকবর সংরক্ষণের পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ববর্তী সময়ে তিন পার্বত্য জেলায় সংগঠিত বিভিন্ন গণহত্যার নথিপত্রে রামগড়ের পাতাছড়া গণহত্যার ঘটনা প্রকাশ করা। এছাড়া বাস্তুভিটাহীন পরিবার গুলোকে নিজ ভূমি ফেরত পাঠানোসহ প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণসহ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা।

মো. নাসির উদ্দিন নামে এক ক্ষতিগ্রস্ত বলেন, ঘটনার দিন মাগরিবের কিছু সময় আগে হঠাৎ করে একদল অস্ত্রধারী শান্তিবাহিনীর সদস্য বাড়িতে ঢুকে পড়ে। কিছু বুঝে উঠার আগে এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁড়ে। এ সময় গ্রামে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় কেউ কাউকে উদ্ধারে এগিয়ে আসতে পারেনি। সন্ত্রাসীরা গুলি করতে করতে বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। আমার ছোট ভাই আবুল কাশেমকে আগুনে নিক্ষেপ করে। এ সময় আমাকে সঙ্গে নিয়ে মা বাড়ি থেকে পালানোর চেষ্টা করে। মায়ের কোলে একবছর বয়সী ছোট বোন আনোয়ারা থাকলেও ভুলে আরেক বোন মনোয়ারাকে বাড়ির ভেতর রেখে আসেন। মনোয়ারাকে আনতে মা বাড়ির ভেতর গেলে সন্ত্রাসীরা মাকে গুলি করে এবং ছোট বোন আনোয়ারাকে মায়ের কুল থেকে কেড়ে নিয়ে আগুনে নিক্ষেপ করে। আর মনোয়ারাকে মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে খুন করে। পরেরদিন আইনশৃঙ্খলাবাহিনীসহ গিয়ে মরদেহগুলো উদ্ধার করে রাস্তার পাশে গণকবরে দাফন করি।

ঘটনার আরেক প্রত্যক্ষদর্শী নজরুল ইসলাম বলেন, ১৩ জুলাই সকালে পাতাছড়ার ডাকবাংলা গ্রামে বাইরে থেকে কিছু অপরিচিত লোকজন আসে। স্থানীয় এক পাহাড়ির বাড়িতে তারা কাজে এসেছেন বলে জানান। আসরের পরপর যখন হামলা শুরু হয় তখন তাদেরকেও সন্ত্রাসীদের সাথে দেখার কথা জানান নজরুল। বাড়িতে ঢুকে মা ছবুরী খাতুনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে জবাই করে এবং বোন রেহানা আক্তারকে আগুনে নিক্ষেপ করে হত্যার কথা ভুলতে পারেনি এখনও।

রামগড় পাতাছড়ার বাসিন্দা ও তৎকালীন আনসার সদস্য মো. মমতাজ মিয়া জানান, ৩৪ বছর অতিবাহিত হলেও নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন সময়ে সংগঠিত গণহত্যার কোন নথিতে উল্লেখ নেই। স্বজন হারানোর কষ্ট বুকে চেপে জীবন রক্ষায় সেদিন কোন মতে একটি কবরে স্বজনদের রেখে চলে যেতে হয়েছিল নিরীহ গ্রামবাসীদের।

রামগড় পাতাছড়া ডাকবাংলা পাড়া গণহত্যায় নিহতরা হলেন, আবুল খায়েরের স্ত্রী হালিমা বেগম(৫৫), মেয়ে মনোয়ারা বেগম(৬), ছেলে আবুল কাশেম(৫), আনোয়ারা বেগম(১), ছায়েদুল হকের স্ত্রী ছবুরী খাতুন ও মেয়ে রেহানা রেহানা আক্তার। লাল মিয়ার মেয়ে মফিজা খাতুন। ১৯৮৬ সালের ১৩ জুলাই নিহতদের সবাইকে পাতাছড়া এলাকায় গণকবর দেওয়া হয়। পরেরদিন ১৪ জুলাই মো. সাত্তার নামে একজনের গলাকেটে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। একই বছরের ১৩ আগস্ট মো. আদম ছফি উল্লাহ নামে একজনকে ধরে নিয়ে গিয়ে গুম করা হয়।

আজ মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) বাদ ফজর পাতাছড়া মসজিদ প্রঙ্গনে নিহতদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করে স্বজনেরা। 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়