Cvoice24.com

স্বাধীনতা দিবসে সুফিয়া শীলা’র তিন কবিতা

সুফিয়া শীলা

প্রকাশিত: ১৬:১৪, ২৫ মার্চ ২০২১
স্বাধীনতা দিবসে সুফিয়া শীলা’র তিন কবিতা

কালরাত-সূর্যোদয়

কেমন ছিলো ‘পঁচিশ মার্চ’ দিনটা?
সকালের সূর্য কী জেনে গিয়েছিলো-
আজকের দিন হবে পরাধীনতার শেষ দিন,
বাতাসের পদধ্বনি কী টের পেয়েছিলো-
তার বুক ভারী হয়ে যাবে লক্ষ লাশের গন্ধে,
উদাসী দুপুর কী বুঝে নিয়ে নিয়েছিলো-
বাংলার জমিন আজ হবে মৃত্যু-উপত্যকা,
গোধূলির লাল আভা কী কেঁদে বুক ভাসিয়েছিলো-
এই ভেবে যে, 
আজকের রাতে হবে রক্তের পৈশাচিক নৃশংস হোলিখেলা, 
হায়েনারা উপড়ে নিবে প্রিয় সন্তানের জীবন্ত হৃৎপিণ্ড।
ভূলুণ্ঠিত হবে বাংলা মায়ের পবিত্র সবুজ আঁচল, 
মানবিক পূর্ণ্যাত্মারা আজ ক্রুশবিদ্ধ হবে তিমির গহ্বরে।

এই মহাজাগতিক আলো
দেখেছিলো কী সেই অনাগত ‘কালরাত’?
তবে কেনো বাজানো হলো না ইসরাফিলের শিঙা
খুলে যেতে অতীতের স-ক-ল উজ্জ্বল জানালা,
জেগে উঠতো সুবর্ণ অতীতের সব যোদ্ধাত্মারা!

কালরাত’র তিমিরে খুবলে নিলো দেহের মাংসপিণ্ড, 
রক্ত স্রোত-ধারা পদ্মা-মেঘনা-যমুনায় মিশে গেলো।
মাটির জঠরের রক্তদাগ ভেসে উঠলো পলাশ শিমুলের ডালে,
অনাদিকালের মৃত্যু-দেয়াল ছিন্ন করে উঠে দাঁড়ালো 
গৌরব উজ্জ্বল এক জাতিসত্তা।

ভোরের আরক্ত প্রভাতে জেগে উঠলো নতুন এক স্বদেশ!
‘কালরাত’-এর মৃত্যু উপত্যকার ধ্বংস স্তুপে দাঁড়িয়ে
মহাকাশের সমস্ত বাক্সবন্দি মুক্তির সীমানা ছাড়িয়ে
বুলেট আর বেয়নেটের লোহিত সাগর দু’পায়ে মাড়িয়ে 
ছাব্বিশ মার্চ- দিবাগত রাতের প্রথম প্রহরে
পিতার কণ্ঠে ধ্বনিত হলো—
পৃথিবীর বুকে নতুন এক মুক্তির মহাকাব্য সৃষ্টির ঘোষণা। 

সমস্ত অস্তিত্বকে নিংড়ে, মৃত্যুকে দু’পায়ে পিষ্ট করে
শোণিতের কালি দিয়ে লাল-সবুজের পতাকায় 
লিখিত হলো সেই অমর মহাকাব্য ‘স্বাধীনতা’।
নামান্তর- বাংলাদেশ।

 

অভ্যুদয়

ভয়ংকর রাতের নিস্তব্ধতা
ঝিঁঝিঁ পোকার শব্দে প্রাণের স্পন্দন
অনুভূতিহীন চারপাশে জোনাকির প্রাণ
অশুভ আত্মারা যেন ঘিরে আছে জীবনক্ষণ।

হঠাৎ কিছু বুটের ভারী শব্দ
কুকুরের আর্তচিৎকার
সজোড়ে আছড়ে পড়লো গাছের একটা ডাল।

তীব্র হতে লাগলো চারপাশের আর্তনাদ
আহাজারি, চিৎকার
হঠাৎ গুলির শব্দ;
আবার নীরবতা। 

প্রচণ্ড আর্তনাদে কেঁপে উঠলো উঠোনের মাটি
দরজায় সজোরে বুটের আঘাত
প্রিয়তমকে জড়িয়ে ধরলো সে
এখনো তার মেহেদীর দাগ যায়নি,
ভাঙেনি লজ্জা।

কিছু বুঝে উঠবার আগেই
ভেঙে গেলো দরজা,
বুটের তীব্র আঘাতে পাঁজর ভাঙ্গার শব্দ
একঝাঁক বুলেট খই হয়ে ফুটলো,
নিষ্প্রাণ হৃদয়-প্রতিবেশী
রক্তের ধারায় ঘর হতে উঠোনের আঁচল সিক্ত;
অসহায়, স্থির জীবনের চোখ!

আর...! 
নরপিশাচের রিরংসার কুৎসিত হাসি!

মায়ের মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে
এভাবেই ভোরের সূর্যে জন্ম তার
নাম— বাংলাদেশ।

 

 

পথিকৃৎ

সময়ের প্রয়োজনে স্ফুলিঙ্গের মতো উদগীরিত হতে
ক্ষুরধার নদীর উত্তাল ঢেউয়ের মতো উন্মত্ত করতে
কালঘুমের শয্যায় মহাপ্রলয়ের দুর্নিবার আঘাত হানতে
সর্বগ্রাসী ক্লান্তিকে সোনালি সূর্যস্নানে জাগিয়ে তুলতে—
প্রমিথিউসের মতো উঠে দাঁড়িয়েছিলেন একজন কিংবদন্তি। 

শতবছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙার ধারালো খড়গ হাতে
তমসাচ্ছন্ন বৃন্তচ্যুত অহর্নিশকে সূর্যোদয়ের অরুণ-প্রাতেঃ
জন্মান্ধ মুক্তির দরজায় দূরদর্শিতার চূড়ান্ত করাঘাত হেনে
অমানিশার উত্তাল লহরীর অগ্নি-জাগরণের দৃপ্ত শপথ মেনে
কালের হাত ধরে উঠে দাঁড়িয়েছিলেন এক মহামানুষ।

অস্তমিত মুক্তির অভ্রভেদের লক্ষ্যে সাঁজোয়া যুদ্ধ-বহর নিয়ে
সমুদয় শৃঙ্খলতার অধ্যাদেশকে দু’পায়ে মাড়িয়ে দিয়ে
তেজস্বী স্বাধীনতার লাল-সবুজের সামিয়ানাকে উপরে তুলে
আদিত্যের আবীরে তার আবহমান নকশা আঁকবে বলে
জনতার মঞ্চে উঠে দাঁড়িয়েছিলেন একজন ক্ষণজন্মা মানুষ।

জীবন-সুখের বর্ণালি বাস্তুভিটাকে নির্দ্বিধায় উজাড় করে
জ্বলন্ত মৃত্যুবাণে ঝাঁজরা হৃদয় যুদ্ধাঙ্গনে তোপের ’পরে
স্বাধীনতার ধ্বনি ধূমকেতুর ন্যায় পৌঁছে দিয়ে নিউরন কোণে
এক সদ্যজাত নব জাতকের জন্ম-মহালগ্নের মাহেন্দ্রক্ষণে
রক্ষাকবচ হয়ে উঠে দাঁড়িয়েছিলেন একজন জাতির পিতা।

হতভাগ্য জাতি, যার কাঁধে ভর দিয়ে নিলো স্বাধীনতার স্বাদ
কৃতঘ্নতার অস্ত্র দিয়ে তাকেই করলো হায়েনারা আঘাত
তিনি নেই, তবু আছেন সারা বাংলার শরীর-সত্তা জুড়ে 
থাকবেন পিতা, বাঙালি জাতিসত্তার বহমান কাল-কালান্তরে।

লেখক : সুফিয়া শীলা, বি-৩, পার্সিভ্যাল হিল প্রফেসরস কোয়ার্টার, চট্টগ্রাম কলেজ, চট্টগ্রাম।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়