Cvoice24.com

চট্টগ্রামে টিকার সনদ ছাড়াই ক্রেতা খাওয়াচ্ছেন রেস্টুরেন্ট মালিকরা

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০৯:৫৪, ১৭ জানুয়ারি ২০২২
চট্টগ্রামে টিকার সনদ ছাড়াই ক্রেতা খাওয়াচ্ছেন রেস্টুরেন্ট মালিকরা

নগরের রেস্তোরাঁগুলোতে করোনার বিধিনিষেধ মানা হচ্ছে না

রেস্তোরাঁয় বসে খেতে চাইলে অবশ্যই করোনার টিকা সনদ প্রদর্শন করতে হবে—এমন নির্দেশনা থাকলেও চট্টগ্রাম মহানগরের হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলোতে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র। কোন প্রকার টিকা কার্ড ছাড়াই ভোজনরসিকরা যাচ্ছেন সুস্বাদু খাবারের স্বাদ নিতে। অন্যদিকে নিয়ম থাকলেও হোটেল-রেস্তোরাঁয় দায়িত্বে থাকা কর্মীরা টিকা সনদ যাচাই করছেন না। পাশাপাশি অধিকাংশ হোটেল-রেস্তোরাঁয় হ্যান্ড স্যানিটাইজিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়নি। 

রোববার (১৬ জানুয়ারি) নগরের কাজীর দেউড়ি ও লালখান বাজার এলাকার হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে নগরের নামিদামি রেস্তোরাঁগুলোতে ভোজন রসিকদের আনাগোনা বাড়ছিল। রেস্তোরাঁর মূল ফটকে দায়িত্বে থাকা কর্মীরা তাদের গ্রাহকদের টিকা সনদ যাচাই করছেন না। স্বাভাবিক সময়ের মতোই গ্রাহকরা রেস্টুরেন্টে যাচ্ছেন, খাবার গ্রহণ করছেন। পাশাপাশি হোটেল-রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষ হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা না করায় নগরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা গ্রাহকদের অনেকে সাথে থাকা হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করছেন। 

গ্রাহক সেজে নগরের কাজীর দেউড়ি এলাকার হোটেল জামান, সাকুরা কাবাব ও রয়েল হাটে যায় প্রতিবেদক। এসব হোটেল ও রেস্তোরাঁর মূল ফটকে দায়িত্বে থাকা লোকদের টিকা সনদ দেখাতে হবে কিনা জানতে চাইলে তারা বলেন, টিকা কার্ড লাগবে না, এমনিতেই খেতে পারবেন। সরকার তো নিয়ম করেছে, টিকা সনদ দেখানো তো উচিত। প্রতিবেদকের এমন মন্তব্যে ঠাট্টার ছলে হাসেন তারা।

সাকুরা কাবাব রেস্তোরাঁর মূল ফটকে দায়িত্বে থাকা কর্মী মোহাম্মদ হাসেম বলেন, গ্রাহকের কাছে টিকা সনদ যাচাই করতে বলা হয়েছে। আমরা যাচাই করতে গেলেও অনেক গ্রাহকের কাছে টিকা সনদ থাকে না। গ্রাহক ফেরত দিলে আমাদের লোকসানে পড়তে হবে। তাই আমরাও দোটানায় আছি। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রয়েল হাটের এক কর্মী বলেন, বাঁচা-মরার মালিক আল্লাহ। এত নিয়ম মেনে কি হবে? টিকা কার্ড দেখাতে পারলে ভালো। আর না থাকলেও বসে খেতে পারবেন। 

এদিকে হোটেল জামানে গিয়েও দেখা যায় একই চিত্র। ক্রেতা সেজে সেখানে গেলে কোন টিকা সনদ যাচাই করা হয়নি। প্রতিবেদকের অবস্থানকালে ওই হোটেলে আসা কোন গ্রাহকের টিকা সনদ যাচাই করা হয়নি। 

টিকা সনদ যাচাই করার ব্যাপারে জানতে চাইলে কাজীর দেউড়ি এলাকায় হোটেল জামানের ক্যাশিয়ার মোহাম্মদ ইমরান বলেন, সরকার তো টিকা সনদ যাচাইয়ের ব্যাপারে নিয়ম করেছে। তবে টিকা সনদ থাকলে ভালো। আর না থাকলেও সমস্যা নেই। প্রায় সকলেই তো টিকার আওতায় এসেছে। 

টিকা সনদ যাচাইয়ে হোটেল রেস্তোরাঁর উদাসীনতার চিত্র শুধু কাজীর দেউড়িতেই নয়, একই চিত্র দেখা গেছে লালখান বাজার এলাকায়ও। সেখানকার বিরিয়ানি এক্সপ্রেস, ব্রোস্ট, দমফুঁক, বাঙ্গালীয়ানাসহ বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে গিয়ে দেখা যায় একই চিত্র। 

টিকা সনদের ব্যাপারে লালখানবাজার এলাকার কয়েকটি রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলতে চাইলে এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। 

দমফুঁক রেস্টুরেন্ট থেকে খেয়ে বের হচ্ছিলেন কফিল উদ্দিন। তিনি সিভয়েসকে বলেন, বাসা থেকে বের হবার সময় টিকা সনদ আনতে ভুলে গেছি। ভেবেছিলাম রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ বাধা দেবে। এখানে এসে দেখি উল্টো চিত্র। তারা কিছুই যাচাই করেননি। 

লালখান বাজার এলাকায় কথা হয় সাবরিনা আক্তারের সাথে। তিনি সিভয়েসকে বলেন, বন্ধুদের সাথে রেড চিলিতে খাওয়ার প্ল্যান করে বাসা থেকে বের হই। সরকারি নির্দেশনা পেয়ে আমরা সবাই টিকা সনদ নিয়েই রেস্তোরাঁয় এসেছি। কিন্তু কোন কিছুই যাচাই করা হয়নি।  

দেশে প্রতিদিনই করোনা শনাক্তের হার বাড়ছে। বাড়ছে ওমিক্রন শনাক্তও। এ অবস্থায় করোনা প্রতিরোধে মাস্ক ছাড়া রাস্তায় বের হলে জরিমানার বিধানসহ ১১ দফা বিধি-নিষেধ জারি করেছে সরকার। সে নির্দেশনায় রেস্তোরাঁয় বসে খেতে অবশ্যই করোনার টিকা সনদ প্রদর্শন করতে হবে—এমন নির্দেশনার প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে পুরনো কায়দায় চলছে ব্যবসা। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও স্টাফ অফিসার টু ডিসি পিযুষ কুমার চৌধুরী সিভয়েসকে বলেন, সাধারণ মানুষ সকলেই এখনো টিকার আওতায় আসেনি। মানুষ এখনো ভাকসিন নিচ্ছে। তাই আমরা সপ্তাহখানেক সময় নিচ্ছি। এরপরই আমরা কঠোর অভিযানে নামবো।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়