Cvoice24.com

চট্টগ্রামে আজ, বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪

সময় ঘন্টা মিনিট সেকেন্ড

কোয়ারেন্টাইন ওয়ার্ডে বাবুল আক্তার, রাতে পেলেন খিচুড়ি

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২১:৩৫, ১৭ মে ২০২১
কোয়ারেন্টাইন ওয়ার্ডে বাবুল আক্তার, রাতে পেলেন খিচুড়ি

প্রথমবারের মত কারাগারে যাওয়া এক সময়ের প্রতাপশালী পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তার কারাগারে কেমন আছেন? বিষয়টি নিয়ে পাঠকের নানা কৌতূহল। সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে, কারাগারে বাবুল আক্তারকে এখনও কোনো ডিভিশন দেওয়া হয়নি। তিনি সাধারণ বন্দীর মত কোয়ারেন্টাইন ওয়ার্ডেই আছেন। বিধিমত তাকে রাতের খাবার হিসেবে খিচুড়ি দেওয়া হয়েছে। তবে সাবেক পুলিশ সুপার ডিভিশন পাবেন কি না সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে মঙ্গলবার কারাগারে বৈঠকে বসবেন কর্মকর্তারা। 

সোমবার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিতে রাজি না হওয়ায় তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয় আদালত। এসময় তার আইনজীবী তাকে ডিভিশন দেওয়ার আবেদন করলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার জাহান কারাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।

বিকাল সাড়ে তিনটার পর কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে বাবুল আক্তারকে চট্টগ্রাম কারাগারে নেয়া হয়। কারাগারের প্রথম ফটকে চিকিৎসক নতুন হাজতি হিসেবে তাকে চেকআপ করেন। করোনার লক্ষণ না থাকায় বাবুলকে কোয়ারেন্টাইনের জন্য নির্ধারিত হালদা ভবনের পাঠানো হয়। সেখানে ১৪টি পৃথক রুম করা রয়েছে। নতুন হাজতিদের একেক দিন একেক রুমে রাখা হয়। প্রতিদিনই শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপসহ সুস্থতা যাচাই করে এরকম পালা করে প্রতিদিন ১, ২ ও ৩ নম্বর করে রুম পরিবর্তন করবেন। এভাবে ১৪ দিন পর চূড়ান্তভাবে শরীর চেকাপের পর তাকে সাধারণ ওয়ার্ডে প্রবেশ করানো হয়।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার দেওয়ান তারিকুল ইসলাম সিভয়েসকে বলেন, ‘উনাকে (বাবুল আক্তার) কারাগারের কোয়ারেন্টাইন ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। বর্তমানে নতুন হাজতিদের ওয়ার্ডেই রাখা হয়।’

তাকে রাতের খাবার কি দেওয়া হয়েছে জানতে চাইল তিনি বলেন, ‘বিধি অনুয়ায়ী একজন সাধারণ হাজতিকে যে সব খাবার দেওয়া হয় তাকেও সে খাবার দেওয়া হয়।’ 

কি খাবার জেলার তা না জানালেও কারা সূত্রে জানা যায়, অন্য নতুন হাজতির মত তাকেও ডালের খিচুড়ি দেওয়া হয়। তবে তিনি চাইলে উন্নত খাবার টাকা দিয়ে কিনে খেতে পারবেন।  

এদিকে আদালত সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারকে বিধি অনুযায়ী সুবিধা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। সেই প্রসঙ্গে জেলার তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের প্রথমে কাগজে কলমে নিশ্চিত হতে হবে তিনি এসপি বা সাবেক এসপি কিনা। সেটা নিশ্চিত হলেই আগামীকাল বৈঠক করে সে বিষয়ে বিধি অনুয়ায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।।

কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যদি বাবুল আক্তার সাবেক পুলিশ সুপার সেটার দালিলিক প্রমাণ তারা পায় তাহলে তাকে প্রথম শ্রেণির হাজতির মর্যাদা দেওয়া হতে পারে। 

ডিভিশনপ্রাপ্তরা কী ধরনের সুবিধা পান?

জেল কোড অনুসারে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের কারাগারে ডিভিশন প্রদান করা হয়। এছাড়া আদালতের নির্দেশেও কাউকে কাউকে ডিভিশন দেওয়া হয়। জেল কোড অনুযায়ী তিন শ্রেণির ডিভিশন দেওয়া হয়ে থাকে। ডিভিশন-১, ডিভিশন-২ এবং ডিভিশন-৩।

বিধি অনুসারে প্রথম শ্রেণির ডিভিশন-প্রাপ্তদের প্রত্যেক বন্দির জন্য আলাদা রুম থাকে। খাট, টেবিল, চেয়ার, তোষক, বালিশ, তেল, চিরুনি, আয়না সবকিছুই থাকে। আর তার কাজকর্ম করে দেওয়ার জন্য আরেকজন বন্দিও দেয়া হয়। ছেলে বন্দির ক্ষেত্রে সাহায্যকারী হিসেবে ছেলে আর মেয়ে বন্দির জন্য একজন মেয়ে থাকবেন।

এছাড়া তিনি বইপত্র পাবেন এবং তিনটি দৈনিক পত্রিকা পাবেন। সাধারণ বন্দিদের চেয়ে ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দির খাওয়ার মানও ভাল থাকে। ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দীদের জন্য টাকার পরিমাণটি বেশি থাকে। এ কারণে তারা চিকন চালের ভাত পান। সকালে রুটি, ডিম, কলা, ভাজি, বাটার, জ্যাম-জেলি চাইলে সেগুলোও দেওয়া হয়। দুপুরে ভাত-মাছ-মাংস তাদের সাথে কথা বলে ঠিক করা হয়। কিন্তু সাধারণ বন্দিদের ক্ষেত্রে এসব সুযোগ থাকে না।

জেল কোড: ডিভিশন পাওয়ার যোগ্য কারা?

জেল কোডের ৬১৭ নম্বর বিধিতে বলা হয়েছে যে, সাজাপ্রাপ্ত বন্দী ডিভিশন ১, ২ ও ৩ এই তিনটি ডিভিশনে বিভক্ত হবে। এর মধ্যে নাগরিকত্ব নির্বিশেষে নিম্নোক্ত বন্দিরা ডিভিশন ১ প্রাপ্তির যোগ্য হবেন-

(ক) যারা ভাল চরিত্রের অধিকারী ও অনাভ্যাসগত অপরাধী।

(খ) সামাজিক মর্যাদা, শিক্ষা এবং অভ্যাসের কারণে যাদের জীবনযাপনের ধরন উচ্চমানের।

(গ) যারা নৃশংসতা, নৈতিক স্খলন এবং ব্যক্তিগত প্রতিহিংসামূলক অপরাধ। মারাত্মক বা পূর্বপরিকল্পিত হিংস্রতা। সম্পত্তি সংক্রান্ত মারাত্মক অপরাধ। অপরাধ সংঘটনের উদ্দেশ্যে বা অপরাধ সংঘটনের ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বিস্ফোরক আগ্নেয়াস্ত্র এবং অন্যান্য মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্র সঙ্গে রাখা। উপরোক্ত অপরাধ সংগঠনের জন্য প্ররোচিত বা উত্তেজিত করার মত অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত বা মামলায় কারাবন্দী হয়ে হাজতি হয় তাদের ডিভিশন দেওয়া হয় না।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়