Cvoice24.com

জলাবদ্ধতা-জনদুর্ভোগের শেষ কোথায়? 

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৮:২৬, ৬ জুন ২০২১
জলাবদ্ধতা-জনদুর্ভোগের শেষ কোথায়? 

বৃষ্টির পানিতে মা ও শিশু হাসপাতালে পানি।

মাত্র কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতেই নাকাল চট্টগ্রাম শহরের মানুষের জীবন। বৃষ্টির কারণে নগরের বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, দুই নম্বর গেট, চকবাজার, কাপাসগোলা, বাকলিয়া, হালিশহর, চান্দগাঁও, প্রবর্তক, আগ্রাবাদ সহ নগরের বেশ কিছু জায়গায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। জলবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পে সাধারণ মানুষের মনে আশা জাগলেও এখন তাদের প্রশ্ন আদৌও জলাবদ্ধতা দূর হবে কিনা?

খোদ কদিন আগে চট্টগ্রামের মেয়রই আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছিলেন, আগামী এক মাসের মধ্যে যদি খালের ভেতর স্থাপিত অস্থায়ী বাঁধগুলো অপসারণ করা না হয় তাহলে বর্ষায় গলা সমান পানিতে ডুবতে পারে মানুষজন। 

যদিও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নিয়েছে। সেটি বাস্তবায়ন করছে সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন বিগ্রেড। এই প্রকল্পের আওতায় খালগুলোর মুখে জলকপাট ও প্রতিরোধ দেয়াল নির্মাণের কাজ চলছে। এ জন্য খালের ভেতরের বিভিন্ন অংশে অস্থায়ীভাবে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। সিটি করপোরেশন বলছে, এসব বাঁধের কারণেই মূলত পানি জমে গিয়ে নগরজুড়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। 

এদিকে জলাবদ্ধতার এই দুর্ভোগে নগরবাসীর মনে আতঙ্ক বেড়েছে বজ্রপাত নিয়ে। কেননা একদিনের চট্টগ্রামের তিন উপজেলায় চারজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে অন্তত আরও তিন থেকে চারজন। 

জনদুর্ভোগের আরেক নাম বহদ্দারহাট। একটু ‍বৃষ্টি হলেই অলি-গলি থেকে শুরু করে প্রধান সড়ক তলিয়ে যায় বৃষ্টির পানিতে। এই এলাকায় রাস্তা আর ফুটপাত আলাদা কিছু নেই। পথচারীরা রাস্তা পারাপার হতে পারছেন না, ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকেও পাচ্ছেন না গণপরিবহন। অল্প কিছু গণপরিবহন পাওয়া গেলেও ছেড়ে যাচ্ছে না নির্দিষ্ট গন্তব্যে।

কেবল বহদ্দারহাট নয়, একই চিত্র মুরাদপুরেও। সাধারণ মানুষ উদ্গ্রীব হয়ে উঠেছে গণপরিবহনের জন্য। কিন্তু দেখা মিলছে না গণপরিবহনের। গণপরিবহন না পেয়ে অনেকেই হাঁটতে শুরু করেছেন। এই সড়কে জলাবদ্ধতা সৃষ্টির কারণে চট্টগ্রামের প্রধান সড়কটিতে যান চলাচল বন্ধ থাকে কয়েক ঘন্টা ধরে। 

বহদ্দারহাটে কথা হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলামের সঙ্গে। ক্ষোভ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বহদ্দারহাট এখন বহদ্দার খালে রূপ নিয়েছে। বাসার সামনে হাঁটু পরিমাণ পানি থেকে এখন এক কোমর পানিতে দাঁড়িয়ে আছি। এতো উন্নয়ন!’ ‘এটি সত্যিই আমাদের অক্ষমতা আর মেধাহীনতার পরিচয়’—বলেন তিনি।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা মাকসুদুর রহমান বলেন, ‘প্রতিদিন সিএনজিতে করে অফিসে যাই। কিন্তু পানি ওঠার কারণে প্রায় সব ধরনের যানবাহনে পানিতে আটকে পড়ার সম্ভাবনা। বাধ্য হয়ে দ্বিগুণ ভাড়ায় রিকশা নিয়েছি। এতেও দুর্ভোগের শেষ নেই। ছোট-খাটো গর্তে চাকা ঢুকে আটকে থাকতে হচ্ছে প্রায় ১৫-২০ মিনিট।’

নগরের মোহরা থেকে আসা খুলশীতে আসা একজন বলেন, ‘আমার মোহরা থেকে খুলশী আসতে সিএনজি অটোরিকশায় ভাড়া নেয় দেড়শ টাকা। কিন্তু আজকে কোনও গাড়িই পাচ্ছি না। যা পাচ্চি তা চারশ থেকে সাড়ে তিনশ’র নিচে আসছে না। কেননা তাদের অনন্যা আবাসিক অক্সিজেন দুই নম্বর গেট হয়ে আসতে হলো। আমিও তেমন করলাম। এর দায় কে নেবে?’ 

মুরাদপুর এলাকার বাসিন্দা সাইফুল কবির সিভয়েসকে বলেন, ‘বাসা থেকে রাস্তা সবখানে পানি। এক হাঁটু পানির মধ্য দিয়ে অফিস যাওয়ার জন্য ঘর থেকে বের হয়েছিলাম। কিন্তু কোনো যানবাহনই পাচ্ছি না। পাবো কিভাবে? গাড়ি তো রাস্তায় চলে এমন নদীতে কি করে গাড়ি চলবে! যতই বৃষ্টি বাড়ছে ততই পানি বাড়ছে। এখন এক কোমর পানিতে দাঁড়িয়ে আছি। কি করবো বুঝতে পারছি না।’

গত ২৪ ঘণ্টায় (৫ জুন বিকেল ৩টা থেকে ৬ জুন বিকেল ৩টা পর্যন্ত) ৭৯ দশমিক ৪০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রের্কড করেছে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস। আগামী ২৪ ঘণ্টাও এরকম বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে তারা।

চট্টগ্রাম পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ ড. শহিদুল ইসলাম সিভয়েসকে বলেন, ‘দেশের আকাশে মৌসুমী বায়ু বিরাজমান। ফলে রবিবার বিকেল ৪টা থেকে আগামীকাল সোমবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত চট্টগ্রামে ভারী থেকে বজ্রসহ বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেকারণে আগামী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে পাহাড় ধসের আশংকা রয়েছে।’

চট্টগ্রাম আমবাগান আবহাওয়া অফিসের তথ্যানুযায়ী, নগর ও আশপাশের এলাকায় সকাল ৮টা থেকে বৃষ্টি ও বজ্র বৃষ্টি শুরু হয়। আর এই এক ঘণ্টায় মোট ১১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

জলাবদ্ধতায় শুধু রাস্তাঘাটে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে এমন নয়। নিম্নাঞ্চলের বাসা-বাড়ি, হাসপাতালে ঢুকে পড়েছে জলাবদ্ধতার পানি। এতে করে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বাসা-বাড়ির মানুষজনকেও।

রবিবার দুপুর থেকে আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালের নিচের তলায় পানিতে টইটম্বুর। সেবা প্রার্থীদের এ নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। 

অন্যদিকে জলাবদ্ধতায় আর বৃষ্টিতে চরম বেকায়দায় পড়েছেন নিম্নআয়ের লোকজন। জলাবদ্ধতার কারণে তারা কাজে বেরুতে পারেননি।

জলাবদ্ধতা নিরসনে দায়িত্ব প্রাপ্ত চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কোনও কর্মকর্তাই ফোন না ধরায় কথা বলা সম্ভব হয়নি। প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মাঈনুদ্দীন, প্রধান প্রকৌশলী হাসান বিন শামস ও চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ— এদের তিনজনই ফোন ধরেননি। 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়