Cvoice24.com

দুর্ঘটনায় বিছিন্ন দুই পা, হতদরিদ্রকে পুলিশই দেখালো স্বপ্ন

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২১:২১, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২১
দুর্ঘটনায় বিছিন্ন দুই পা, হতদরিদ্রকে পুলিশই দেখালো স্বপ্ন

মর্মান্তিক ঘটনার শিকার মো. ফোরকান। ছবি : সিভয়েস

পেশায় দিনমজুর তিনি। বাড়ি সন্দ্বীপ। হাটহাজারী উপজেলায় তার থাকার একটি ঘর আছে। তাও অন্যের আশ্রয়ে। সব মিলিয়ে দিনে এনে দিনে খাওয়া মানুষ যাকে বলে। প্রতিদিনের মতো কাজে বের হয়ে একদিন মহাবিপদে পড়ে যান তিনি। সীতাকুণ্ড এলাকায় কাজের সন্ধানে গিয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে চিরতরে হারান দু’টি পা।

দুর্ঘটনার পর সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে তাকে রেফার করা হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে। সেখানে তাকে ফেলে রেখে যায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক ড্রাইভার। চিকিৎসার জন্য এক দুয়ার থেকে অন্য দুয়ারে ঘুরলেও পাশে ছিলো না পরিবার। মূলত তার পরিবার জানতো না কোথায় আছেন তিনি। মর্মান্তিক ঘটনার শিকার এ ব্যক্তির মো. ফোরকান (৪২)। পরিবারের সন্ধান না পাওয়া পর্যন্ত সবাই তাকে অবহেলা করলেও দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে এসেছিল চমেক হাসপাতাল ফাঁড়ি পুলিশ।

ট্রেনে কাটা পড়ার ওই ঘটনাটি ঘটেছিল গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর। এরপর তার রক্তের প্রয়োজন হলে সেই রক্ত জোগাড়ের উদ্যোগ নিয়েছিলেন চমেক পুলিশ ফাঁড়ির অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জহিরুল হক ভূঁইয়া। এ হতদরিদ্র দিনমজুরের চিকিৎসার ব্যয়ভারও বহন করেছিলেন মানবিক পুলিশ হিসেবে সুপরিচিত পুলিশের এ কর্মকর্তা। তবে এটুকুতেই থেমে থাকেননি ওসি জহিরুল। রেখেছেন নিয়মিত খোঁজ-খবর।

সবশেষ সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) হতদরিদ্র এ দিনমজুরকে একটি হুইল চেয়ারও দেওয়া হয়েছে চমেক পুলিশ ফাঁড়ির পক্ষ থেকে। রক্ত দেয়া থেকে শুরু করে তিন মাসের চিকিৎসার খরচ, সাথে হুইল চেয়ারের কেনার টাকা যার সবটুকুই নিজ উদ্যোগে সংগ্রহ করেছেন নিজের বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে। সব খরচ যোগাতে গিয়ে নিজের পকেট থেকেও বেশ মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করতে হয়েছে মানবিক পুলিশকে।

পুলিশ জানান, গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর ফোরকানকে গুরুতর আহত অবস্থায় চমেকে নিয়ে আসা হলে তার পরিবারের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। চিকিৎসকরা তাৎক্ষণিক জানান, ফোরকানকে বাঁচাতে প্রয়োজন ৪ ব্যাগ রক্তের। তাকে ভর্তি করা হয় অর্থোসার্জারির ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে। পরে ফেসবুকের কল্যাণে পুলিশ খুঁজে বের করে ফোরকানের পরিবারকে। কিন্তু অপারেশন করে ফেলে দিতে হয় ফোরকানের দু’টি পা। তখনও প্রয়োজন হয়েছিল ১৩ ব্যাগ রক্ত। যার সবটুকুই জোগাড় করেছেন ওসি জহিুরুল।

ওসি জহিুরুল হক ভূঁইয়া সিভয়েসকে বলেন, ‘প্রায় ৩ মাস পর ফোরকান এখন সুস্থ হওয়ার পথে। কিন্তু তার স্বপ্ন হলো সে যেন একটু চলাফেরা করতে পারে। তাই চমেক পুলিশ ফাঁড়ির পক্ষ থেকে তাকে একটি হুইল চেয়ার দেওয়া হয়েছে।’

ফোরকান অনেকটা সুস্থ হয়ে উঠেছে জানিয়ে তিনি বলেন ‘তার ইচ্ছা, যেন সে একটু চলাফেরা করতে পারে। কিন্তু সে এতোটাই দরিদ্র হুইল চেয়ার কেনা টাকাও নেই। তাই গত তিন মাস ধরে বন্ধুবান্ধবের সহায়তায় ফোরকানের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। যতটুকু সম্ভব তাকে সহযোগিতা করবো।’

-সিভয়েস/এপি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়