Cvoice24.com

মুখ থুবড়ে পড়েছে রামগড়ের পর্যটন শিল্প, উদ্যোগী হলে ফিরবে হারানো গৌরব

রামগড় প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৪:৫৫, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২
মুখ থুবড়ে পড়েছে রামগড়ের পর্যটন শিল্প, উদ্যোগী হলে ফিরবে হারানো গৌরব

এক সময়ের মুখরিত রামগড়ের পর্যটন স্পটগুলো পর্যটকশূন্য

খাগড়াছড়ির পার্বত্য জেলার পর্যটন শিল্পে রামগড়ের সৌন্দর্যের সুখ্যাতি ছিল দেশের সর্বত্র। কিন্তু যথোপযুক্ত পরিকল্পনা ও প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়নের অভাবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের রানীখ্যাত এ উপজেলার পর্যটন খাত ভেঙে পড়েছে। অথচ একটু উদ্যোগী হলে আবারও ফিরবে হারানো এই গৌরব।

রামগড়ের সাথে জড়িয়ে আছে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বগাথা ইতিহাস। তাছাড়া উপভোগ করার জন্য রয়েছে দুর্গম পাহাড়, সবুজের সমারোহ, সাজানো চা বাগান, লেক, ঝুলন্ত সেতু, পাহাড়ঞ্চল কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু, বিজিবির জন্মস্থান, শহীদ মিনার, পুরাতন এসডিও ডাক বাংলো, কলসীর মুখ, সুইচ গেট সহ অন্যান্য দর্শনীয় স্থানসমূহ। এসব সৌন্দর্য  উপভোগ করতে এক সময় রামগড়ে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকদের ভিড লেগেই থাকতো, পর্যটকদের আগমনে মুখরিত থাকতো রামগড় শহর। 

অথচ সম্ভাবনাময় এসব স্থাপনার উন্নয়নে যথোপযুক্ত পরিকল্পনা ও রক্ষণাবেক্ষণ না থাকায় মুখ থুবড়ে পড়েছে রামগড়ের পর্যটন শিল্প। এতে করে পর্যটকরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে আর সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব। উন্নয়নবঞ্চিত হচ্ছে এসব এলাকার সর্বসাধারণ। 

সরেজমিনে রামগড় পার্ক, স্মৃতিসৌধ, ঝুলন্তব্রিজ, কালাডেবা সুইসগেট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এসব পর্যটন কেন্দ্র সম্পূর্ণ অরক্ষিত। পর্যটকদের জন্য নেই কোন নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বছর দশেক আগেও বিশাল আকাশের নিচে চারদিকে সবুজ গাছ-গাছালির শ্যামল ছায়ায় ঘেরা ছিল এ পার্ক। পাতাবাহার, ঝাউগাছ ও বিভিন্ন ফুলের সমারোহ ও বৈদ্যুতিক লাইটের বাহারি সাজে সাজানো ছিল লেকের চারপাশ। বিশাল হ্রদের উপর নির্মিত ঝুলন্ত সেতু পার্কের সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দিয়েছিলো কয়েকগুণ। লেকের পানিতে ছিলো কয়েকটি বোর্ট যা পর্যটকদের আনন্দকে আরো কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিতো। এসব দৃশ্য অবলোকন করার জন্য ছুটে আসত দর্শনার্থীরা। 

তবে বর্তমানে তার পুরোটাই উল্টো। চারদিকে সবুজের সমরোহ এখন আর নেই। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে পার্কটি। কোনরকম জোড়াতালি দিয়ে টিকে আছে ঝুলন্ত সেতু। অন্যদিকে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রামগড় স্মৃতিসৌধটি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এক প্রকার ধ্বংসের প্রান্তে। রাতে মাদকসেবীদের নিরাপদ  আস্তানায় পরিণত হয় এটি। কোন নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। আশপাশের স্থানীয়রা এটিকে গো-চারণ ভূমি বানিয়েছে। স্মৃতিসৌধের মত একই দশা কালাডেবায় অবস্থিত সুইসগেটেরও। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সরঞ্জামগুলো নষ্ট হয়ে পড়েছে। এক সময়ের কোলাহল পূর্ণ এ পর্যটন কেন্দ্রটি এক প্রকার পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। 

রামগড় পার্কে ঘুরতে আসা পর্যটক আল আমিন জানান, অতীতের ছবি ও সুনাম শুনে স্কুলের বাচ্চা ও সন্তানদের নিয়ে রামগড় ঘুরতে এসেছেন তিনি কিন্তু রামগড়ের সেই আগের সৌন্দর্য আর নেই। তাছাড়া এখানে গণশৌচাগার ও থাকার ভাল কোন ব্যবস্থাও নেই। যার ফলে রাত্রিযাপনের জন্য খাগড়াছড়ি সদর একমাত্র ভরসা। 

রামগড় উপজেলার বাসিন্দা খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য অরুণ চন্দ্র সিংহ বলেন, রামগড় পর্যটনমুখর শহর ছিলো। নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে মানুষ রামগড় মুখী হচ্ছে না। কর্তৃপক্ষ চাইলে রামগড়ের সুখ্যাতি আবার ফিরিয়ে আনতে পারে। 

তিনি আরও বলেন, দলমতনির্বিশেষে রামগড়ের জনপ্রতিনিধিদের রামগড়ের পর্যটন শিল্পকে এগিয়ে নিতে এক হওয়া উচিত। সুপরিকল্পিতভাবে রামগড় নিয়ে কাজ করলে রামগড় খুব দ্রুত আগের সুখ্যাতি ফিরে পাবে।

রামগড় পৌরসভার মেয়র রফিকুল আলম কামাল বলেন, রামগড় পার্ক আগে পৌরসভার নিয়ন্ত্রণে ছিল। কিন্তু ভূমি জটিলতায় এটি এখণ উপজেলা প্রশাসন এবং উপজেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রণে। পৌরসভার যথেষ্ট লোকবল আছে। রামগড় পার্ক পৌরসভার দায়িত্বে দিলে পুনরায় ঢেলে সাজানো হবে। 

তিনি আরও বলেন, রামগড়ের পরিত্যক্ত বাস টার্মিনালটি এখন মাদকের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। এটাকে শিশু-কিশোরদের জন্য আধুনিক বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা চলছে।

রামগড় উপজেলা প্রশাসনের নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খোন্দকার মো. ইখতিয়ারউদ্দিন আরাফাত জানান, প্রশাসনের সামনে এমন মনোরম লেক তাকে মুগ্ধ করেছে। লেকটির সৌন্দর্যবর্ধন ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনকে অবগত করা হয়েছে। 

রামগড় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিশ্ব প্রদীপ ত্রিপুরা জানান, রামগড় উপজেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে রামগড়ের পর্যটন শিল্পকে এগিয়ে নিতে কাজ করা হচ্ছে। রামগড়ের প্রতিটি পর্যটন কেন্দ্র আধুনিক সাজসজ্জায় সাজানো হবে। রামগড়ে সরকারিভাবে রেস্ট হাউজ নির্মাণ হচ্ছে। কিন্তু নকশা পরিবর্তনের জন্য কাজের অগ্রগতি কিছুটা থমকে আছে। তিনি এখানে উন্নতমানের হোটেল নির্মাণে ব্যবসায়ীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়