Cvoice24.com

কেঁচোতে সফলতার মুখ দেখছেন রামগড়ের কাজী কালাম

করিম শাহ, রামগড় (খাগড়াছড়ি)

প্রকাশিত: ১৬:২৪, ২৬ অক্টোবর ২০২১
কেঁচোতে সফলতার মুখ দেখছেন রামগড়ের কাজী কালাম

কেঁচো সার বা জৈব সার উৎপাদন করে সফলতার মুখ দেখছেন পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির রামগড়ের কাজী কালাম। প্রকৃতিবান্ধব জৈব সারের আলোয় আলোকিত হবে কৃষি বিভাগ এমনটাই চান তিনি। নিজ জমিতে কেঁচো সার ব্যবহার করে কৃষি খাতকে আরো সম্প্রসারিত ও নিজেকে আর্থিকভাবে সচ্ছল করতে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ প্রতিনিধির সঙ্গে আলাপকালে এমনটাই জানিয়েছেন কৃষি উদ্যোক্তা কাজী কালাম। 

তিনি বলেন, তার মতো জৈব সার উৎপাদনকারীদের সংখ্যাও এখন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষি বিভাগের আরো উদ্যেগ ও ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা করা হলে তৈরি হবে নতুন নতুন উদ্যোক্তা ফলে প্রান্তিক পর্যায়ে কেঁচো ও গোবর দিয়ে উৎপাদিত জৈব সার জমিতে প্রয়োগে লাভবান হবে কৃষক ও সমৃদ্ধ হবে স্থানীয় কৃষিখাত। এ জৈব সার ব্যবহারে জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি শাক-সবজি, ফলমূলের ফলনও ভালো হচ্ছে।

টিভিতে কেঁচো সার বা ভার্মিকম্পোস্ট সার উৎপাদন চিত্র দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে ২০১৮ সালের জুন মাসে কেঁচো সার উৎপাদন শুরু করেন কাজী কালাম। তিনি রামগড় পৌরসভার কালাডেবা নিজ বাড়ির আঙ্গীনায় পুকুর পাড়ে প্রায় ৭০টি রিং বসিয়ে বাণিজ্যিকভাবে এখন কেঁচোসার উৎপাদন করছেন।

উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, কৃষি অফিসের সহযোগিতায় তার কাছ থেকে পরামর্শ ও সহযোগিতা নিয়ে রামগড় উপজেলায় প্রায় ৩০ জন কৃষক এই ভার্মিকম্পোস্ট বা কেঁচো সার উৎপাদন করছেন।

কাজী কালাম প্রথমদিকে অল্প পরিমাণ সার উৎপাদন শুরু করলেও তার কর্মকাণ্ড দেখে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তা তাকে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে পরামর্শ ও সহযোগিতা দিলে তিনি নিজ বাড়িতে ভার্মিকম্পোস্টের প্রদর্শনী চালু করেন। বর্তমান এখান থেকে সবজি চাষি, নার্সারি ও বাগান মালিকরা প্রতি কেজি ১৫-১৬ টাকা দরে জৈব সার নিয়ে যাচ্ছে এবং কেঁচো ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০  টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন। 

কাজী কালাম জানান, বর্তমানে তার উৎপাদিত কেঁচো সার স্থানীয় কৃষি বিভাগ, বাগান মালিকসহ পার্শ্ববর্তী ফটিকছড়ি উপজেলাতে সরবরাহ করছেন। প্রত্যেক মাসে তার উৎপাদিত কেঁচো সারের পরিমাণ ১ টনের বেশি। প্রতি তিন মাস অন্তর ৩ টন কেঁচো সার উপৎপাদন হচ্ছে তার ফার্ম থেকে। কেঁচো সার থেকে তার বার্ষিক আয় হয় প্রায় ২ লাখ টাকা।

নতুন উদ্যোক্তা কাঁশিবাড়ি কেশব ত্রিপুরা, রুপাইছড়ির তাহেরা বেগম ও গর্জনতলীর মো. সেলিম জানান, কেঁচো সার ব্যবহারে জমি ও গাছপালা ঠিক থাকে। অন্যদিকে রাসায়নিক সার ব্যবহারে জমির উর্বরতা শক্তি কমে যায়। খরচও বেশি হয়। সবদিক বিবেচনায় লোকসানের ভয় না থাকায় লাভজনক হওয়ায় অনেকেই কেঁচো সার উৎপাদনে আগ্রহ দেখাচ্ছে। তাই সরকারের উচিত এমন নতুন উদ্যোক্তাদের পাশে দাঁড়ানো। আরও নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতে প্রশিক্ষণসহ যাবতীয় সহযোগিতা কামনা করেন তারা।
 
রামগড় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলী আহমদ (ভারপ্রাপ্ত) বলেন, ‘ফসলি জমিতে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমানো ও কৃষকদের পরিবেশবান্ধব কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করতেই সরকার জৈব সার উৎপাদনকারীদের নানা সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে। বর্তমানে জৈব সার উৎপাদনের বিষয়টি জেলার কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ায় চাষিরা কেঁচো সার ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে উঠছে। আমরা কৃষকদের পরিবেশবান্ধব জৈব সার ব্যবহারের নিয়মিত পরামর্শ ও সহযোগিতা করছি। আগামিতে আরো নতুন উদ্যোক্তা তৈরি ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা চেয়ে কৃষি দপ্তরে চাহিদা পাঠানো হয়েছে।’

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়