Cvoice24.com

১৫ বছর ধরে লাশ কাটা ডোমের বেতন মাত্র সাড়ে তিন হাজার !

ইয়াসির রাফা

প্রকাশিত: ২১:৩৭, ২২ জুন ২০২১
১৫ বছর ধরে লাশ কাটা ডোমের বেতন মাত্র সাড়ে তিন হাজার !

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মর্গের বর্তমান ডোম কদম আলী। ময়নাতদন্তের জন্য আসা মৃতদেহের কাটাকাটির কাজটি করে আসছেন দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে। ২০০৬ সালে তার ডোম ওস্তাদ নেপাল দাশের হাত ধরে এই পেশায় আগমন। অস্থায়ী হিসেবে শুরুর দিকে কোন টাকাই পেতেন না। পরে তিন হাজার টাকা বেতনে কাজ শুরু করলেও দীর্ঘ ১৫ বছরে তার বেতন বেড়েছে মাত্র ৫'শ টাকা। অর্থাৎ কদম আলী পান মাসে সাড়ে তিন হাজার টাকা। 

প্রাপ্ত বেতনে যাতায়াত খরচ সংকুলান না হলেও এই কাজ মানবতার খাতিরে নাম মাত্র বেতনে এই সেবা দিয়ে আসছেন কদম আলী। কর্তৃপক্ষের কাছে বছরের পর বছর বেতন বৃদ্ধির অনুরোধ জানালেও তার এই অনুরোধ আমলে নেওয়া হয়নি। যদিও সরকারি নীতিমালার দোহাই দিয়ে দায় সারছে চমেক কর্তৃপক্ষ। 

এক সময় চমেক ফরেনসিক মেডিসিন মর্গের তৎকালীন প্রধান ডোম নেপাল দাশের গৃহপালিত পশুর দেখভাল করতেন কদম আলী। যদিও পাশাপাশি নেপালের সহকারি হিসেবে কাজ করতেন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে। পরবর্তীতে গুরু নেপালের সাথে লাশঘরে যাওয়া-আসা শুরু হয় তার (কদম আলী)। প্রথমদিকে নেপালকে ময়নাতদন্তের কাজে সাহায্য করতেন কদম। ধীরে ধীরে নেপাল দাশের সাথে থেকে মৃতদেহ কাটাকাটিতে পরিপক্ক হয়ে ওঠেন কদম। ওস্তাদ অবসরে যাবার পর ভারপ্রাপ্ত ডোম হিসেবে কাজ শুরু করে এখন পর্যন্ত দক্ষ হাতের ছোঁয়ায় ভূমিকা রেখেছেন রহস্য উদঘাটনে। যে লাশকাটার ঘর শুনলেই ভয়ে শিউরে উঠে মানুষের শরীর সেই ঘরের দায়িত্ব একাই সামলাচ্ছেন কদম আলী। বছরে ময়নাতদন্ত করেন প্রায় হাজার খানেক মৃতদেহের।  

‘কাজের চাপ নিয়ে আমার কোন অভিযোগ নেই। তবে আক্ষেপ এক জায়গায়, প্রাপ্য পারিশ্রমিক আমাকে দেয়া হয় না।’— সিভয়েস প্রতিবেদকের সাথে আলাপে বিষাদভরা কন্ঠে এমনটাই জানান কদম আলী। তিনি বলেন, ‘এত বছর ধরে কাজ করছি কিন্তু আমার দিকে কারও নজর নেই। অবহেলার শিকার আমি। মাত্র সাড়ে ৩ হাজার টাকা বেতন আমার। এই যুগে এত সামান্য বেতনে চাকরির কথা আপনারা ভাবতে পারেন? যে বেতন আমাকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দেয় তা দিয়ে আমার যাতায়াত খরচও হয় না। বছর বছর তো সবার বেতন বাড়ে কিন্তু আমার বাড়ে কষ্ট আর হতাশা। বেতন বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েও বাড়াচ্ছে না। আমাদের দিকে তাকানোর কেউ নেই। মানবতার খাতিরে আগেও ছিলাম, এখনও আছি। আপনাদের মাধ্যমে কর্তৃপক্ষের কৃপাদৃষ্টি আশা করছি।’ 

ডোম বলে অনেকেই আড় চোখে দেখেন তাকে। এ নিয়ে কদম আলীর মনে কষ্টও অনেক। তিনি বলেন, ‘অনেকেই আমাকে আলাদা মানুষ ভাবে। কিন্তু আমি আলাদা নই, বাকি দশজনের মত আমিও স্বাভাবিক একজন মানুষ। কাজের ধরণটাই কেবল আলাদা। এটা আমার পেশা, আমার রুজি-রুটি। এটা করেই তো পেট চলে আমার। অভাবের তাড়নায় এই পেশাই এখন আমার সম্বল।’ 

চট্টগ্রাম মেডিকেলের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. সুমন মুৎসুদ্দীকে এ বিষয়ে ফোন করা হলে ব্যস্ততা অজুহাত দেখিয়ে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।  

জানতে চাইলে কদম আলীর বেতন বাড়ানোর আশ্বাস দেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. সাহেনা আক্তার। সিভয়েসকে তিনি বলেন, ‘যারা অস্থায়ী ভিত্তিতে কাজ করেন তাদের জন্য কোন ফান্ড সরকার থেকে আসে না। বিষয়টি এমন নয় যে, সরকার কর্তৃক তার বেতন নির্ধারণ করা আছে কিন্তু তা দেয়া বা বৃদ্ধি করা হচ্ছে না। তবুও তার বিষয়টি মানবিক বলে মনে করেন অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. সাহেনা আক্তার। এ বিষয় মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হবে।’ 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়