Cvoice24.com

ক্ষমতা হস্তান্তরে মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিলেন রামগড় পৌর মেয়র

রামগড় প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৪:৫৪, ১৭ নভেম্বর ২০২১
ক্ষমতা হস্তান্তরে মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিলেন রামগড় পৌর মেয়র

রামগড় পৌর সভার মেয়র মোহাম্মদ শাহজাহান কাজী রিপন।

একজন জনপ্রতিনিধির ক্ষমতার মেয়াদ শেষ হলেও চেয়ার আঁকড়ে থাকার প্রবণতা এদেশে অহরহ। চেয়ারের ক্ষমতা শেষ হলেও সীমানা জটিলতাসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলে অনুসারীদের দিয়ে মামলা করিয়ে চেয়ার আঁকড়ে ধরার হাজারো উদাহরণ রয়েছে। তবে এতো কিছুর মধ্যেও দায়িত্ব শেষ হওয়ায় দায়িত্বভার হস্তান্তর করে ভারমুক্ত হওয়ার জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিবের কাছে চিঠি দিয়ে বিরল দৃষ্টান্ত দেখালেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার রামগড় পৌর সভার মেয়র মোহাম্মদ শাহজাহান কাজী রিপন।

গত মঙ্গলবার (১৬ নভেম্বর) ক্ষমতা ছাড়তে চেয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিবের কাছে চিঠি লিখে এ অনন্য নজির দেখালেন বর্তমান মেয়র।

স্থানীয় সরকার বিভাগে পাঠানো চিঠিতে মেয়র মোহাম্মদ শাহজাহান (রিপন) উল্লেখ করেন, গত ২০১১ সালের ২৩ মে তারিখ অনুষ্ঠিত রামগড় পৌরসভা নির্বাচনে (৩য় পৌর পারিষদ) বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বঙ্গবন্ধু কণ্যা ও জননেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থার নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রথমবারের মতো পৌরবাসীর প্রত্যক্ষ ভোটে রামগড় পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন। এরপর গত ২০১৬ সালের ২৫ মে তারিখ অনুষ্ঠিত পৌর নির্বাচনে (৪র্থ পৌর পরিষদ) স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মোবাইল প্রতীকে প্রতিদ্বন্ধিতা করে পৌরবাসীর প্রত্যক্ষ ভোটে ২য় বারের মতো রামগড় পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন এবং বর্তমানেও মেয়র পদে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

এতে তিনি আরও উল্লেখ করেন, অতি সম্প্রতি অনুষ্ঠিত (গত ২ নভেম্বর) রামগড় পৌরসভা নির্বাচনে (৫ম পৌর পরিষদ) তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে মনোনয়ন বোর্ডের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। এর আগে চলতি বছরের ১১ আগষ্ট ৪র্থ পৌর পরিষদের মেয়াদ শেষ হলেও ওই পরিষদকে বিলুপ্ত করা হয়নি। যার ফলে দায়িত্ব শেষ হবার পরেও তাকে ওই দায়িত্ব থেকে ভারমুক্ত করা হয়নি।

এছাড়া, গত ২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ৫ম পৌরসভা নির্বাচনে বিনাপ্রতিদ্বন্ধিতায় মেয়র ও জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে ৯টি ওয়ার্ডে ৯ জন পৌর কাউন্সিলরসহ ৩টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৩ জন নারী কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচনের পর গত ৮ নভেম্বর খাগড়াছড়ি যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের ট্রাইবুনালে নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা রিটার্নিং অফিসার মোহাম্মদ সাইদুর রহমানসহ ১৬ জনকে অভিযুক্ত করে, ইভিএমে কারচুপির অভিযোগ তুলে ফলাফল বাতিল ও গেজেট স্থগিত চেয়ে সাত পরাজিত কাউন্সিলর প্রার্থী মামলা দায়ের করেছেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশন সচিব ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিবকেও মামলায় মোকাবেলা বিবাদী করা হয়েছে। ওই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি আশঙ্কা করছেন, ইতোপূর্বে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়া পৌর পরিষদের দায়িত্ব হস্তান্তরের সময় বিলম্বিত হতে পারে। এছাড়া শারীরিকভাবে অসুস্থতা বোধ করায় উক্ত উত্তীর্ণ হওয়া পৌর পরিষদের দায়িত্ব পালনে তিনি বর্তমানে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। এ অবস্থায় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তার দ্বারা পৌরসভার বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে ভূল-ভ্রান্তি হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।

তাই পৌরসভা আইন অনুযায়ী দ্রুত সময়ের মধ্যে নবনির্বাচিত পৌর পরিষদের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর কিংবা প্রশাসক নিয়োগ করে তাকে ওই দায়িত্ব থেকে ভারমুক্ত করার জন্য তিনি চিঠির মাধ্যমে স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিবের কাছে বিনীত অনুরোধ জানিয়েছেন।

এদিকে, স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিবের কাছে প্রেরণের পাশাপাশি খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-সচিব, স্থানীয় সরকার বিভাগের খাগড়াছড়ির উপ-পরিচালক ও রামগড় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছেও চিঠিটির অনুলিপি প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেয়র মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘সম্প্রতি পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং সেখানে নতুন পৌর মেয়রসহ পরিষদ নির্বাচিত হয়েছে। তাই সুষ্ঠুভাবে দ্রুত সময়ের মধ্যে দায়িত্ব হস্তান্তর করে আমি ভারমুক্ত হতে চাই। এছাড়া নির্বাচিত পরিষদ থাকার পরেও দায়িত্ব নিয়ে বসে থাকা পৌরসভার আইনের লঙ্গন। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে আমি দায়িত্ব হস্তান্তরের জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব মহোদয়ের নিকট চিঠি দিয়েছি।’

রামগড় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) উম্মে হাবিবা মজুমদার বলেন, চিঠিটির একটি অনুলিপি পেয়েছি। এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে যে সিদ্ধান্ত আসবে সেটিই বাস্তবায়ন করা হবে বলেও জানান তিনি।

রামগড় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বিশ্ব প্রদীপ কারবারি বলছেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এমন দৃষ্টান্ত বিরল। যেখানে দায়িত্ব শেষ হবার পরেও কেউ ক্ষমতা হস্তান্তর করতে চান না, সেখানে এ বিষয়টি বর্তমান প্রেক্ষাপটে জনপ্রতিনিধিদের কাছে একটি অনন্য নজির হয়ে থাকবে।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়