Cvoice24.com

বিশ্বমুমলিম পূর্নজাগরণের অগ্রদূত আল্লামা ইকবাল

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ৮ মে ২০১৮
বিশ্বমুমলিম পূর্নজাগরণের অগ্রদূত আল্লামা ইকবাল

পাক ভারত উপমহাদেশে দীর্ঘকাল রাজত্ব করার পর অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামঝি মুসলমানরা হারিয়েছে আধিপত্য, ফলসরূপ তৎকালীন মুসলিম সমাজ জীবনে বিস্তৃত হয়েছিল নৈরাশ্য ও পরাজয়ী চরিত্র। স্বদেশ ভূমিতে বৈদেশীক আগ্রাসন, মুসলিম দুনিয়াতেও চলছিল তিমিরাচ্ছন্নতা। ঠিক সেই মুহূর্তে আমাবশ্যার ঘোর অন্ধকার ভেদ করে অতীতের নির্বীর্যতাকে ভেঙ্গে ফেলে নতুন দিনের কল্লোলিত জীবনে ছন্দে নতুন দিক দর্শন নিয়ে বিংশ শতাব্দীর মুসলিম চিন্তাধারার কিংবদন্তী, কবি সম্রাট ও দার্শনিক ড. আল্লামা ইকবালের আগমন ঘটে।

আধুনিক বিশ্বে ইসলামের মর্মবাণীর সার্থক ব্যাখ্যাদাতা স্বাপ্নিক কবি দার্শনিক, বিশ্বমুমলিম পূর্নজাগরণের অগ্রদূত, ‘প্যান ইসলামিজমের’ অন্যতাম রাহবার, মিল্লাতে ইসলামিয়ার রূপকার, আল্লামা মুহাম্মদ ইকবাল ছিলেন উনবিংশ ও বিংশ শতকের এক গৌরবোজ্জল মনীষী।

১৮৭৭ সারের ৯ নভেম্বর অবিভক্ত ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের শিয়ালকোট শহরে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে তার জন্ম হয়। তার বাবার নাম শায়খ নুর মুহাম্মদ এবং মায়ের নাম ইমাম বিবি। বাবা-মা আদর করে তার নাম রাখেন ইকবাল-যার অর্থ সৌভাগ্য।

পারিবারিক পরিবেশে পড়া-লেখা শেষ করার পর স্থানীয় মক্তবে তার প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন হয়। জন্মের পর পরই তার বাবা তাকে কোলে নিয়ে দোয়া করেছিলেন যে, ‘বড় হয়ে দ্বীনের খেদমত করলে বেঁচে থাক, না হয় এখনি মরে যাও’। সে দোয়ার আলোকেই ইকবালের ধনাঢ্য পিতা তার পড়াশোনার আয়োজন করেন। ১৮৯৭ সালে আরবী ও ইংরেজিতে সারা পাঞ্জাবে প্রথম স্থান ও দু’টি স্বর্ণ পদক লাভ করে বি.এ. এবং ১৮৯৯ সালে দর্শন শাস্ত্রে স্বর্ণ পদক লাভ করে এম.এ. ডিগ্রী কৃতিত্বের সঙ্গে অর্জন করেন। লাহোর ওরিয়েন্টাল করেজে ইতিহাস ও দর্শন শাস্ত্রের অধ্যাপনায় যোগ দেওয়ার মাধ্যমে তার কর্ম জীবন শুরু হয়।  

পরে তিনি লাহোর ইসলামিয়া কলেজ ও লাহোর সরকারী কলেজে ইংরেজি ও দর্শনের খন্ডকালীন অধ্যাপক নিযুক্ত হন। ১৯০৫ সালে তিনি উচ্চ শিক্ষার জন্য বিলাত যান । বিলাতে তিনি ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রিনিটি কলেজ থেকে দর্শন শাস্ত্রে এম.এ. ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর পশ্চিম ইউরোপ ভ্রমণ শেষে জার্মানীর মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে ১৯০৭ সালে “The Development of Metaphysics in Persia” বিষয়ের উপর গবেষণা করে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯২৬ সালে তিনি পাঞ্জাবি আইন পরিষেদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং ধর্ম প্রবর্তকদের বিরুদ্ধে কৃৎসাপূর্ণ প্রচারণা বন্ধে প্রস্তাব পাস করেন।

তারপর তিনি লন্ডন থেকে ডিষ্টিংসান সহকারে ব্যারিষ্টারী পাস করেন। সেখান থাকতেই তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছুদিন অধ্যাপনা করেন। এভাবেই ইকবালের মনে প্রাচ্যের সঙ্গে পাশ্চাত্যের সাক্ষাৎ ঘটল এবং তার কাব্যে প্রাচ্যে ও প্রতীচ্যেরে এক অপূর্ব সম্মিলন ঘটল। এতে করে ইকবাল কাব্যে-প্রতিভা ও অনুপম সম্মিলন ঘটল। ইকবালের কাব্য-প্রতিভা ও অনুপম রসাবেশ সহজেই রস পিপাসুদের আকৃষ্ট করে। জড়তা, ক্লীবতা ও দূর্গতির গহ্বরে নিপাতিত মাঠ-ঘাটের পথ প্রান্তরের মানুষ খুঁজে পেল অভূতপূর্ব শিহরণ ও কর্মচাঞ্চল্য। সূফী কবি মাওলানা জালাল উদ্দীন রুমী ছিলেন ইকবালের কাব্যপথের সর্বশ্রেষ্ঠ আলোক বর্তিকা।

তিনি বলেন, ‘রুমীর ইঙ্গিতে মোর মাটি হল সোনার সমান এক বিন্দু ভস্ম পেলো লেলিহান শিখার সমান’। ইকবাল সাহিত্য ভাবের প্রাচুর্য, রচনা শৈলীর স্বচ্ছতা ও ভাষার সজীবতা সত্যিই অনবদ্য। মুসলিম অধঃপতন আর বিশ্বজোড়া হিংসাত্মক সংগ্রাম ও হানাহানি ইকবালের হৃদয়ে সঞ্চার করেছে গভীর বেদনা বোধ, তার সংবেদনশীল মনের আকুতি ভাষার মূর্ছনায় ঝংকৃত ও সাবলীল ভঙ্গিমায় রূপায়িত হয়েছে।

ইকবাল মূখ্যত উর্দু ও ফার্সী সাহিত্যের কবি, তথাপি তিনি বাঙ্গালি মুসলমানেরও আদর্শিক কবি। কারণ তার কণ্ঠে ধ্বণিত হয়েছে তাওহীদের বাণী, তার তুলিতে মুমিনের যে চিত্র অংকিত হয়েছে, তার নিখুঁত মুসলিম আদর্শ চিত্র।তার অগ্নিবীণায় যে শক্তি মন্ত্র বজ্র নিনাদে গর্জন করে উঠেছে, তার মূল উৎস হচ্ছে কুরআনুল করীমের বিপ্লবী বাণী।

দেশ-কালের সীমানা ছাড়িয়ে তার কাব্যের অন্তর্গত বাণী বিশ্ব মানবের হৃদয়ে তুমুল আশা জন্ম দিয়েছে। ইকবাল কাব্যের সার্বজনীন আবেদন মানুষের চিরায়ত স্বপ্ন ও আকাংখাকে শুধু জাগ্রত করেনি দুনিয়ায় পিছিয়ে পড়া মানুষের নির্জীব হৃদয়ে প্রচন্ড আলোড়ন তুলেছে।

ধুলায় পতিত মানুষের হাত ধরে তিনি যেমন জড় পৃথিবীর হলুদ বিবর্ণ চোখে এঁকে দিয়েছেন সামদ্রিক স্বপ্ন। জীবনের জরাগ্রস্থ কোলাহল এবং পুংকিলতার মিছিলের উর্ধ্বে-এর মৃত্যুজয়ী পৃথিবীর স্বপ্ন দেখেছেন তিনি। উনবিংশ শতাব্দীর যবনিকা নেমে এসেছে আর ঘনিয়ে আসছে মুসলিম জীবনের ঘনঘটা এমনি দিনে মুসাফিরের যাত্রা শুরু হল এক দূর্ঘম পথে।

অতীতে গৌরবোজ্জল দিনগুলোতে সঞ্চয় করা সে শক্তি ও আত্মবিশ্বাস আজ কোথায় হারিয়ে গেছে বাহুতে সে বল নেই। নীল আসমানের তারারা কোন অতলে ডুবে গেছে। মুসলিম মুসাফির পেছন পানে চেয়ে দেখল অতীতের গর্ভে, আগামী দিনের জীবনের ইতিহাস বুঝি পাওয়া যাবে সেখানে। জীবনকে বাঁচাতে সে আত্মহুতি দিতে চায়, আত্মোপলব্ধির মাঝে সে আত্মার নির্বাণ খুঁজে ফেরে। সাধনা মুখর এক জীবন দার্শনিক ইকবাল কাব্য কথায় বিভিন্ন গ্রন্থেও কবিতায় আল্লাহর প্রকৃতি, ভাগ্য-জীবন, আত্মতত্ত্ব, রাজনীতি, শিক্ষা, ধর্মতত্ত্ব, নীতিবিদ্যা, সুফীতত্ত্ব প্রভৃতি বিষয়াবলী নিয়ে তিনি লিখেছেন অনেকগুলো গ্রন্থ যেমন-

১) বঙ্গে দারা-১৯২৪

২) বাল-ই জিবরীল-১৯৩৫

৩) জাবর-ই কালীম-১৯৩৬

৪)আশরার-ই-খুদী-১৯১৫

৫)বামুজ-ই-বেখুদী-১৯১৮

৬)যাবুর-ই-আজাম-১০২৭

৭) জাবীদ নামা-১৯৩২

৮) মসাফির-১৯৩৪

৯) পালবিহ বায়দ-১৯৩৬

১০)আরমুগান-ই-জিজাজ-১৯৩৮

১১)ডক্টরাল থিসিস-১৯০৮

১২)ইলমুল ইফতিসাদ

১৩)মাকাতিব-ই-ইকবাল(কয়েকখন্ড)

১৪)শিকওয়াহ

১৫)জওয়াব-ই-শিকওয়াহ

উল্লেখ্য যে, মহাকবি ড. আল্লামাক ইকবালের রচিত গান বর্তমানে ভারতের অন্যতম জাতীয় সংগীতের মার্যাদায় অভিসিক্ত।

ইকবালের দর্শনে অধ্যাত্মিক জীবন সত্যযুগের প্রতীক এবং বস্তুবাদী জড়বাদ ও ভোগবাদ তামসিক যুগের অভিব্যক্তি বস্তুকে তিনি স্বয়ং সম্পূর্ণও মনে করেন না। বস্তু হল আধ্যাত্মিকতার মাল-মশলা। মার্কসীয় সমাজতন্ত্র বাদের বৈষয়িক সাম্য ও পাশ্চাত্য সম্রাজ্যবাদের কাগজী গণতন্ত্র উভয়ই তার সমালোচনার কষাঘাতে জর্জরিত হয়েছে। হতাশাবাদী মানুষের আজ পেতে হবে নিখিল বিশ্বের অধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা, ব্যক্তির আধ্যাত্মিক মুক্তি ও আধ্যাত্মিক উন্মেষ বাস্তব সমাজ গঠন।তিনি বলেন, ‘সাম্রাজ্যবাদের দানব গণতন্ত্রের মুখোশ পরে নৃত্য করে। আর তুমি ভাব যে স্বাধীনতার পরীরা সব নাচছে।’

সমাজ সম্পর্কে ইকবাল বলেন, ‘আল্লাহর একাত্ব, সার্বভৌমত্ব ও মানব ভ্রাতৃত্বই হল ইসলামী সমাজের মূল বিষয়। সমাজ ছাড়া ব্যক্তির চিহ্ণ নেই। সুষ্ঠু সমাজ ব্যবস্থা ব্যক্তিকে সুসংহত করে তোলে। সমাজ জীবন মানুষের পক্ষে অপরিহার্য। বুদ্ধি, আবেগ ও উজ্জ্বল্য প্রশংসার। কিন্তু কেবল মাত্র বুদ্ধিমত্তা যথাযথ নয়। প্রেম ও নীতির যাদস্পর্শ ছাড়া বুদ্ধি নিরর্থক ।ঈমান, চিন্তা ও আবিষ্কার সুন্দর জীবনের তিনটি নক্ষত্র।

তিনি বলেন- ‘মাটি আর পানি থেকে তোমরা সৃষ্টি তবু তুমি বল আমি আফগান তুর্কী। আমি মানুষ আমার আর কোনো পরিচয় নেই তারপর যা খুশি, হিন্দ বা তুরানী’।

শিল্প বিজ্ঞান সম্পর্কে ইকবালের ধ্যান ধারণা স্বয়ংসম্পূর্ণ। তিনি বলেন, ‘নীতিবোধ ও সুষ্ঠু জীবনবোধ ছাড়া শিল্প বিজ্ঞান সব ব্যর্থ। সত্যের মূর্ত প্রতীক প্রতিচ্ছবি হল শিল্প বিজ্ঞান।’

 ইকবালের দর্শনের মূল কথা হচ্ছে খুদী বা আত্মা, এই খুদী বা আত্মার ধারণার উপর ভিত্তি করেই তার দর্শনের ভিত্তি স্থাপিত্ হয়েছে। তার মতে খুদী বাস্তব সত্তা এবং নিজের শক্তিতেই এই সত্তা অস্তিত্বশীল। অতিন্দ্রিয় অনুভূতির মাধ্যমে আমরা এই সত্তাকে জানতে পারি।

তিনি বলেন-‘খুদীকে এইরূপ উন্নত কর যে, তোমার প্রতিটি ভাগ্যলিপি লিখার পূর্বে খোদা যেন শুধান, কি তোমরা অভিপ্রায়’।

আল্লামা ইকবাল জীবনের অন্যান্য দিকের ন্যায় সমভাবে রাজনীতি দিকেও মানোযোগী হয়েছিলেন। তার মতে, ‘রাজনীতির মূল রয়েছে মানুষের আত্মিক জীবনের গভীরে’। আধুনিক জীবনের অধিকাংশ চিন্তাবিদ যখন ধর্মকে রাজনীতি থেকে আলাদা করে নিছক ব্যক্তিগত ব্যাপারে পরিণত করার স্বপক্ষে ক্রমাগত প্রচার চালিয়ে এসেছেন, ইকবাল তখন অকুতোভয়ে ঘোষণা করেছেন, ‘ইসলামে আল্লাহ ও বিশ্ব প্রকৃতি, আত্মা ও বস্তু, উপাসনাগার ও রাষ্ট্র পরস্পরের পরিপূরক।’

সমসাময়িক ধর্মীয় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনগুলোর প্রতি কবি দার্শনিক ইকবালের দৃষ্টি ছিল অত্যন্ত গভীর ও সুদূর প্রসারী। তখনকার দিনের পাক ভারত উপমাহাদেশের রাজনৈতিক আদর্শ সমূহের প্রভাবে ইসলামের মৌলিক কাঠামো ও প্রকৃতির প্রভাবিত হবার সম্ভাবনা দেখেই ইকবাল রাজনীতির প্রতি বিশেষভাবে মনোযোগী হয়েছিলেন। রাষ্ট্র সম্পর্কে ইকবালের বক্তব্য ছিল সুস্পষ্ট। তিনি বলেন, “The state According to Islam, in only an ebbort to realize the Spiritual in a human organization, But in this sense all state not based on mere domination and aiming at the realization of ideal principles, is theoretic”.

ধর্ম সম্বন্ধে সাধারনের ভ্রান্ত ধারণার নিরসন কল্পে ইকবাল বলেন, ধর্ম কোনো মতবাদ নয়, কোনো পৌরহিত্য নয়, কোনো অনুষ্ঠান নয়, বরং ধর্ম এমন একটি জীবনবিধান যা মানুষকে বিজ্ঞানের যুগেও তার দায়িত্ব পালনে প্রস্তুত করে এবং তার প্রতীতিকে দৃঢ় সক্ষম করে দেয়, যার ফলে সে সত্যোপলব্ধিতে সক্ষম হয়ে উঠে। ইকবাল বলেন, Religion is not a depart mental abbair, It is neither mere thought, not mere telling for mere action, it is an expression at the whole man.”

তবে ধর্ম পদার্থ বিদ্যাও নয়, রসায়ন শাস্ত্রেও নয় যে, ল্যবরেটরীতে তাকে Experiment ও পরীক্ষা করে বুঝতে হবে। ইকবালের ভাষায়, “Religion aims at realing the realsignigicance of a special variety of woman experience”.

সমকালীন বিশ্ব এবং জীবন সম্পর্কে চিন্তা করে ইকবাল যে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন তা হচ্ছে, মানুষ যেহেতু সৃষ্টির সেরা, অন্যান্য সৃষ্টির তুলনায় মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের ভিত্তি তার নৈতিক ও অধ্যাত্মিক উৎকর্ষ।আর আধুনিক মানুষের বিপর্যয়ের সব চাইতে বড় কারণ এই নৈতিক ও আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রে তার দেউলিয়াপনা । এই উপলব্ধির ফলশ্রুতিতেই তিনি ঘোষণা করতে পেরেছিলেন। “আজ বিশ্ব মানবের জন্য তিনটি জিনিস চাই, (১) বিশ্বজগতের আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা (২) ব্যক্তির আধ্যাত্মিক মুক্তি এবং (৩)মানব সমাজের আধ্যাত্মিপন্থী ক্রমবিকাশের জন্য কতিপয় বিশ্ব জনীন মূলনীতি।

আধুনিক বিশ্বে দেশ প্রেমের নামে দেশ পূজা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অশান্তির এক বড় কারণ ।এ ব্যাপারে ইকবাল ছিলেন সচেতন। কারণ বৃহৎ শক্তি বর্গের এই অন্ধ দেশ পূজাই জন্ম দেয় অন্য দেশের স্বাধীনতা হরণ করতে। তাই তিনি বলেন, “আমার দৃষ্টিতে দেশ প্রেম এবং দেশ পূজা এক কথা নয়”।

জাতিতে জাতিতে, বর্ণে বর্ণে, গোত্রে গোত্রে সংঘাতের ফলে মানব জাতি আজ যেভাবে দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পড়েছে-সেজন্য ইকবাল সমস্ত ক্ষুদ্রতার উর্ধ্বে এক বিশ্বজনীন জীবনাদর্শের প্রয়োজন অনুভব করেছেন।তিনি বলেন- “আরব আমার ভারত আমার চীন গো আমার নহে গো পর বিশ্ব জোড়া মুসলিম আমি সারাটি জাহান বেঁধেছি ঘর”।

ইসলামী রেঁনেসার অগ্রদূত পুরুষ আল্লামা ইকবাল বিংশ শতাব্দীর মুসলমানদের ঐতিহাসিক ক্রান্তি লগ্নে তার কালজয়ী অবদান মুসলমানদের দিয়েছিল পথের দিশা।মুসলিম সাম্রাজ্যের পতন ও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পতন, তদুপরি প্রতিকূল পরিস্থিতিতে তার মতো দার্শনিক কবির আত্মপ্রকাশ যুগ সৃষ্টিকারী।আল্লামা ইকবাল এক বিস্ময়কর দার্শনিক প্রতিভা।আমীর শকা’য়েব আরসেলান ইকবালকে মুসলিম জাহানের গত এক হাজার বছরের চিন্তাবিদদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম বলে আখ্যায়িত করেন ।ইকবাল ছিলেন একাধারে একজন সাধক দার্শনিক, কবি, ভাষা-শিল্পী, শিল্প-সমালোচক, আইনজীবী, রাজনীতিবিদ ও শিক্ষাবিদ। সাধারণত তার মত এতো বিষয়ে দক্ষ, উজ্জল প্রতিভার অধিকারী তেমন বেশী দেখা যায় না। তার প্রতিভা রাফ্যায়েল, মাইকেল এনজেলো, লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চি আলবার্ট আইনিস্টাইন প্রমুখ বিশ্ব বরেণ্য ব্যক্তিদের বহুমূখী প্রতিভার সঙ্গে তুলনা করা চলে।

তথ্য নির্দেশিকা:  

*আল্লামা ইকবাল সংসদ পত্রিকা, জুলাই-ডিসেম্বর, ৯৪ ইং ঢাকা।

*ইকবাল প্রতিভা-গোলাম রসুল, ই:ফা: বাংলাদেশ।

*ইকবালের রাজনৈতিক চিন্তা ধারা-মুহাম্মদ আব্দুর রহীম ই:ফা:বাংলাদশে।

*মুসলিম ধর্মতত্ত্ব ও দর্শন-ড: আমিনুল ইসলাম, বাংলা একাডেমী, ঢাকা।

*মুসলিম দর্শনের ভূমিকা-ড. রশীদুল আলম ।

*মহাকবি ইকবাল-ফাহমিদুর রহমান।

সিভয়েস/এএইচ

90

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়