Cvoice24.com

বীরের হাতে বীর চট্টলা

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০১:৪১, ২৮ জানুয়ারি ২০২১
বীরের হাতে বীর চট্টলা

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নতুন নগরপিতা রেজাউল করিম চৌধুরী।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন পেল নতুন নগরপিতা। বেসরকারিভাবে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। তিন লাখ ১৬ হাজার ৭৫৯ ভোটের বিশাল ব্যবধানে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেনকে পরাজিত করেন।  

দফায় দফায় সংঘর্ষ। কেন্দ্র থেকে এজেন্ট বের করে দেওয়া, পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে না দেওয়া— এমন অভিযোগসহ বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ-সহিংসতার মধ্যে দিয়ে সাঙ্গ হলো চট্টগ্রাম সিটির নির্বাচন। এতে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী রেজাউল পেয়েছেন ৩ লাখ ৬৯ হাজার ২৪৮ ভোট। আর ধানের শীষ নিয়ে শাহাদাত ভোট পেয়েছেন ৫২ হাজার ৪৮৯টি। ১৯ লাখ ১৭ হাজার ৯৭৮ ভোটের মধ্যে শতকরা হারে ভোটগ্রহণ হয়েছে ২২ দশমিক ৫২ শতাংশ। 

বুধবার দিবাগত রাত ১টা ৩৫ মিনিটে চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেসিয়ামে নির্বাচন কমিশনের অস্থায়ী নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে ভোটের ফল ঘোষণা করেন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা হাসানুজ্জামান। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মোট ৭৩৩ কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হয়। তবে ইভিএম ভাঙচুরের ঘটনায় স্থগিত করা হয় দুটি কেন্দ্রের ভোট।

পাহাড়, সাগর ও সমতল— এই তিনের সমন্বয়ে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। ১৬১ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের বীর চট্টলাখ্যাত এই নগরের নির্বাচিত মেয়র প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী। ১৯৯৪ সালে চসিকের প্রথম নির্বাচনেই তিনি মেয়র নির্বাচিত হন।  

২০০৫ সালের নির্বাচনেও বিএনপির মেয়র প্রার্থী মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে পুনরায় নির্বাচিত হন মহিউদ্দিন চৌধুরী। চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাবেক এই সভাপতি টানা ১৭ বছর আগলে রেখেছিলেন মেয়রের চেয়ার। অবশ্য ২০১০ সালে নিজের রাজনীতিক শিষ্য বিএনপির মেয়র প্রার্থী এম মনজুর আলমের কাছে হেরে যান বর্ষীয়ান এ নেতা। ২০১৫ সালের নির্বাচনে মনজুরকে হারিয়ে সাম্রাজ্য পুনরুদ্ধার করেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দীন। 

সর্বশেষ করোনার কারণে স্থগিত হওয়া নির্বাচন ১০ মাস পর শুরু হলেও নতুন করে মহামারিকে ছাপিয়ে আতঙ্ক ছড়ায় সরকার দলীয় প্রার্থীদের মধ্যে সংঘাতের খবর। ভোটগ্রহণের শুরু থেকেই অনেক কেন্দ্রে ঘটে সংঘর্ষ-সহিংসতা। এতে করে পাহাড়তলী ওয়ার্ডের ইউসেফ আমবাগান টেকনিক্যাল স্কুল ভোটকেন্দ্রে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান আলাউদ্দিন নামের এক যুবক। 

স্থানীয়রা জানান, সকালে ভোটগ্রহণ শুরুর পর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের ওই কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরী এবং বিদ্রোহী মাহামুদুর রহমানের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। তাছাড়া তুমুল সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে লালখান বাজার ওয়ার্ড, পাথারঘাটা ওয়ার্ড, দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডের কেন্দ্রগুলোতে। 

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্র বলছে- ভোটগ্রহণ থেকে শুরু করে ফলাফল ঘোষণার আগ পর্যন্ত চমেকে চিকিৎসা নিয়েছেন অন্তত ৪০ জন। এদের মধ্যে লালখান বাজারের ১০ জন, ৩নং দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডে সংঘর্ষে ১০ জন, চান্দগাঁও ওয়ার্ডে ৪ জন, পাথরঘাটা ও চকবাজার ওয়ার্ডে একজন করে এবং অন্যান্য ওয়ার্ডে ৬ জনসহ মোট ৩২ জন গুরুতর আহত। 

সংঘর্ষের–সহিংসতার জেরে নির্বাচন বর্জনের ঘটনাও ঘটেছে। ভোট চলাকালীন দুপুর আড়াইটার দিকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী জান্নাতুল ইসলাম। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমাদের এজেন্টদের বের করে দিয়েছে। বারবার নির্বাচন কমিশন এবং প্রশাসনকে ফোন করেও আমরা কোনো হেল্প পাইনি। সব জায়গায় নৌকার এজেন্টরা অবস্থান করছিল। এ কারণে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছি।’

নির্বাচন চলাকালীন একইভাবে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন ১৪, ১৫ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপি সমর্থিত সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী মনোয়ারা বেগম মনি। এসময় তিনি অভিযোগ করেছেন, নিজের ভোটটাও দিতে পারেন নি তিনি। তিনি বলেন, ‘আমি নিজের ভোটই দিতে পারিনি। আমার এজেন্টদের মেরে ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। পরিবারের সদস্যদের ওপর হামলা হয়েছে।’

-সিভেয়স/এপি

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়