Cvoice24.com

দেয়াল টপকে পালিয়েছেন হাজতি রুবেল 

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২২:১৩, ৮ মার্চ ২০২১
দেয়াল টপকে পালিয়েছেন হাজতি রুবেল 

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে পালিয়ে গেছেন হাজতি রুবেল।

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ফরহাদ হোসেন রুবেল নামে হাজতি উধাওয়ের তিন দিনের মাথায় তদন্ত কমিটির ধারণা, কারাগারের ফাঁসির সেলের ভবনের ওপর দিয়ে দেয়াল টপকে তিনি পালিয়েছেন।   

সোমবার দিনভর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের দিয়ে ড্রেন, সেফটিক ট্যাংকে তল্লাশি চালানোর পর ঘটনার দিনের সিসি টিভির ফুটেজ যাচাই করে কমিটির প্রধান ডিআইজি প্রিজন্স মো. ছগির মিয়া এ তথ্য জানিয়েছেন। 

তদন্ত সূত্র জানায়, হাজতি রুবেল ভোর ৫টা ১৫ মিনিটে কারাগারের কর্ণফুলী ভবনের ৫ তলার ১৫ নম্বর কক্ষ থেকে বের হন। সেখান থেকে বের হয়ে বাইরের পানির ট্যাংক থেকে হাত মুখ ধুয়ে নেন। এরপর ওই ভবন থেকে নীচে নেমে সাঙ্গু ভবনের পাশে অবস্থিত ফাঁসির মঞ্চের দিকে চলে যান। এরপর থেকে তার আর উপস্থিতি পাওয়া যাচ্ছে না সিসি ক্যামেরায়। তাই তদন্ত কমিটির ধারণা, ফাঁসির মঞ্চের পাশ দিয়ে কারাগারের উচু দেওয়াল টপকেই হাজতি রুবেল পালিয়ে গেছেন। 

তদন্ত কমিটির প্রধান খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি প্রিজন্স মো. ছগির মিয়া সিভয়েসকে বলেন, ‘রুবেল পালিয়েছে সেটা শতভাগ সত্য। কোন পথে পালাতে পারে তা নিশ্চিত হতে সম্ভাব্য সব কিছুই যাচাই করা হয়েছে। ঘটনার দিনের সিসি টিভির ফুটেজ দেখেছি। কোনও কোনও ফুটেজে তার উপস্থিতি মিললেও আবার কোনও কোনও ফুটেজে তার উপস্থিতি নেই। তবে একটি ফুটেজে তাকে ফাঁসির মঞ্চের পাশের দেয়ালের দিকে যেতে দেখা গেছে। আবার ওদিকে একটি বিড়ালেরও উপস্থিতিও দেখেছি। তাই শতভাগ নিশ্চিত করে বলতে পারছি না, ওদিকেই সে পালিয়েছে। এরপরও আমাদের ধারণা দেয়াল টপকেই হাজতি রুবেল পালিয়ে যেতে পারে।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা তার পালানোর বিষয়টি নিশ্চিত হলেও কারাগারের মত স্পর্শকাতর একটি স্থান থেকে কীভাবে একজন হাজতি পালিয়ে গেছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তাকে পালানোর জন্য নিশ্চয় কেউ না কেউ সহযোগিতা করেছে।’ 

শনিবার ভোর থেকে হাজতি রুবেলের সন্ধান না মেলায় দিনভর তল্লাশি করে সন্ধ্যায় জিডির পর রাতে মামলা করেন প্রত্যাহার হওয়া জেলার রফিকুল ইসলাম। জেলারের সাথে প্রত্যাহার করা হয়েছে ডেপুটি জেলার আবু সাদাতকে। কোতোয়ালী থানার মামলা নম্বর ২৩/২১। ধারা-দণ্ডবিধির ২২৪। কর্ণফুলী ভবনের ১৫ নম্বর সেলের দায়িত্বরত কারারক্ষী নাজিম উদ্দিন ও সহকারী কারারক্ষী ইউনুস মিয়াকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সহকারী প্রধান কারারক্ষী কামাল হায়দারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। 

উধাও হওয়া হাজতি রুবেলের খোঁজে সোমবার (৮ মার্চ) সকাল সাড়ে ১১টা থেকে কারাগারের অভ্যন্তরে থাকা ড্রেনগুলোতে তল্লাশি শুরু করে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি একটি দল। দুপুর পর্যন্ত ড্রেন ও সেপটিক ট্যাংকগুলোতে হাজতি রুবেলের খোঁজ না পাওয়ার কারণে সেখানে যুক্ত হয় আরও একটি সার্চ এণ্ড রেসকিউ টিম। কারাগারের ভেতরে থাকা ড্রেন ও সেপটিক ট্যাংকে কাজ করেছে ৩ সদস্যের একটি ডুবুরি দল। অন্যদিকে রেসকিউ টিমে ছিল ১১ জন সদস্য। সব মিলিয়ে দু’টি দলে ফায়ার সার্ভিসের মোট ১৪ জন সদস্য কাজ করে রুবেলকে খুঁজতে। কিন্তু কোথাও হাজতি রুবেলের সন্ধান পায়নি তারা।

সোমবার (৮ মার্চ) সকালে প্রথমে কারা কর্তৃপক্ষের গঠিত কমিটির প্রধান খুলনা বিভাগের ডিআইজি প্রিজন্স মো. ছগির মিয়াসহ তিন সদস্য চট্টগ্রাম বিভাগের কারা উপ-মহাপরিদর্শক এ কে এম ফজলুল হকের সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপর তারা চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের সঙ্গেও কথা বলেন। এ ছাড়া চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে আরেকটি তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। 

হাজতি উধাওয়ের ঘটনায় কোতোয়ালী থানায় দায়ের করা মামলার এজহারে উল্লেখ করা হয়, ‘শনিবার (৬ মার্চ) ভোর ৬টা থেকে তালামুক্ত করার পর ফরহাদ হোসেন ওরফে রুবেল নামে এক হাজতিকে পাওয়া যাচ্ছে না। যার হাজতি নম্বর ২৫৪৭/২১। তিনি গত ৯ ফেব্রুয়ারি সদরঘাট থানার একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আসেন। তার গ্রামের বাড়ি নরসিংদী জেলার রায়পুরা থানায়। আগের দিন শুক্রবার রাতে সবার সাথে রুবেলও কারাগারের কর্ণফুলী ভবনের ৫ম তলার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে থাকলেও ভোর সাড়ে ৬টার পর থেকে তার হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। পরে দায়িত্বরত কারারক্ষী ও হাজতিদের কাছ থেকে জানতে পারেন, হাজতি রুবেল শনিবার ভোর ৫টা ১৫ মিনিটে ওয়ার্ড থেকে বের হয়ে যান। পরবর্তীতে পুরো কারাগারে তল্লাশি করেও তার হদিস মেলেনি।’

রুবেল সদরঘাট থানার এসআরবি রেল গেট এলাকায় ৫ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে তুচ্ছ ঘটনায় আবুল কালাম আবু নামের এক ভাঙ্গারি ব্যবসায়ীকে বুকে ছুরিকাঘাত করেন। পরদিন সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আবুল কালাম হাসপাতালে মারা যান। ৬ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে হত্যার অভিযোগে ডবলমিুরিং থানার মিস্ত্রি পাড়া থেকে ফরহাদ হোসেন রুবেলকে গ্রেপ্তার করে সদরঘাট থানা পুলিশ। ওই মামলায় ৯ ফেব্রুয়ারি আদালতের মাধ্যমে কারাগারে যান রুবেল।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়