Cvoice24.com

কারাগারে সাধারণ বন্দির মতোই থাকছেন বাবুল আক্তার 

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৮:৫৭, ১৮ মে ২০২১
কারাগারে সাধারণ বন্দির মতোই থাকছেন বাবুল আক্তার 

স্ত্রী হত্যা মামলায় কারাবন্দি এক সময়ের প্রতাপশালী পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারকে কারাগারে কোনও বিশেষ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না। তাকে অন্যান্য হাজতিদের মতই সাধারণ ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। বতর্মানে তিনি কোয়ারেন্টাইন ওয়ার্ডে রয়েছেন। এর আগে গতকাল তার আইনজীবীর আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত কারাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়। পরের দিন মঙ্গলবার কারা কর্তৃপক্ষ আদেশ পর্যালোচনা করে জানায়, বাবুল আক্তারকে ডিভিশন দেওয়ার কোনও আইগত সুযোগ নেই। ডিভিশনের বিষয়ে আদালতের ষ্পষ্ট নির্দেশনা থাকতে হবে।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সফিকুল ইসলাম খান সিভয়েসকে বলেন, ‘আমরা কারাবিধি পর্যালোচনা করে দেখেছি, বাবুল আক্তার ডিভিশন সুবিধা পাবেন না। তাই তাকে সাধারণ বন্দিদের মত কোয়ারেন্টাইন ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে।’ আদালতের নির্দেশে কি ছিল তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আদালত বলেছেন, তাকে কারাবিধি অনুযায়ী সুবিধা নিশ্চিত করতে এখানে ডিভিশনের কথা উল্লেখ নেই। কেননা বিধি মতে তিনি ডিভিশন সুবিধা প্রাপ্তদের ক্যাটাগরিতে পড়েন নাহ।’ 

এর আগে গতকাল সোমবার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি না হওয়ায় তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয় আদালত। এসময় তার আইনজীবী তাকে ডিভিশন দেওয়ার আবেদন করলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার জাহান কারাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। ওই দিন জেলার দেওয়ান তারিকুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, ‘উনাকে (বাবুল আক্তার) কারাগারের কোয়ারেন্টাইন ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। বর্তমানে নতুন হাজতিদের ওয়ার্ডেই রাখা হয়েছে। আগামীকাল বৈঠক করে সে (ডিভিশন) বিষয়ে বিধি অনুয়ায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

এদিকে কারা সূত্রে জানা যায়, কারাবন্দি বাবুল আক্তার কারাগারে স্বাভাবিকই আছেন। কারাগার থেকেই যেসব খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে তা তিনি খাচ্ছেন। তিনি ওয়ার্ডে বেশির ভাগ সময় চুপচাপ বসে ও ঘুমিয়ে পার করছেন। 

ডিভিশনপ্রাপ্তরা কী ধরনের সুবিধা পান?

জেল কোড অনুসারে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের কারাগারে ডিভিশন প্রদান করা হয়। এছাড়া আদালতের নির্দেশেও কাউকে কাউকে ডিভিশন দেওয়া হয়। জেল কোড অনুযায়ী তিন শ্রেণির ডিভিশন দেওয়া হয়ে থাকে। ডিভিশন-১, ডিভিশন-২ এবং ডিভিশন-৩।

বিধি অনুসারে প্রথম শ্রেণির ডিভিশন-প্রাপ্তদের প্রত্যেক বন্দির জন্য আলাদা রুম থাকে। খাট, টেবিল, চেয়ার, তোষক, বালিশ, তেল, চিরুনি, আয়না সবকিছুই থাকে। আর তার কাজকর্ম করে দেওয়ার জন্য আরেকজন বন্দিও দেয়া হয়। ছেলে বন্দির ক্ষেত্রে সাহায্যকারী হিসেবে ছেলে আর মেয়ে বন্দির জন্য একজন মেয়ে থাকবেন।

এছাড়া তিনি বইপত্র পাবেন এবং তিনটি দৈনিক পত্রিকা পাবেন। সাধারণ বন্দিদের চেয়ে ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দির খাওয়ার মানও ভাল থাকে। ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দিদের জন্য টাকার পরিমাণটি বেশি থাকে। এ কারণে তারা চিকন চালের ভাত পান। সকালে রুটি, ডিম, কলা, ভাজি, বাটার, জ্যাম-জেলি চাইলে সেগুলোও দেওয়া হয়। দুপুরে ভাত-মাছ-মাংস তাদের সাথে কথা বলে ঠিক করা হয়। কিন্তু সাধারণ বন্দিদের ক্ষেত্রে এসব সুযোগ থাকে না।

জেল কোড: ডিভিশন পাওয়ার যোগ্য কারা?

জেল কোডের ৬১৭ নম্বর বিধিতে বলা হয়েছে যে, সাজাপ্রাপ্ত বন্দি ডিভিশন ১, ২ ও ৩ এই তিনটি ডিভিশনে বিভক্ত হবে। এর মধ্যে নাগরিকত্ব নির্বিশেষে নিম্নোক্ত বন্দিরা ডিভিশন ১ প্রাপ্তির যোগ্য হবেন-

(ক) যারা ভাল চরিত্রের অধিকারী ও অনাভ্যাসগত অপরাধী।

(খ) সামাজিক মর্যাদা, শিক্ষা এবং অভ্যাসের কারণে যাদের জীবনযাপনের ধরন উচ্চমানের।

(গ) যারা নৃশংসতা, নৈতিক স্খলন এবং ব্যক্তিগত প্রতিহিংসামূলক অপরাধ। মারাত্মক বা পূর্বপরিকল্পিত হিংস্রতা। সম্পত্তি সংক্রান্ত মারাত্মক অপরাধ। অপরাধ সংঘটনের উদ্দেশ্যে বা অপরাধ সংঘটনের ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বিস্ফোরক আগ্নেয়াস্ত্র এবং অন্যান্য মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্র সঙ্গে রাখা। উপরোক্ত অপরাধ সংগঠনের জন্য প্ররোচিত বা উত্তেজিত করার মত অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত বা মামলায় কারাবন্দি হয়ে হাজতি হয় তাদের ডিভিশন দেওয়া হয় না।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়