Cvoice24.com

অজুহাত মুখে নিয়ে বের হচ্ছেই মানুষ, জরিমানাতেও যাচ্ছে না থামানো

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২১:১১, ২৬ জুলাই ২০২১
অজুহাত মুখে নিয়ে বের হচ্ছেই মানুষ, জরিমানাতেও যাচ্ছে না থামানো

আরেফিন ইসলাম। মধ্যবয়সী। ফিরছিলেন দুই নম্বর গেইট এলাকা থেকে। নগরের টাইগারপাসের চেকপোস্টে তার পথ আটকায় পুলিশ। বাসা থেকে বের হওয়ার কারণ জানতেই হুঁড়হুঁড়িয়ে বলতে শুরু করেন, ‘ স্যার বন্ধুর কাছে পাওনা টাকা আনতে গেছিলাম। ঘরে আমার মা অসুস্থ, ওনার চিকিৎসা করাতে হবে। বিকাশের দোকান বন্ধ’।

প্রত্যুত্তরে পুলিশ তাকে নানা প্রশ্ন করলেও তার একটাই জবাব বিকাশের দোকান বন্ধ তাই দুই নম্বর গেইটে বন্ধুর কাছ থেকে সরাসরি টাকা আনতে গেছিলাম। ঘরে মা অসুস্থ, চিকিৎসা করাতে হবে। 

মধ্যবয়সী এই যুবকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল শুধু টাইগারপাসে নয়, তিনি পুলিশের জালে আটকা পড়েছিলেন জিইসির মোড়েও। সেখানেও একই উত্তর দিয়েছেন। মায়ের অসুস্থতা, কিংবা টাকা আনতে যাওয়ার বিষয়টি সত্যতা যাচাই করা সম্ভব না হলেও তিনি অনায়াসেই এই যুক্তিতে ছাড়া পেয়ে যান।

শুধু আরেফিন নয়, এরকম অনেকেরই পথ আটকাচ্ছে পুলিশ। কেউ বলছে বাজার করতে বেরিয়েছে, কেউ বলছে পাসপোর্টের কাজে বেরিয়েছে। আবার কেউ কেউ কোরবানির মাংস দিতে বেরিয়েছে। অপ্রয়োজনে বের হলেও অজুহাতের মারপ্যাঁচে পড়ে ছেড়ে দিতে হচ্ছে তাদের।

এছাড়া কোন কোন চেকপোস্টে ঢিলেঢালাভাবও দেখা গেছে প্রচণ্ড। মোটরসাইকেল ও বিভিন্ন পণ্যবাহী যানবাহন থামানো হলেও অবাধে চলছে প্রাইভেট গাড়ি আর রিকশা। অনায়াসেই রিকশা চেপে নইলে হেঁটে হুড়মুড়িয়ে চেকপোস্ট পার হচ্ছে মানুষ।

সোমবার (২৬ জুলাই) নগরের দেওয়ানহাট, টাইগারপাস, লালখানবাজার এলাকা ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে। 

পুলিশ বলছে, যানবাহনের পাশাপাশি পথচারীদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। যারা প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়পত্র দেখাতে পারছে বা সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারছে তাদেরই যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। আর যারা নানা ধরনের অজুহাত দেখাচ্ছে তাদেরও সতর্ক করে বাসায় ফেরার অনুরোধ জানানো হচ্ছে। যারা মাস্ক পরেনি তাদেরও সতর্ক করে বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি পণ্যবাহী গাড়িগুলো ছেড়ে দিচ্ছে। তবে সন্দেহ হলে ট্রাক বা অ্যাম্বুলেন্স তল্লাশি করছে।

এদিকে চলতি লকডাউনে পোশাক কারখানা বন্ধ থাকলেও খোলা রয়েছে ব্যাংকসহ বিভিন্ন জরুরী সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান। তার উপর গণপরিবহণ বন্ধ থাকায় গন্তব্যে যাওয়া-আসা করতে হিমশিম খাচ্ছেন চাকরিজীবীরা। দুর্ভোগে পড়ে ক্ষোভও প্রকাশ করছেন অনেকে।

টাইগারপাসে ব্যাংক কর্মকর্তা রশিদ খান বলেন, আমার অফিস আগ্রাবাদে। থাকি নাসিরাবাদে। সকালে ১০০ টাকা রিকশা ভাড়া দিয়ে অফিসে গিয়েছি। এখন এক কলিগের সাথে হেঁটে হেঁটে টাইগারপাস পর্যন্ত এসেছি। আর হাঁটা সম্ভব না। তাই এখন রিকশা করে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। আমাদের যাতায়াত খরচ বেড়ে গেছে। সেই সাথে সাংসারিক খরচ থেমে নেই। কবে যে এ যন্ত্রণা শেষ হবে আল্লাহ ভালো জানে।

আরেক চাকরিজীবী ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, প্রতিদিন দেড়শ থেকে ১৮০ টাকা খরচ করে বাসায় আর অফিস যাওয়া আসা করতে হয়। রিকশা ছাড়া আমাদের বিকল্প নেই। এ সুযোগে তারাও বাড়তি ভাড়া দাবি করেন। মাসে হাজার হাজার টাকা রিকশাভাড়ার পেছনে চলে গেলে কিভাবে হবে? আমাদের তো আর অঢেল টাকা নেই। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের পরিবার কে দেখবে? সংসার কি দিয়ে সামলাবো!

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ঈদের এক দিন পর ২৩ জুলাই (শুক্রবার) ভোর ৬টা থেকে ফের কঠোর লকডাউন শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। এবার লকডাউনে পোশাক কারখানা বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে কঠোর বিধিনিষেধের আওতার বাইরে রাখা হয়েছে খাদ্যপণ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণের সঙ্গে যুক্ত মিল-কারখানা এবং কোরবানির পশুর চামড়া সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) আরফাতুল ইসলাম বলেন, কঠোর বিধি-নিষেধ মানাতে নগরের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। এসব চেকপোস্টে যানবাহন আর পথচারীদের বের হওয়ার কারণ জানতে চাওয়া হচ্ছে। অযৌক্তিক মনে হলে তাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। আজ বিধি-নিষেধ না মানায় নগরজুড়ে ২১৯টি মামলা ও ২৫০টি গাড়ি আটক করা হয়েছে।

এদিকে জেলা প্রশাসন, সিটি করপোরেশন আর বিআরটিএর ২১ জন ম্যাজিস্ট্রেট নগরজুড়ে অভিযান চালিয়ে ২১৮টি মামলায় ১ লাখ ২৭ হাজার ৮শ’ জরিমানা আদায় করেছে।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়