Cvoice24.com

রেলওয়ে হাসপাতাল নির্মাণের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী— সেতুমন্ত্রীর বার্তা (ভিডিও)

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৭:৪০, ১৮ জুলাই ২০২১

 

চট্টগ্রাম নগরের বুকে এক টুকরো সুবজে ঘেরা সিআরবিতে আধুনিক হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগকে পরিবেশ বিরোধী আখ্যা দিয়ে এর বিরোধিতায় নেমেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। প্রকল্প বিরোধী আন্দোলনে উত্তাল চট্টগ্রাম। জনগণের বিরোধিতা স্বত্ত্বেও বর্তমান রেলওয়ে হাসপাতালটির সীমানা প্রাচীর ঘেঁষে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) নতুন হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজের নির্মাণ কাজ থেকে পিছু হটছে না সরকার। 

রেলপথ মন্ত্রীর পর এবার বিষয়টি আবারও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের মাধ্যমে তিনি এ বার্তা দেন। 

ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হাসপাতালটির অনুমোদন দিয়েছেন। যেহেতু চট্টগ্রামবাসীর মানসম্মত চিকিৎসা সেবার স্বল্পতা রয়েছে, সেটা বিবেচনা করেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হাসপাতালটির অনুমোদন দিয়েছেন এবং উনি (প্রধানমন্ত্রী) হসপিটাল করার পক্ষে। হাসপাতাল নির্মাণে পরিবেশের কোনও ক্ষতি করা হবে না। এটি নির্মাণে যতটুকু গাছ কাটা হবে প্রয়োজনে তার থেকেও দ্বিগুণ গাছ রোপণ করা হবে।’

বিষয়টি শনিবার রাতে সিভয়েসকে জানিয়েছেন সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। তিনি বলেন, ‘হাসপাতালটি নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে নানা কথা নানা মত উঠে আসছে। পত্র পত্রিকায় ও ফেসবুকে নানা কথা লেখা হচ্ছে। আমরাও পরিদর্শন করে অভিযোগের অনেক সত্যতা পাইনি। যেহেতু এটা প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদিত প্রকল্প, এছাড়া আমরা সরকারি দলের দায়িত্বশীল পদে রয়েছি। বিষয়টির সম্পর্কে নিদের্শনা চেয়ে আমাদের দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতু মন্ত্রী জনাব ওবায়দুল কাদেরের সাথে কথা বলেছি। তার কাছে সরকারের অবস্থান কি হবে তা জানতে চেয়েছিলাম। উনি আমাকে জানিয়েছেন, ‘এটা যেহেতু প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদিত হাসপাতাল তাই সেটি হবে। গাছ কাটা পড়লে তার দ্বিগুণ রোপণ করা হবে। বিষয়টি যাতে নগরবাসীকে আমি জানিয়ে দেই। পরিবেশের ক্ষতি করে তেমন কিছু করা হবে না বলে নগরবাসীকে আশ্বস্তও করতে বলেছেন সেতু মন্ত্রী।’ 

এরআগে গত ১৩ জুলাই সিভয়েসকে রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেছিলেন, ‘বিরোধীতাকারীরা বিরোধিতা করবেই। আমরা প্রস্তাবিত জায়গায় হাসপাতাল নির্মাণ করব। সেখানে পরিবেশের কোনও ক্ষতি হচ্ছে না। আমরা সব কিছু মেনটেইন করে আমাদের কাজ এগিয়ে নিচ্ছি।’  

সরকার নির্মাণের পক্ষে অনঢ় থাকলেও দিন যতই যাচ্ছে ততই হাসপাতাল বিরোধী আন্দোলন তীব্র হচ্ছে। চট্টগ্রামে হাসপাতাল নির্মাণে এ বাধা বিপত্তির কথা শুনে অসন্তুষ্ট হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কেননা এই প্রকল্পটি সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনেই পরিচালিত হয়। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও স্পষ্ট করে সরকারিভাবে কোনও বক্তব্য বা বিবৃতি আসেনি সরকারের পক্ষ থেকে। 

হাসপাতাল ইস্যুতে চট্টগ্রামের শীর্ষ নেতারা স্পষ্ট করে কোনও কথা না বললেও এই প্রথম সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের মনোভাবের কথা জানালেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির। যদিও দলের দায়িত্বশীল অন্য নেতারা বলে যাচ্ছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী পরিবেশ বান্ধব। হাসপাতাল হবে কিনা সে বিষয়ে তিনিই সিদ্ধান্ত দেবেন।’ 

চলমান আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের মনোভাব জানার চেষ্টা করা হয়েছে সিভয়েসের পক্ষ থেকে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘনিষ্ট সূত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আন্দোলনের ধরন দেখে অসন্তুষ্ট সরকারের শীর্ষ পর্যায়। তবে কোনও অভিযোগ থাকলে তা সুন্দর উপায়ে তিনি জানতে চান ও আন্দোলনকারীরাও জানতে পারতেন। এরপরও যদি চট্টগ্রামের মানুষ আন্দোলন অব্যাহত রাখে মানে হাসপাতাল না চান, তাহলে চট্টগ্রামে হাসপাতালের প্রয়োজনীয়তা নেই বলে মত এসেছে শীর্ষ পর্যায় থেকে। এই আন্দোলনে নানা শ্রেণি পেশার মানুষের সাথে বিএনপির আন্দোলনের বিষয়টিও বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে। সব মিলিয়ে আরও কদিন পর্যবেক্ষণের পর সরকারিভাবে সুষ্পষ্ট ঘোষণা আসবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে। 

সিআরবি ইস্যুতে চট্টগ্রামের কোনও নেতাকে এখনও দায়িত্ব দেয়নি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। বিষয়টি সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। সেখানে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতাদের অবস্থানও পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। সবাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দিকে যখন তাকিয়ে তখন রেলওয়েও বলছে একই কথা।

যদিও চট্টগ্রাম ইউনাইটেড হাসপাতাল লিমিটেডের জিএম (কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স) কায়েস খলিল খান সিভয়েসকে বলেছেন, ‘আন্দোলন নিয়ে আমাদের কোনও মাথা ব্যাথা নেই। আমরা আমাদের কাজ এগিয়ে নিচ্ছি। বর্তমানে ডিজাইন তৈরিসহ নানা কাজ করছি। যথা সময়ে আমরা নির্মাণ কাজ শুরু করব।’ 

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে কোন বার্তা দেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নাহ। আমাদের সাথে এসব নিয়ে কোন কথা হয়নি। এই হাসপাতালের উদ্যোক্তা কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। প্রাইভেট পাবলিক পার্টনারশীপ (পিপিপি) প্রকল্পটি কিন্তু সরাসরি পিএম অফিস থেকেই পরিচালিত হয়। তাই বিষয়টি নিশ্চিই তারা অবগত আছে। আমরা যথাযথ নিয়ম মেনে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে এটির নির্মাণ কাজ পেয়েছি। ইতোমধ্যে সাত কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করেছি।’

পরিবেশের ক্ষতির অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পরিবেশের ক্ষতি না হয় মতই ডিজাইন করা হচ্ছে। গাছ যেভাবে আছে সেভাবে থাকবে। নতুন করে কিছু গাছ রোপণ করা হবে। অহেতুক অপ্রচার করে লাভ নেই। এরপরও আমরা এখানে সেকেন্ডপার্টি, প্রথম পার্টি সরকার। এখনকার পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকারই সিদ্ধান্ত নিবে ফাইনালি। তবে আমরা আমাদের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।’

প্রকল্প পরিচালক ও রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান ইঞ্জিনিয়ার (সেতু) আহসান জাবির সিভয়েসকে বলেন, ‘আমাদের তালিকা অনুযায়ী সেখানে ঘর বরাদ্দ ছিল কেবল ৮টি পরিবারের জন্য। কিন্তু তাদের বাইরেও অবৈধভাবে বসবাস করছিল ৫০টির বেশি পরিবার। অনেকের দোকানসহ ব্যবসা বাণিজ্য ছিল। এদের সব উচ্ছেদ করা হয়েছে। প্রথম দফায় বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানকে ২ দশমিক ৪২ একর জমি বুঝিয়ে দেওয়ার কথা। দ্বিতীয় দফায় ৩ দশমিক ৫৮ একর জমি বুঝিয়ে দেওয়া হবে। যারা অবৈধ দখলদার তারা হাসপাতালের বিরুদ্ধে থাকবে এটাই স্বাভাবিক। যেখানে হাসপাতাল হচ্ছে সেখানে এখনও বসতিই আছে। তাহলে আপত্তি উঠছে কেন।?’

পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের আওতায়  (পিপিপি) এ হাসপাতালে থাকবে ৫০০ শয্যা ও ১০০ আসনের মেডিকেল কলেজ। তবে প্রকল্পের শুরু প্রথম ৩ বছরে চালু হবে ২৫০ শয্যা। বাকি ২৫০ শয্যা চালু হবে আরও ২ বছর পরে। অর্থাৎ মোট ৫ বছরে চালু হবে বিশেষায়িত  ৫০০ শয্যা। এরপর মেডিকেল কলেজ, মসজিদ, হোস্টেল, স্টাফ কোয়াটারসহ বিভিন্ন সুবিধা চালু করতে সময় লেগে যাবে আরও পরবর্তী ৬ বছর। সবমিলিয়ে আধুনিক হাসপাতালের এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হতে সময় লাগবে ১১ বছর।

হাসপাতালটির ডিজাইনে রয়েছে— প্রায় ২ দশমিক ৪২ একর জমিতে গড়ে তোলা হবে ৫০০ শয্যা, ইউনটিলিটি বিল্ডিং ও হাসপাতাল বিল্ডিং। পরের ফেজে ৩ দশমিক ৫৮ একর জমিতে গড়ে তোলা হবে মসজিদ, মেডিকেল কলেজ, নার্সিং কলেজ, চিকিৎসক, নার্সদের জন্য পৃথক হোস্টেল। এর বাইরে আরও থাকছে স্টাফ কোয়াটার ও পুরুষ হোস্টেল।

প্রকল্প পরিচালক ও রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান ইঞ্জিনিয়ার (সেতু) আহসান জাবির সিভয়েসকে বলেন, ‘বাস্তবায়নকারী সংস্থাটি আমাদের কাছে প্রথম দফায় ৩ একর জমি চেয়েছিল। তারা বলেছিলেন ৩ একর জমি দেওয়া গেলে একসাথে ৫০০ বিশেষায়িত  করা যাবে। কিন্তু আমরা তা দিতে পারেনি। প্রথম দফা উচ্ছেদের পর নানা বিভ্রান্তমূলক তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। দায়িত্বশীল অনেকেই বিকৃত তথ্য উপস্থাপন করছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।’

তিনি জানান, প্রথম ও দ্বিতীয় ফেজের জন্য প্রয়োজন হবে প্রায় ২ দশমিক ৪২ একর জমি। ভবিষতে প্রয়োজন হবে বাকি ৩ দশমিক ৫৮ একর। সবমিলিয়ে আধুনিক এ হাসপাতালের জন্য প্রয়োজন হবে প্রায় ৬ একর জমি।

সমালোচনার মুখে রেলওয়ে বলছে, শতবর্ষী গাছ শিরিষ তলা ও সাত রাস্তার মোড়ে অবস্থিত দাবি করে এতে বলা হয়েছে, ‘কিন্তু শিরিষ তলা বা সাত রাস্তার মোড় প্রকল্পের নির্ধারিত স্থান নয়। গোয়ালপাড়ায় হাসপাতাল নির্মাণ করা হলে সিআরবি এলাকার প্রাকৃতিক পরিবেশ ও বাংলা বর্ষবরণসহ নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কোনরূপ বিঘ্নতা ঘটবে না।’

প্রকল্প পরিচালক আহসান জাবির সিভয়েসকে বলেন,‘এখানে হাসপাতাল বর্জ্যের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু এ হাসপাতাল বর্জ্য অপসারণে ইটিপি-এসটিপি প্রযুক্তি ব্যবহারের কথা রয়েছে। যার পরিচালনা করবে প্রিজম নামের একটি প্রাইভেট কোম্পানি। এ প্রতিষ্ঠানটি ঢাকায় এ পদ্ধতিতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করছে। তাছাড়া হাসপাতাল নির্মাণের দায়িত্বে রয়েছে সিঙ্গাপুর ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সুরবানা জুরং। পরিবেশে যেন কোন ক্ষতি না হয় সেভাবেই এটার প্ল্যান করা হয়েছে।

 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়