Cvoice24.com

কবি মাহবুব উল আলম চৌধুরীকে মনে রাখেনি চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: ১৪:৫০, ৭ নভেম্বর ২০২০
কবি মাহবুব উল আলম চৌধুরীকে মনে রাখেনি চট্টগ্রাম

ছবিঃ সিভয়েস

‘একজন কবি কি-ই বা চায়! ভালোবাসা ছাড়া তার তো আর কিছু চাওয়ার থাকে না। কবি মাহবুব উল আলম চৌধুরী তো আর নেই। তিনিতো আমাদের দেখছেন না। কিন্তু আমাদের ভালোবাসায় যে কার্পণ্য- তা দুঃখজনক। তার এ জন্মদিন উদযাপনহীন হওয়ার কথা ছিলো না। অথচ তাঁকে নিয়ে কোথাও কোনো উদযাপন নেই। তাঁকে কেউ মনেই রাখেনি। এ কাজটি মেনে নেয়ার মতো না।’

আজ শনিবার (৭ নভেম্বর) কবি মাহবুব উল আলম চৌধুরীর ৯৪তম জন্মবার্ষিকী। কিন্তু এ দিনটিকে ঘিরে নেই কোন বিশেষ আয়োজন। এমনকি তার জন্মস্থান চট্টগ্রামেও তাঁকে নিয়ে কোনো আয়োজন করেনি স্থানীয় কোনো সাংস্কৃতিক সংগঠন। এ আক্ষেপ প্রকাশ করে গিয়ে একুশে পদক প্রাপ্ত শয্যাশায়ী কবি হেলাল হাফিজ সিভয়েসকে এসব কথা বলেন।
 
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার মো. মোসলেম উদ্দিন সিভয়েসকে জানান, ‌‘‌আজকে শিল্পকলা একাডোমিতে কবি মাহবুব উল আলম চৌধুরীর জন্মদিন নিয়ে কোন আয়োজন নেই।’

নগরীর শিল্পকলা, চেরাগী, সিআরবিসহ বিভিন্ন জায়গা সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কোথাও কোনো আয়োজন নেই। সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো করোনার কারণে কোনো মঞ্চে কোনো ধরনের আয়োজন করছে না। তবে অনলাইনে তারা বিভিন্ন দিবসে নানা ধরনের আয়োজন করে থাকেন। অথচ ভাষা আন্দোলনের প্রথম কবিতা যিনি রচনা করেছেন তার জন্মদিনে কোনো অনলাইনভিত্তিক আয়োজনও চোখে পড়েনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কোনো সাংস্কৃতিক গ্রুপে।

এ নিয়ে হতাশার সুরে কবি হেলাল হাফিজ বলেছেছেন, ‘আজ আমরা মানুষকে ভালো না বাসার সংস্কৃতিতে ধাবিত হচ্ছি। আমাদের মধ্যে যে ক্রোধ-ঘৃণা জন্ম নিয়েছে তা আমাদের গ্রাস করে খাচ্ছে। স্বার্থের উর্ধে গিয়ে আমরা কাউকে ভালোবাসতে পারছি না। এভাবে ভালোবাসতে ভুলে গেলে, কেউ কাউকে স্মরণ রাখবে না। এটি আগামীর খুব ভয়ানক ইঙ্গিত।’

চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার গহিরা গ্রামের আসাদ চৌধুরীর বাড়িতে ৭ নভেম্বর, ১৯২৭ সালে কবি মাহবুব উল আলম চৌধুরীর জন্মগ্রহণ করেন। পিতা আহমাদুর রহমান চৌধুরী ও মাতা রওশন আরা চৌধুরী। 

মাহবুব উল আলম চৌধুরীর অন্যতম কাব্যগ্রন্থ, ‘কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে আন্দোলনকারী ভাষা সৈনিকদের ওপর পুলিশের গুলি ও ছাত্র নিহত হওয়ার তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ স্বরূপ কবি মাহবুব উল আলম চৌধুরী ‘একুশে’ শিরোনামে রচনা করেন তাঁর বিখ্যাত এ কবিতা।

মাহবুব উল আলম চৌধুরীর কর্মজীবন নানা সংগ্রাম ও আন্দেলনে পরিপূর্ণ ছিল। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনসহ ৪৭’র সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন তিনি। ১৯৪৭ সালের নভেম্বর মাসে প্রগতিশীল মাসিক ‘সীমান্ত’ তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় (১৯৪৭-১৯৫২)। ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বর মাসে রাষ্ট্রভাষার ওপর প্রথম সম্পাদকীয় লেখা হয়। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার সপক্ষে চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত কোনো সাময়িক পত্রিকার প্রথম সম্পাদকীয় এটি। 

১৯৫০ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সর্বপ্রথম বিশ্বশান্তি পরিষদের শাখা চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি ওই পরিষদের সম্পাদক ছিলেন। ১৯৫২ সালে তিনি চট্টগ্রাম জেলা রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ছিলেন। ১৯৪৮ থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন মাহবুব উল আলম চৌধুরী।

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় নিহত শহীদদের স্মরণে প্রথম কবিতা ‘কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’ রচনা করেন মাহবুব উল আলম চৌধুরী। সে সময় চট্টগ্রাম জেলা রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ছিলেন তিনি। পরে ওই কবিতাটি ৫০ হাজার লোকের সমাবেশে লালদীঘি ময়দানে পাঠ করেন চৌধুরী হারুন অর রশীদ। কবিতা পাঠের কারণে তাঁকে কারাভোগ করতে হয়েছে এবং ছাপার কারণে কোহিনূর প্রেসের ম্যানেজার দবির উদ্দিনকেও জেলে যেতে হয়েছিল।

মাহবুব উল আলম শুধু সাহিত্যিক ছিলেন না, ১৯৬৮ সালে চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার গহিরা গ্রামে গহিরা ডিগ্রি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি নানাভাবে মুক্তিযুদ্ধে নিজেকে জড়িত করেন। ১৯৭২ সালে তিনি চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত দৈনিক ‘স্বাধীনতা’ (১৯৭২-১৯৮২) পত্রিকার সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি ছিলেন।

বাংলাদেশ সরকার ২০০৯ সালে তাঁকে একুশে পদক (মরণোত্তর) প্রদান করে। চট্টগ্রামের এ মহান মানুষটি ২০০৭ সালের ২৩ ডিসেম্বর ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

-সিভয়েস/এইচবি/এসবি

সিভয়েস প্রতিবেদক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়