Cvoice24.com

ফ্লাইওভারে ফাটল: বহদ্দারহাটে অসহনীয় যানজটে মানুষের দুর্ভোগ

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০:২৯, ২৬ অক্টোবর ২০২১
ফ্লাইওভারে ফাটল: বহদ্দারহাটে অসহনীয় যানজটে মানুষের দুর্ভোগ

ফাইল ছবি

নগরের বহদ্দারহাটে এম এ মান্নান ফ্লাইওভারের (বহদ্দারহাট) দু’টি পিলারে ফাটল দেখা দিয়েছে। এতে একাংশে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে সড়কে যানবাহনের তীব্র চাপে দুর্ভোগে পড়েছে গার্মেন্টসকর্মী, অফিস ফেরত ও বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ। যানজটের কারণে দীর্ঘসময় অপেক্ষা করে বিরক্ত অনেককে গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে গন্তব্যের দিকে রওনা হতে দেখা গেছে। 

মঙ্গলবার (২৬ অক্টোবর) সকাল থেকে নগরের বহদ্দারহাট এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। তবে সকালের চেয়ে সন্ধ্যায় গার্মেন্টকর্মী ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অফিস ফেরত কর্মীদের কারণে রাস্তায় জট আরো তীব্র আকার ধারণ করে। সে সাথে গণপরিবহণগুলোতে তিল ধারণের জায়গা ছিল না।

যানজটে আটকে থাকা যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফ্লাইওভারের একাংশ বন্ধ করে দেয়ায় কর্মস্থলে যেতে-আসতে তীব্র ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। যাদের জরুরি কাজ আছে তারা সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছতে পারছেন না। একই ফ্লাইওভারে বার বার সমস্যা দেখা দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে।

নগরের বহদ্দারহাটে একটি বেসরকারি ব্যাংকে কাজ করেন আগ্রাবাদের বাসিন্দা আবদুস সাত্তার। তিনি বলেন, ‘সকালে অফিসে আসতে অনেক কষ্ট হয়েছে। এখন বাসায় যেতেও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। অফিস ছুটি হওয়ায় মানুষ গাদাগাদি করে গাড়িতে উঠছে। একে তো গাড়ির ভেতর তীব্র গরম, তার উপর ২০ মিনিট ধরে জ্যামে এক জায়গাতেই আছি। এভাবে সাধারণ মানুষকে কষ্ট দেয়ার কোন মানেই হয় না।’

সিএনজি চালক রহিম মিয়া বলেন, ‘এমনিতেই অফিস, গার্মেন্টস ছুটি হইলে রাস্তায় গাড়ির জট লাইগা যায়। তার উপর ফ্লাইওভারের একটি অংশ বন্ধ থাকায় কষ্ট আরো বাইড়া গেছে। যাত্রী নিয়া আধা ঘন্টা ধরে একই জায়গায় খাড়াইয়া আছি।’

নগরের দুই নম্বর গেট এলাকায় থাকেন গার্মেন্টসকর্মী সুফিয়া বেগম। গাড়ি না পেয়ে বহদ্দারহাট থেকে হেঁটেই গন্তব্যে যাচ্ছিলেন তিনি। তিনি বলেন, ‘অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে থেকে মানুষের ভীড়ে একটা বাসেও উঠতে পারিনি। তাই বাধ্য হয়ে পায়ে হেঁটেই রওনা দিয়েছি।’

এদিকে আজ মঙ্গলবার সকালে বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের র‌্যাম্পের পিলারে ফাটল পরিদর্শন করেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী। এসময় তিনি এ ঘটনার দায় চাপান বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) ওপরে। তিনি বলেন, ‘নির্মাণ ত্রুটির কারণেই ফাটল দেখা দিয়েছে।’ 

অন্যদিকে চসিকের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম ও সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মো. মাহফুজুর রহমান এই ফাটলের জন্য ওভারলোডকেই দুষছেন। যদিও চসিকের প্রধান প্রকৌশলী আরও দুটি সম্ভাব্য কারণ উল্লেখ করেছেন।

সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘দুটি কারণে ফাটল দেখা দিতে পারে। একটি নকশাগত ত্রুটি, অন্যটি নির্মাণ ত্রুটি। কি কারণে হয়েছে সেটা দেখে এ মুহূর্তে বলা যাবে না। তবে ওভারলোডের গাড়ি চলাচলের কারণে এটা হয়েছে। নির্মাণে যুক্ত থাকা প্রতিষ্ঠান ম্যাক্সের সঙ্গে কথা বলেছি। এই র‍্যাম্পটা মূল নকশায় ছিল না। পরবর্তীতে এটা বর্ধিত করা হয়েছে। এ জন্য ডিজাইনের ত্রুটি থাকতে পারে।’

অন্যদিকে সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘ফ্লাইওভারের র‌্যাম্পের নকশার কোনো ত্রুটি নেই। ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এটি ভারী যানবাহন চলাচলের উপযোগী নয়। শুরুতে প্রবেশমুখে ভারী যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নিচের সড়কে ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়ির কারণে সে প্রতিবন্ধকতা কে বা কারা খুলে দিয়েছিল। ফলে প্রতিনিয়ত ভারী গাড়ি চলাচল করছে। এই কারণে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে।’

তিনি দাবি করছেন, ফাটল দেখা দিলেও তা সংস্কার বা মেরামত করার সুযোগ রয়েছে। এ জন্য কিছুদিন র‌্যাম্পে যান চলাচল বন্ধ রাখতে হবে। আর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতা ও পরামর্শে তা সংস্কার করা হবে। 

এরআগে, গতকাল (২৬ অক্টোবর) বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের দুটি পিলারে ফাটল দেখা দেওয়ায় রাত সাড়ে দশটার দিকে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় চসিক ও সিএমপির ট্রাফিক বিভাগ। সিএমপির পক্ষ থেকে ব্যারিকেডের পাশাপাশি সেখানে দু'জন ট্রাফিক সদস্য নিয়োগ দেওয়া হয়।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়