Cvoice24.com

সুফিয়া শীলার ‘সোনালি কিরণ’

সুফিয়া শীলা

প্রকাশিত: ২২:০৯, ১০ অক্টোবর ২০২১
সুফিয়া শীলার ‘সোনালি কিরণ’

সোনালি কিরণ

 

ফিরে যাবো বলে—
একদিন জন্মেছিলাম স্বপ্নের হাত ধরে,
ফিরে যাবো সোনালি আলোর চিঠি নিয়ে।

শান্ত দীঘির জলে পড়বে না আর ছায়া,
ডাকবে না কেউ নাম ধরে আর;
সবুজ আঁচলে বাসা বাঁধবে না চিরকালের কোকিল,
উদ্যত আহ্বানে এলোমেলো হবে না আবাদি সময়।

হেমন্তের উষ্ণ বিকেলে কেউ আর দাঁড়াবে না
রঙধনু মনের বারান্দায়,
হৃদয়ের গোপন জমিনে আর জন্মাবে না নয়নতারার ঝাড়
কিংবা হাওয়ার রাতে বলবে না কথা কামিনীর সাথে;
আরক্ত প্রভাতে কেউ ছোঁয়াবে না ভালোবাসা-চুম্বন,
জাফরান সুখের সূর্যস্নানে রক্তকরবী করবে না আবদার।

মধ্য রাতের বৃষ্টিতে হাত ধরে নিয়ে যাবে না কেউ, 
ভরা জোছনায় শোনাবে না সেই চিরচেনা কবিতা;
অবসরের গান হবে তোমার হৃৎপিণ্ডের প্রতিটি স্পন্দন, 
পৃথিবীর সব নীরবতা তোমায় দিয়ে—
পৃথিবীর রোদ হয়ে ফিরে যাবো গোধূলির হাত ধরে একদিন। 

চলে যাবো অনন্ত নক্ষত্রবীথির পথে, 
সবকিছু পিছনে ফেলে—
মিশে যাবো মহাজাগতিক আলোর সোনালি অন্তরীক্ষে।

 

অধিকারনামা

হৃৎপিণ্ডটাকে স্পর্শ করো দু’হাতের সজীব মায়ায়,
হাজার বছরের অন্তহীন অপেক্ষার দহনকাল—
শেষ করে দাও এক ঝটকায়।

মায়ান সভ্যতার গভীর বনভূমির দেহ-মাঝে
পিরামিড হয়ে বসেছিলাম, 
জানা নেই— সে কতোদিন, কতোকাল!
সিন্ধু-হরপ্পা, ইনকা কিংবা আজটেক সভ্যতায়ও
ছিলাম আমি অপেক্ষায়— তোমার স্পর্শের,
তোমার জন্য আতাকামা মরুভূমিকে বানাতে চেয়েছিলাম 
চিরকালের সবুজ সোনালি আমাজন।

পুণ্ডা পারিনিয়াস থেকে পুণ্ডা দি সেক্সাস পর্যন্ত
খুঁজেছি তোমায় অন্তঃকরণের নীলাভ আলোয়, 
কালে কালে ‘ডানাকিল ডিপ্রেশন’ হয়ে গেছে 
হৃৎপিণ্ডের ধূসর দেয়ালের সব গাঁথুনি। 
অকোভাঙো নদীর মোহনায় কেটেছে হাজার বছর,
শিবাম শহরের বুকে আর পেট্রা নগরীর পথে পথে 
ক্লান্তিহীন হেঁটেছি জন্ম থেকে জন্মান্তর।

ভেবেছিলাম তোমায় একদিন খুঁজে পাবো
সুকাত্রা কিংবা মাদাগাস্কার-এর বুকে, 
কোথায় ভেসে আছো তুমি—
ডেডসী-তে?
নাকি লুকিয়ে আছো মারিয়ানা ট্রেঞ্চের অতল গহ্বরে?
মাঝে মাঝে মনে হয়, 
কোথায় আছো তুমি— আমার অবচেতন তা জানে;
তবুও যেতে আছে মানা,
‘এরিয়া ফিফটিওয়ান’-এর মতো রহস্যময় প্রেম  
সুরক্ষিত বলয়ে আবদ্ধ আছে কনডেম সেল-এ;
ভেতরে প্রবেশের নেই কোন অধিকারনামা।

 


আলোছায়ার মায়া

আঁচলে বাঁধা সুখ জীর্ণ পাতায় মুড়ে,
বালুচর হাহাকারে কাঁদে চুপে মন;
একাকী চোরকাঁটায় গেঁথে আছে ইচ্ছের সুখ, 
হাওয়ায় ভাসে আদিষ্ট সবুজ জীবনের প্রেম। 

বিবর্ণ দু’চোখের মায়িক ছায়ার ভাঁজে, 
নদী হয়ে ছুটে চলে নিরাবরণ চোখের কাজল ;
মাছরাঙা কিংবা শাদা বক আষাঢ়ের সন্ধ্যায়—
এখন আর ডুব দেয় না সেই নদীর দেহে,
নোনা নদী ক্লান্ত হয়ে মিশে গেছে গোলাপি আঁচলে।

মাঝে মাঝে স্মৃতির উজ্জ্বল রেবতীরা পথ ভুলে
নদীর জলে ডুব সাঁতার কাটে প্রগাঢ় আবেশে, 
চলে যাওয়া কালের দখিন বাতাস মন ভুলে 
শিস দিয়ে যায় কৃষ্ণচূড়ার এলোমেলো হৃদয়ে;
অশ্বত্থের শিকড় তখন গভীর থেকে আরো 
গভীর নিতলে তলিয়ে যায় অবলীলায়। 

ভালোবাসার কোনো নক্ষত্র রাত এখন আর
হেসে উঠে না শরতের কাশফুল হয়ে, কিংবা 
ভরা জোছনার জোয়ারের তীব্র আহ্বানে 
আর ভাসে না চিরকালের কাঙাল হৃৎপিণ্ড। 
কখন যে চলে গেছে তার হলুদ বসন্তকাল—
কোকিলের জানা হয়নি সে সত্য আজও।

ঝাপসা চোখের উদাস চাহনির আকুতির ভাঁজে, 
রঙধনু-আলো আগুন হয়ে ধরা দেয় আজও;
তবুও হৃৎপিণ্ডের জমিনে জন্মায় না সবুজ জীবন, 
বিদীর্ণ সময়ের মাঝে প্রতিফলিত হয়ে ফিরে আসে 
কাঙ্ক্ষিত আলোর দৃশ্যমান সব মায়াবী ছায়া;
যে ছায়ার মায়া কাটে না কোনোদিন কোনোকালেই।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়