Cvoice24.com

নারী দিবসে সুফিয়া শীলার শব্দাঞ্জলি

সুফিয়া শীলা

প্রকাশিত: ১৫:০৫, ৮ মার্চ ২০২১
নারী দিবসে সুফিয়া শীলার শব্দাঞ্জলি

সুফিয়া শীলা

মানুষ মেয়ে

সূর্যের ক্রম ঘূর্ণায়নে একজন মানুষ 
একদিন সত্যি মেয়েমানুষ হয়ে উঠলো।
শৈশবের দুরন্তপনা, নির্যাস, আত্মা
হাসি-কান্না, ঈপ্সা-অভিপ্রায়
একদিন চার দেয়ালে আবদ্ধ হয়ে গেলো।

যে মানুষটি অসময়ে জলধিতে তুরঙ্গ তুলে বেড়াতো
ঘাস ফড়িং বা দোয়েলের পিছনে দৌড়াতো
অন্য কাননের পর্ণী-পল্লবী উজার করতো
কিংবা
যার দস্যিপনায় আঙিনা আলোড়িত হয়ে উঠতো,
একদিন সে মানুষ থেকে মেয়েমানুষ হয়ে উঠলো;
শরীরে, মন-মননে, অন্তঃকরণে ধরণীর-
বেড়াজালে আবদ্ধ একজন মেয়েমানুষ!

প্রথমে যুদ্ধ চলে নিজের সাথেই নিজের,
একদিন সে যুদ্ধও থেমে যায়;
পরাজিত হয় মানুষ!

চুলে লাল ফিতা, নিটোল বিনুনি
হাতে বাহারি রঙের চুড়ি
পায়ে নিক্কণের ঝংকার;
আটপৌড়ে শাড়িতে তার প্রথম হোঁচট খাওয়া, 
মানুষ তো নয় সে, এখন যে মেয়েমানুষ!

শাড়ির আচঁল কিংবা গায়ের কাঁচুলি
খোলা চুলের দোল কিংবা চোখের কাজল
অন্যের মনোরঞ্জনে সব হতে হয় পরিপাটি, 
কেননা
মানুষ তো নয় সে, এখন যে মেয়েমানুষ!

কথার ঝংকারে  কিংবা পায়ের দুপদাপ শব্দে
চঞ্চলা বাতাসে কিংবা কমলা আকাশে 
তার আরাধনা পৌঁছে না আর,
মানুষ তো নয় সে, এখন যে মেয়েমানুষ!

তটিনীর মতো ছুটে চলা কিংবা রঙ্গনার মতো ফুটে ওঠা
কান্তারের মতো বিকশিত হওয়া 
কিংবা প্রভঞ্জনের মতো দাপাদাপি করা
তার ললাটে এখন আর সয় না,
মানুষ তো নয় সে, এখন যে মেয়েমানুষ!

অভিলাষের স্ফূরণে কিংবা লোচনের বৈভবে
হেমাগ্নির তরঙ্গে কিংবা পুষ্পধন্যা স্পর্শে
তার নেই কোনো অধিকার,
মানুষ তো নয় সে, এখন যে মেয়েমানুষ!

ঊর্ধ্বারোহন-ঈপ্সা কিংবা অন্তরীক্ষে দৃষ্টি নিপাত
হৃদয়ার্তির প্রক্ষেপণ কিংবা নিরুপম অনুরণনের কাছে
সে বড় অসহায়,
এসবে এখন তার নেই কোন অধিকার,
মানুষ তো নয় সে, এখন যে মেয়েমানুষ!

এখন সে বনিতা-বারবনিতা-ললনা
এখন সে ইন্দিরা-শিষ্ট-শুচি
এখন সে ভার্যা-প্রেয়সী-অভিসারিকা
এখন সে অঙ্গনা-শর্বরী-নীরবতরু;

এখন সে সত্যিই আর মানুষ নয়
কেবলই মেয়েমানুষ, মেয়েমানুষ! 

 


প্রতিঘাত

নিকষ কালো দিবস রাতে লুকায় আঁচলে লজ্জা,
আসমানির শরীর জমিনে পোড়ায় রুধির মজ্জা।
আদুরে হাতে বিধি নিষেধ হয়েছে জলন্ত কাঠ,
সব্যসাচীর হৃদয়ে বিষ নিথর আবাদি মাঠ।
হিংস্র আগুনে ফুটন্ত যবে শোণিত জীবন দুখ,
উত্থিত হাতে বিবর্ণ হয় তব দেহে পিষ্ট সুখ।
চিৎকারে তার ছিন্ন বিদীর্ণ মাটি আকাশ আকুতি,
নিবৃত্ত হয় না যে পিশাচ মানে না কোনো প্রণতি।

মাটির বুকে নিরাবরণ মায়ের শরীর খানি,
অভিশাপে ঝাঁজরা প্রকট এ তোমার ললাট জানি।
বাকহীন মানুষ হয়ে তুমি পালিয়ে যাবে কোথায়, 
পদে পদে হায়েনা দাঁড়িয়ে দেহ লুকাবে যেথায়।
হাত দুখানি ত্রিশূল করো ঘাত প্রতিঘাতে বন্য,
হায়েনার রক্ত স্নানে হেসে জীবন করো যে ধন্য।

 

 

পরিক্রমণ

“রক্ত করবী’র নন্দিনী” কিংবা 
“শেষের কবিতা’র লাবণ্য” হতে 
চাইনি কোনোদিন কোনোকালে।
হতে চেয়েছিলেম ‘জীবনানন্দ দাশ-এর 
বনলতা সেন',
হাত বাড়ালেই যাকে স্পর্শ করা যাবে 
আপন হৃদয়ের আদলে।

‘নন্দিনী’র ব্যাকুলতা কিংবা ‘লাবণ্য’র উদারতা
কোনোটিরই সমর্থক নই আমি,
ভালোবাসার নির্জনতায় বর্ণালী জীবনের 
বহতা প্লাবনে পরিশুদ্ধ হয়ে অনুভব করবো 
পরস্পরের আকুলতা।

আমাদের ভালোবাসার ঢেউ আছড়ে পড়বে 
আটলান্টিক মহাসাগরের বিশাল বুকে,
তোমার অন্তর্ভেদী দৃষ্টি ভেদ করে যাবে 
মারিয়ানা ট্রেঞ্চের গভীরতাকে
কিংবা
তোমার বাধভাঙা উচ্ছ্বাস-
টর্নেডো হয়ে উড়িয়ে নিয়ে যাবে প্রশান্ত মহাসাগরের প্রাখর্যকে।

জীবনের বাঁকে বাঁকে আমি তোমাকে 
হারিয়ে তোমাকেই খুঁজবো বারংবার,
হয়তো খুঁজে পাবো মিহিরের আবীর রাঙা প্রভাত হাসি
নক্ষত্ররাতে বালুর চরে সাজাবো বাসর অনাদিকালের, 
আমার-তোমার প্রেমের পঙক্তিমালা-
বিভাসিত প্রভার উষ্ণতায় হবে বাসি!

হাওয়াই আইল্যান্ডের ‘মওনা কিয়া’য় আবাস গড়বো দু’জন
যেনো পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন এক মহাজাগতিক সংসার,
কেবল যেনো দু’জন দু’জনের একান্ত 
আপন সুজন।

আমাজনের ‘রেইন ফরেস্ট’-এ হাঁটবো দু’জন হাত ধরে
হাজারো পর্ণী-পল্লব আর শ্বাপদের বাহুতলে,
যেনো প্রথম আসা দু’জন নর-নারী, এ পৃথিবীর পরে।

হাত ধরে তোমার হেঁটে যাবো
সভ্যতার পর সভ্যতা, নগরীর পর নগরীর ভিড়ে,
যুদ্ধের জয়-পরাজয়, উন্মত্ত শোণিতের ধারা অবলোকন করবো 
এ যাবতকালের সব যুদ্ধের ময়দান থেকেই,
মায়া, মহেঞ্জদারো, হরপ্পা, গ্রিক, মিশরীয়, নিনেভে, আশিরীয়, পার্সিয়ান, ব্যবিলনীয়, সাং, জাও
লু কিংবা বিস্ময়কর রোমান সভ্যতার তীরে।

নন্দিনী’র বন্দিত্ব কিংবা লাবণ্য’র গৃহকোণ
কোনোটাই নয় আমার কাম্য,
সভ্যতার পরতে পরতে হাঁটতে চাই-
কেবল তোমারই হাত ধরে;
দেখতে চাই-
কোথায়, কোন মানুষ স্বর্গে আছে স্বপ্নের কাঙ্ক্ষিত ‘সমতা-সাম্য’।

লেখক : সুফিয়া শীলা, পার্সিভ্যাল হিল প্রফেসরস কোয়ার্টার, চট্টগ্রাম কলেজ, চট্টগ্রাম।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়