Cvoice24.com

রামগড়ে পিডিবি ও ঠিকাদারের ভুলে হাত কাটা পড়ল নির্মাণ শ্রমিকের

রামগড় প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৫:৪৫, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২২
রামগড়ে পিডিবি ও ঠিকাদারের ভুলে হাত কাটা পড়ল নির্মাণ শ্রমিকের

অন্যের ঘরে আলো জ্বালাতে গিয়ে অন্ধকারে এখন নিজেদের ঘর। মাত্র ৫শত টাকার মজুরি খাটতে গিয়ে বৈদ্যুতিক শট থেকে আগুন লেগে এক নির্মাণ শ্রমিকের প্রায় পুরো শরীর পুড়ে গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলার পাতাছড়ার মাহবুব নগর কর্ণেল বাগান এলাকায়। 

গেল ২৫ জুলাই বিদ্যুৎ লাইনে সংযোগ দিতে গিয়ে রামগড় বিদ্যুৎ অফিস ও ঠিকাদারের ভুলে আহত হন ৪ নির্মাণ শ্রমিক । এরমধ্যে আনোয়ার হোসেন (১৮) নামে এক কিশোরের একটি হাত কেটে ফেলতে হয়েছে। পুড়ে গেছে পুরো শরীর। একটি পায়ের অবস্থাও গুরুতর। 

আহত আনোয়ার রামগড় উপজেলার ২নম্বর পাতাছড়া ইউনিয়নের মাহবুব নগর গ্রামের বাসিন্দা আবদুর রউফের ছেলে। সে বর্তমানে ঢাকা শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। 

জানা গেছে,  রামগড় বিদ্যুতের আবাসিক প্রকৌশলীর মৌখিক নির্দেশে রামগড় পাতাছড়ার ব্যক্তি মালিকানাধীন কর্ণেল বাগান ও পাশ্ববর্তী একটি বাগানে ১১ কেভির ফোর পট্টির নতুন লাইন সংযোগ দিতে গেলে আগুন লেগে শাহ আলম, তারেক ও ইব্রাহিমসহ ৪ নির্মাণ শ্রমিক আহত হয়।  এর মধ্যে আরো এক শ্রমিক মো. ইব্রাহিম খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে তার অবস্থাও গুরুতর। আহতদের বাড়ি রামগড়ের পাতাছড়া ইউনিয়নের মাহবুব নগর।

মূলত বিদ্যুৎ বিভাগের নিজস্ব লাইনম্যান দিয়ে নতুন লাইন সংযোগ দেয়ার নিয়ম থাকলেও ঠিকাদার তার নিজস্ব শ্রমিক দিয়ে সংযোগ দিতে গিলে এ দুর্ঘটনা ঘটে।  নতুন লাইন নির্মাণে চট্টগ্রামের আনিছ কোম্পানী নামে এক ঠিকাদারকে নিয়োগ দিলে ঠিকাদার জালিয়াপাড়া বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণকারী ওসমান নামে এক সাব-ঠিকাদারকে দায়িত্ব দেন ।

শ্রমিক মাঝি শাহ আলম জানান, লাইনম্যানদের সাথে যোগাযোগ করেই সাটডাউন দিয়ে কাজের শেষ দিকে পিডিবির লাইনম্যান ইউসুফ ভুল করে লাইন চালু করলে  এ দুর্ঘটনা ঘটে। তবে তিনি আহত শ্রমিকদের চিকিৎসা ব্যয়ে ঠিকাদার ও বিদ্যুৎ অফিস থেকে টাকা তুলে আহত আনোয়ারের চিকিৎসায় ব্যয় নির্বাহ করার কথা জানালেও মূলত আহতদের পরিবার কোন টাকা পাননি বলে অভিযোগ করেছেন।

পিডিবির লাইনম্যান ইউসুফ জানান, একঘণ্টা পরপর আমাদের পিডার পরিবর্তন করে লাইন চালু করতে হয়। সেখানে অপর লাইনম্যান সালাউদ্দিন ছিলেন তিনি আমাকে জানাননি যে ওই লাইনে কাজ চলছে।

আহত আনোয়ারের পিতা আবদুর রউফ বলেন, বিদ্যুৎ অফিস ও ঠিকাদারের অবহেলায় আমার ছেলের জীবন সংকটাপন্ন। গত ৯ আগস্ট ডাক্তাররা ছেলের এক হাত কেটে ফেলেছে এবং একটি পায়ের অবস্থাও খারাপ সেটাও কাটা পড়তে পারে।  বেঁচে থাকলেও ছেলেকে পঙ্গুত্বের অভিশাপ নিয়ে বাঁচতে হবে।  

তিনি আরো বলেন, আমি কৃষক। ইতিমধ্যে ঋণ নিয়ে ২ লাখ টাকা খরচ করে ঢাকা চিকিৎসা করাচ্ছি আগামীতে কি করে চিকিৎসার ব্যয়ভার চালাবো কিছুই জানা নেই।

আহতের মা পেয়ারা বেগম বলেন, তাদের ভুলে আমার ছেলে মরে যাচ্ছে। চিকিৎসার খরচতো দিচ্ছেই না অন্তত একটিবার দেখেও যায়নি কেউ। ছেলের কষ্ট আর সহ্য হয়না।

সাব-ঠিকাদার ওসমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বিদ্যুৎ অফিসের সাথে যোগাযোগ করেই সংযোগ দেয়া হচ্ছিলো অসাবধানতাই দুর্ঘটনার কারণ। তবে আহতদের চিকিৎসা খরচ তিনি দিয়েছেন বলে জানান। 

স্থানীয় ইউপি মেম্বার ওসমান জানান, আহত আনোয়ারের জীবন সংকটাপন্ন। চিকিৎসা ব্যয় লাগবে প্রায় ১০ লাখ টাকা। সেখানে বিদ্যুৎ অফিস ও ঠিকাদারের লাখ টাকা কিছুইনা। তিনি এলাকা থেকে টাকা তুলে সহযোগিতা করছেন বলে জানান। 

রামগড়ের আবাসিক প্রকৌশলী (উ.স.প্র.) আজগর আলী জানান,  ঠিকাদারের কাজের সুবিধার্থে নতুন লাইন শাটডাউন দিতে গিয়ে ভুল বুঝাবুঝিতে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। তখন আমি রামগড় পিডিবিতে নতুন আসি। কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই এ দুর্ঘটনা। তবে আহতদের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। 


 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়