চারদিনেও গণপরিবহনে ঝুলেনি ভাড়ার তালিকা!
সিভয়েস প্রতিবেদক
জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন ভাড়া বাড়ানোর চারদিনেও চট্টগ্রাম নগরের গণপরিবহনে টাঙানো হয়নি ভাড়ার তালিকা। ফলে ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায়ের কারণে যাত্রীদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত বাকবিতণ্ডার ঘটনা ঘটছে পরিবহন শ্রমিকদের সঙ্গে।
বুধবার (১০ আগস্ট) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কোনো রুটের গণপরিবহনেই টাঙানো হয়নি ভাড়ার তালিকা। অথচ তালিকা না থাকলেও দূরত্বভেদে ৫ থেকে ২০ টাকা বাড়তি ভাড়া আদায় করতে দেখা গেছে। এ সময় অনেক যাত্রী ভাড়ার তালিকা দেখতে চাইলে বাসের হেলপারদের সঙ্গে শুরু হয় তর্কবিতর্ক।
এদিকে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের দাবি— ভাড়া বাড়ানোর প্রজ্ঞাপন এলেও রুট অনুযায়ী ভাড়ার তালিকা এখনও তারা পায়নি। ফলে বাড়তি আদায়ে যাত্রীদের সঙ্গে ঝগড়াঝাটি হচ্ছে। এ সকল জটিলতা এড়াতে বাস বন্ধ রেখেছেন অনেক রুটের চালকরা।
বুধবার দিনের বিভিন্ন সময় নগরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে গণপরিবহন কিছুটা কম দেখা গেছে। বন্ধের পরের দিন হিসেবে কর্মদিবসে বাসের স্বল্পতায় দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
মুরাদপুরে বাসের অপেক্ষায় থাকা মুনিব হোসাইন বলেন, ‘রাস্তায় অনেকক্ষণ ধরে বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছি। একটা বাস আসলেই মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। গতদিনও এমন হয়েছে। এছাড়া নির্ধারিত ভাড়ার চেয়েও বাড়তি ভাড়া নিচ্ছে বাসগুলো।’
এদিকে কালুরঘাট থেকে বাসে করে এসে নেমেছেন বাস টার্মিনালে। নামার সময় বাস হেলপারের সঙ্গে ঝগড়ায় বাধেন তিনি। পরে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কালুরঘাট থেকে বাসটার্মিনালে দূরত্ব মাত্র ৫ কিলোমিটার। সেখানে নতুন তালিকা অনুযায়ী ভাড়া আসে ১৩ টাকা। অথচ তারা ১৫ টাকা দাবি করছে। তাদের কাছে ভাড়ার তালিকা খুঁজলে দেখাতে পারেনি। উল্টো গালাগালি শুরু করে দিয়েছে। অথচ প্রতিদিনই নাকি বিআরটিএ থেকে সকাল-সন্ধ্যা অভিযান চালাচ্ছে। কিন্তু এসব তো কেউ দেখছে না।’
আগ্রবাদ এলাকায় কথা হলে নগরের একটি বেসরকারি অফিসের কর্মকর্তা ফয়সাল আলম বলেন, ‘সরকার জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে। আর এরপরের দিনই বেড়ে গেছে বাস ভাড়া। এই প্রভাব পুরোটাই কিন্তু জনগণের ওপর পড়েছে। এছাড়া নতুন তালিকা প্রকাশ হওয়ার পরও পরিবহন শ্রমিকরা নতুন ভাড়ার নামে বেশি ভাড়া আদায় করে এখনও পকেট কাটছে।’
এদিকে পরিবহন চালক শফিউল্লাহ বলেন, ‘তেলের দাম বেড়েছে। নতুন তালিকাও প্রকাশ হয়েছে। কিন্তু এখনও আমাদের হাতে আসেনি। আর গাড়িতে তালিকা না থাকায় যাত্রীদের সঙ্গে আমাদের ঝগড়া করতে হচ্ছে। আমাদের যে ভাড়া আদায় করতে বলা হয়েছে; নিয়মানুযায়ী সেটাই আদায় করছি। বেতনের বাইরে এক টাকাও আমাদের পকেটে যাবে না।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিষয়টি স্বীকার করেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি বেলায়েত হোসেন বেলাল। তিনি সিভয়েসকে বলেন, ‘সময় স্বল্পতার কারণে সব গাড়িতে ভাড়ার তালিকা টাঙানো হয়নি। আগামীকালকের মধ্যে সব গাড়িতে ভাড়ার তালিকা টাঙানো থাকবে।’
তবে চট্টগ্রাম বিআরটিএ’র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ শাহরিয়ার মুক্তার বলেন, ‘বাড়তি ভাড়া আদায়ের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলছে। যারা নির্ধারিত ভাড়ার বাইরে অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে তাদের জরিমানা করা হচ্ছে। এ অভিযান চলমান থাকবে।’
এর আগে, গত ৫ আগস্ট রাত ১০টার দিকে অকটেন, ডিজেল, পেট্রোল ও কেরোসিনসহ সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। সেখানে নতুন দর অনুযায়ী ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটার প্রতি ৮০ টাকা থেকে ১১৪ টাকা, লিটার প্রতি পেট্রোলের দাম ৮৬ টাকা থেকে ১৩০ টাকা করা হয়েছে। এছাড়া অকটেনের দাম বেড়েছে ৮৯ টাকা থেকে ১৩৫ টাকা। প্রজ্ঞাপনে রাত ১২টার পর থেকে নতুন এ দাম কার্যকর হওয়ার বিষয়টি জানানো হয়। আর এতেই পুরনো দামে জ্বালানি কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল গাড়ি চালকরা।
এসময় রাতে পেট্রোলপাম্প থেকে ‘তেল না পাওয়ায়’ শনিবার (৬ আগস্ট) সকাল থেকে চট্টগ্রামে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পরিবহন মালিক গ্রুপ।
একইদিন দুপুরে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সঙ্গে বৈঠকের পর চট্টগ্রামে গণপরিবহন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে মেট্রোপলিটন পরিবহন মালিক সমিতি। পরে ডিজেল চালিত সব গণপরিবহনের বর্ধিত ভাড়া পুনঃনির্ধারণ করে দূরপাল্লার বাসে ২২ শতাংশ এবং চট্টগ্রাম নগরের বাসে ১৬.২৭ শতাংশ ভাড়া বাড়িয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। পরে রোববার নতুন ভাড়ার প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
-সিভয়েস/এমএম/এআর