Cvoice24.com

৪ বছরেও হয়নি সেতু, এবারও মরণফাঁদ পেরিয়ে বাড়ি যেতে হবে আনাই-আনুচিংয়ের

রামগড় প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১১:১৯, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২
৪ বছরেও হয়নি সেতু, এবারও মরণফাঁদ পেরিয়ে বাড়ি যেতে হবে আনাই-আনুচিংয়ের

ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো দিয়ে বাড়ি যেতে হয় আনাই-আনুচিংদের

নারী সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপে নতুন ইতিহাস গড়েছে বাংলাদেশ। নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে সাফ নারী ফুটবলের শিরোপা জয়ে দেশবাসী আনন্দিত ও উল্লাসিত। একই আনন্দ খাগড়াছড়ির দুই যমজ বোন আনাই এবং আনুচিং মগিনীর জন্মভূমির বাড়ি সাত ভাইবোন পাড়ায়ও। কিন্তু যে কন্যাদের বিজয়ে উল্লাসিত গোটা দেশ। দেওয়া হয়েছে রাজসিক সংবর্ধনা ও চলছে পুরস্কার ঘোষণার মহোৎসব। প্রশাসন থেকে শুরু করে  কর্তাব্যক্তিরা ছুটে যাচ্ছেন সেসব খেলোয়াড়দের বাড়ি বাড়ি, সেই স্বপ্নজয়ী সাফ চ্যাম্পিয়ন নারী ফুটবলার দুই বোনদের বাড়ির ঘোষণা দেয়া সেতুটি নির্মাণ হয়নি আজও। 

সদ্য সমাপ্ত সাফ চ্যাম্পিয়নজয়ী বাঘিনীদের গৌরবের তালিকায় রয়েছে খাগড়াছড়ির দুই যমজ বোন আনাই এবং আনুচিং মগিনীও। জেলা সদরের সাত ভাইবোন পাড়ায় বাড়ি হলেও তাদের গ্রামটি একেবারেই দুর্গম। পিচঢালা পথ পেরিয়ে সরু-কর্দমাক্ত পথ মাড়িয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এক সাঁকো হয়ে বাড়ি যেতে হয় যমজ এই ফুটবল কন্যাদের। যেখানে থাকেন দুই কৃতি ফুটবলারের বয়স্ক বাবা-মাসহ ভাই-ভাবীর পরিবার। 

২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ নারী ফুটবল টুর্নামেন্টে দক্ষিণ এশিয়ার পরাশক্তি ভারতকে হারিয়ে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জনের পর ওই বছরের ৯ জানুয়ারি খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী দুই ফুটবলার আনাই ও আনুচিং মগিনীদের বাড়ি পরিদর্শনে যান। এ সময় তাদের বাড়িতে যাতায়াতের সুবিধার্থে ছড়ার ওপর ব্রিজ নির্মাণ এবং তিন নারী ফুটবলারকে ৫০ হাজার টাকা করে এফডিআর করে দেওয়াসহ তাদের লেখাপড়ার যাবতীয় খরচ বহন করার ঘোষণা দেন। কিন্তু চার বছর পার হয়ে গেলেও আজও তা বাস্তবায়ন হয়নি। 

প্রতিনিয়ত জীবনের সাথে সংগ্রাম করে সাফল্যের দেখা পেয়েছেন আনাই-আনুচিংরা

স্থানীয়রা অভিযোগের সুরে জানান, যখনই দুই কন্যা আনাই-আনুচিং মগিনী দেশের জন্য কোন সুখবর নিয়ে আসে তখনই স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তাদের বাড়ি যান এবং দেন নানা প্রতিশ্রুতি। কিন্তু বছরের পর বছর কেটে গেলেও তা বাস্তবায়ন হয় না। তারই একটি বড় উদাহরণ এই রাস্তা। এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এবারও মরণফাঁদ পেরিয়েই বাড়ি যেতে হবে বাংলার বাঘিনী মগীনি বোনদের’। 

আনাই-আনুচিংয়ের বড় ভাই মংক্রচাই মগ বলেন, বোনদের গর্বে আমরা সব সময় আনন্দে থাকি। মা-বাবারা বৃদ্ধ হয়ে গেছেন। কিন্তু আমাদের বাড়িতে আসার রাস্তাটি খুবই খারাপ। আর বর্ষাকালে ছড়ার পানি অনেক উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তখন একমাত্র যাতায়াতের পথ বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলাফেরা করতে খুবই ভয় লাগে।

তাদের মা-বাবা আপ্রংমা মগিনী ও রিপ্রংচাই মগ বলেন, আমাদের দুই মেয়ে আজ দেশের গর্বে পরিণত হয়েছে। জেলা প্রশাসক আমাদের জন্য অনেক কিছু করেছেন। কিন্তু আমাদের বাড়িসংলগ্ন খালের ওপর সাঁকোটি ঝুঁকিপূর্ণ বিধায় সেতু নির্মাণের কথা দিয়েছিলেন সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী, কিন্তু কখন হবে আমরা জানি না।

খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক জুয়েল চাকমা বলেন, সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান যে সব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তার মধ্যে শুধুমাত্র আনাই-আনুচিং-এর পরিবারের কিছু অনুদান দেওয়া ছাড়া অন্যগুলো বাস্তবায়ন হয়নি।

খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, আনাই-আনুচিং মগিনী এবং লক্ষ্মীছড়ির মনিকা চাকমা’র বাড়ি সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। তাদের মা-বাবা স্বজন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে কথা বলে তাদের সমস্যা জেনেছি। সরকারি অর্থায়নে জেলা প্রশাসনের প্রতিশ্রুত মনিকা চাকমার বাড়ি নির্মাণ ও বিদ্যুতায়ন, আনাই-আনুচিংদের বাড়িতে গভীর নলকূপ স্থাপন ও বিদ্যুতায়ন করা হয়েছে। সেই সাথে জেলার তিন কৃতি ফুটবলারকে দুই লাখ টাকা করে সঞ্চয়পত্র করে দেয়া হয়েছে। এবার সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় তিন কৃতি ফুটবলার ও সহকারি কোচ তৃষ্ণা চাকমাকেও এক লাখ টাকা দেওয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

আনাই-আনুচিংদের বাড়ি যাবার পথে ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকোর পরিবর্তে সেতু নির্মাণের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে জানিয়ে আক্ষেপ করে তিনি বলেন, আমরা সবাই কেন যেন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের অপেক্ষায় থাাকি!


 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়