Cvoice24.com

চট্টগ্রামে অবিক্রিত থাকলো ৩৩ হাজার কোরবানির গরু

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২২:০৩, ২০ জুলাই ২০২১
চট্টগ্রামে অবিক্রিত থাকলো ৩৩ হাজার কোরবানির গরু

আশা ছিল শেষ মুহুর্তে বেচাকেনার ধুম পড়ে যাবে চট্টগ্রামের কোরবানি পশুর হাটে। কিন্তু শেষ দুদিনে বেচাকেনা একটুও জমেনি। শেষ মুহুর্তে চট্টগ্রামে রয়ে গেছে প্রায় ৩৩ হাজার কোরবানি যোগ্য গরু। যার আনুমানিক বাজার মূল্য ৩৫ কোটি হতে পারে বলে  জানিয়েছে চট্টগ্রামের জেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর। 

সর্বশেষ তথ্য অনুসারে (মঙ্গলবার রাত ৮ টা পর্যন্ত) চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন হাটে অবিক্রিত রয়েছে ৯ হাজার গরু। একই সময়ে চট্টগ্রামের উপজেলা পর্যায়ে অবিক্রিত গরুর পরিমাণ প্রায় ২৪ হাজার। একই সময়ে রয়ে গেছে, ২ হাজার ৭০০ কোরবানি যোগ্য ছাগল। সব মিলিয়ে চট্টগ্রামে প্রায় ৭ লাখ ৬৫ হাজার কোরবানি যোগ্য পশু বিক্রি হয়েছে। 

মঙ্গলবার (২০ জুলাই) রাতে চট্টগ্রাম নগরের কোরবানি পশুর হাট গুলোতে দেখা গেছে, ট্রাক ভর্তি গরু নিয়ে বাড়ির পথে রওনা দিচ্ছেন দূর দূরান্ত থেকে চট্টগ্রামে আসা ব্যাপারীরা। তারা বলছেন, যশোর, কুষ্টিয়া, চাপাইনবাবগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারিপুর, খুলনা, বাগের হাটসহ দূর-দুরান্ত থেকে গরু নিয়ে চট্টগ্রামে এসেছিলেন ভালো বিক্রির আশা নিয়ে। কিন্তু করোনা পরিস্তিতির জেরে এবারে বড় অঙ্কের লোকসান নিয়ে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে।

বাজারের এমন পরিস্তিতিতে চরম হতাশা প্রকাশ করেছেন হাটের ইজারাদাররা। পতেঙ্গা বাটারফ্লাই পার্কের দক্ষিণে টিকে গ্রুপের খালি মাঠে গরুর হাটের ইজাদারের পার্টনার মোহাম্মদ ফারুখ বাবুর্চি সিভয়েসকে জানান, গত দুদিন ধরে এ হাট থেকে ট্রাক ভর্তি গরু নিয়ে অন্য  হাটে কিংবা বাড়ির পথে রওনা দিয়েছেন অনেক গরু ব্যবসায়ী। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আনুমানিক ৬০ ট্রাক গরু এ হাট থেকে অবিক্রিত অবস্থায় অন্য নিয়ে গেছেন ব্যাপারীরা৷ 

পাবনা থেকে ১৩টি গরু নিয়ে ১৩ জুলাই সাগরিকা গরু হাটে এসেছিলেন বসিরুল মিয়া। প্রথম দিন একটি এবং পরের দিন আরও ৭টি গরু বিক্রি করেছেন মোটামুটি ভালো দামেই। বাকি ৫টি বড় গরু শেষ সময়ে চড়া দরে বেচবেন এমন আশায় সেগুলোর ভালো দাম উঠলেও তখন বিক্রি করেননি। তবে মঙ্গলবার দুপুরের পর বড় গরুর আর তেমন ক্রেতার দেখা মেলেনি। দু'চারজন ক্রেতা দরাদরি করলেও সবাই অস্বাভাবিক কম দাম বলেছেন। এখন  ট্রাক ভাড়াসহ আনুষঙ্গিক অন্যান্য খরচের যোগ-বিয়োগ করে লস দিয়ে হলেও বিক্রি করে চলে যেতে চান বসিরুল মিয়। শুধু তিনি নয়। এরকম দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা গরু ব্যবসায়ীরা মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন। 

শুধু সাগরিকা নয়, পতেঙ্গা টিকের মাঠ, বিবিরহাট সহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে এবং ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সোমবার সকাল থেকেই অনেকটা কমতে থাকে গরুর দাম। শনিবার অনেকেই শুধু গরু দেখেছেন আর রোববার কেউ দেখেছেন কেউ কিনেছেন। তবে দাম তখনও ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের নাগালের মধ্যেই ছিল। যদিও ক্রেতাদের অভিযোগ ছিল বিক্রেতারা গরুর দাম কমাচ্ছে না। এরপরও শনিবার অনেক হাটেই গরু বেচাকেনা ছিল জমজমাট। রোববার সারাদিন এবং বিশেষ করে রাতে বেচাকেনাটা হয় অনেক বেশি। শেষ দিনে গরুর সঙ্কট হতে পারে কিংবা ভালো ও পছন্দের গরু না-ও পাওয়া যেতে পারে- এমন আশঙ্কায় যারা হাটে প্রবেশ করেছেন অধিকাংশই গরু কিনেই ফিরেছেন। তবে বেশির ভাগ ক্রেতা অনলাইনে ও খামার থেকে গরু কেনায় শেষ দিনে যে চাপ থাকে সেটি এবারের গরুর হাটে আর নেই। ফলে ক্রেতা শূণ্য হয়ে পড়ে বাজার। অস্বাভাবিকহারে কমেছে গরুরু দাম। 

চট্টগ্রামের জেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, নগরের সাগরিকা গরুর বাজার, নূরনগর হাউজিং ( এক কিলোমিটার গিরুর বাজার),

সল্টগোলা ক্রসিং পশুর হাট, পতেঙ্গা বাটারফ্লাই পার্কের দক্ষিণে টিকে গ্রুপের খালি মাঠে গরুর হাট, বিবিরহাটসহ বিভিন্ন বাজারে অবশিষ্ট আছে আরও ৯ হাজার গরু। তাছাড়া উপজেলা পর্যায়ে ২৪ হাজার গরু অবিক্রিত থাকার পাশাপাশি চট্টগ্রামে বিক্রি হয়নি ২ হাজার ৭০০ কোরবানি যোগ্য ছাগল। 

চট্টগ্রাম জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. সেতু ভূষণ দাশ (ভারপ্রাপ্ত) সিভয়েসকে বলেন, 'চট্টগ্রাম জেলায় ৩৫ হাজার গরু ‌অবিক্রিত আছে। তবে বুধবার (কোরবানের দিন) সকাল পর্যন্ত আরও কিছু কোরবানি পশু বিক্রি হবে৷'

সিভয়েসের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, 'চট্টগ্রামে সারা বছরই গরুর চাহিদা থাকে। তাই গরুগুলো বছরের অন্যন্য সময় বিক্রি হবে।' 

কিন্তু পতেঙ্গা বাটারফ্লাই পার্কের দক্ষিণে টিকে গ্রুপের খালি মাঠে গরুর হাটের ইজাদারের পার্টনার মোহাম্মদ ফারুখ বাবুর্চি সিভয়েসকে বলেন, 'লাভের আশায় হাটের ইজারা নিয়েছিলাম আমরা। শেষ পর্যন্ত ২ লাখ৷ টাকার গরু ১ লাখ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। হাসিলের টাকা তুলতে পারছি না। বেশ টেনশন লাগছে। খুন অসুস্থ হয়ে পড়েছি আমি।'  

হাটে আসা প্রান্তিক খামারিরা বলছেন, চট্টগ্রামে এবার অলিগলিতে ছোট ছোট হাট (খাইন) বসিয়েছে অনেকেই। যার ফলে বিভিন্ন পাড়া মহল্লার গরুর চাহিদা সেখান থেকেই মিটেছে। সবমিলিয়ে করোনার জেরে হাটবিমুখী ছিলেন ক্রেতারা।

অন্যদিকে চট্টগ্রামের জেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চট্টগ্রামে এবার কোরবানিযোগ্য পশুর (গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া) চাহিদা ৮ লাখ ৯ হাজার। যার বিপরীতে আনোয়ারা, সাতকানিয়া, ফটিকছড়িসহ বিভিন্ন উপজেলা মিলে চট্টগ্রাম জেলায় স্থানীয়ভাব গরু পালন করা হয়েছে ৭ লাখ ৫৬ হাজার ৩৩৪টি। কিন্তু সব শেষ তথ্য ( ২০ জুলাই রাত ৮টা)  অনুযায়ী, চট্টগ্রামে প্রায় ৭ লাখ ৬৫ হাজার কোরবানি যোগ্য পশু বিক্রি হয়েছে। 

প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, চট্টগ্রামের গত ৫ বছরে চট্টগ্রাম জেলার বছর ওয়ারী পশু জবাই ও উৎপাদনের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ২০১৫ সালে চট্টগ্রামের স্থানীয় উৎপাদন ছিল ৩ লাখ ২০ হাজার। যার বিপরীতে জবাই হয়েছে ৪ লাখ ৯২ হাজার ২৫০টি পশু। ২০১৬ সালে স্থানীয় উৎপাদন ছিল ৩ লাখ ৩৬ হাজার ১১৯টি। যার বিপরীতে জবাই হয়েছে ৫ লাখ ১৬ হাজার ৮৫২টি। ২০১৭ সালে স্থানীয় উৎপাদন ছিল ৩ লাখ ৫৬ হাজার ১৬৩টি। যার বিপরীতে জবাই হয়েছে ৫ লাখ ৯৫ হাজার ৮৩১টি। 

২০১৮ সালে স্থানীয় উৎপাদন ছিল ৫ লাখ ৮১ হাজার ৬৩৪টি। যার বিপরীতে জবাই হয়েছে ৬ লাখ ৫৫ হাজার। ২০১৯ সালে স্থানীয় উৎপাদন ৬ লাখ ১০ হাজার ২১৯টি। যার বিপরীতে জবাই হয়েছে ৭ লাখ ৩০ হাজার ৭৮৯টি। সবশেষ ২০২০ সালে স্থানীয় উৎপাদন হয়েছে ৬ লাখ ৮৯ হাজার ২২টি।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়