স্বামীকে বেঁধে রেখে গৃহবধূকে গণধর্ষণ, মামলা নেয়নি পুলিশ!
রামগড় (খাগড়াছড়ি) প্রতিনিধি
খাগড়াছড়ির রামগড়ে স্বামীকে পিটিয়ে হাত-পা বেঁধে রেখে গৃহবধূকে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় বাধা দেয়ায় গৃহবধূর বৃদ্ধা শাশুড়িকে বেদম প্রহার করে দুর্বৃত্তরা। পরে নগদ টাকাসহ ঘরের বিভিন্ন জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় মামলা না নেওয়ার অভিযোগ ওঠেছে থানা পুলিশের বিরুদ্ধে। তবে বিষয়টি অস্বীকার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) গভীর রাতে উপজেলার পাতাছড়া ইউনিয়নের দুর্গম কালাপানি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
ওই গৃহবধূর স্বামী বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে ১৮ জন পাহাড়ি সন্ত্রাসী আমার বাড়িতে হানা দেয়। তারা প্রথমে ঘর থেকে আমাকে বাইরে এনে হাত-পা ও মুখ বেঁধে মারধর করে। পরে বেঁধে রেখে ৫ জন সন্ত্রাসী ঘরে ঢুকে স্ত্রীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এ সময় বৃদ্ধা মা ধর্ষণে বাধা দিলে সন্ত্রাসীরা তাকেও প্রহার করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ধর্ষণের পর সন্ত্রাসীরা আমার মা ও স্ত্রীর শরীর থেকে স্বর্ণালংকার কেড়ে নেয়। তারা নগদ ৫২ হাজার টাকা, সোলার প্যানেলের দুটি ব্যাটারিসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র লুট করে। চলে যাওয়ার সময় জায়গার দলিলপত্র তাদের কাছে পৌঁছে দিয়ে দ্রুত অন্যত্র চলে যেতে হুমকি দিয়ে যায়। এদের মধ্যে ছয়জনকে চিনলেও তিনজনের নাম পরিচয় জানি।’
গৃহবধূর স্বামী বলেন, ‘ঘটনার সময় টানা ভারিবর্ষণে সৃষ্ট বন্যায় রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নেওয়া যায়নি। পরে পানি কমে গেলে রবিবার (২৫ আগস্ট) ভিকটিম ও আমার মাকে নিয়ে চিকিৎসা নিতে যাই রামগড় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে খাগড়াছড়ি জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। রবিবার সন্ধ্যার আগে তারা হাসপাতালে ভর্তি হন।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘হাসপাতালে যাওয়ার আগে রবিবার সকাল ১১টায় স্ত্রীসহ আমরা রামগড় থানায় অভিযোগ দায়ের করতে যাই। কিন্তু সিভিল পোশাকে থাকা ডিউটি অফিসারের সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। পরে দুজন পুলিশ সদস্য (পুরুষ) তার স্ত্রীর বক্তব্য ভিডিও করে বলেন, এসব লজ্জা-শরমের কথা কাউকে বলবেন না, বাড়ি চলে যান। এ সময় বারবার অনুরোধ করলেও তারা মামলা নেননি।’
জানা যায়, রামগড় উপজেলার পাতাছড়া ইউনিয়নের কালাপানি গ্রাম অত্যন্ত দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত। যে কারণে অতিবৃষ্টি ও বন্যার কারণে চিকিৎসা ও থানায় অভিযোগ করতে তাদের দেরি হয়।
প্রতিবেশী আবদুল মোতালেব ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘পরিবারটির প্রতি রাতভর অমানবিক নির্যাতন করেছে সন্ত্রাসীরা। তারা খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।’
এদিকে মামলা না নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে রামগড় থানার অফিসার ইনর্চাজ (ওসি) দেবপ্রিয় দাশ বলেন, ‘ওই গৃহবধূ তার স্বামীসহ থানায় এসেছিলেন। ভিকটিমের স্বামী খুবই অসুস্থ থাকায় প্রথমে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। অভিযোগ করলে মামলা পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
তবে ধর্ষণের আলামত পরীক্ষা এবং থানা থেকে পুলিশের অসহযোগিতার বিষয়টি সঠিক নয় বলে তিনি জানান।
রামগড়ের পাতাছড়া ইউনিয়নে গৃহবধূর ধর্ষণের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপি।