Cvoice24.com

জঙ্গিপনার পর দুর্নীতির কারণে ফের আলোচনায় মুফতি ইজহার

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৪:৫২, ২০ মার্চ ২০২২
জঙ্গিপনার পর দুর্নীতির কারণে ফের আলোচনায় মুফতি ইজহার

মুফতি ইজহারুল ইসলাম। বাংলাদেশে আলোচিত-সমালোচিত এক নাম ইসলামী আলেমের নাম। ইসলামের বাণী প্রচার-প্রসার করে যিনি হতে পারতেন সম্মানিত ও সমাদৃত। এসব না করে তিনি উল্টো নানা ‘বিতর্কিত কারণে হয়েছেন সমালোচিত। দেশি-বিদেশি মিডিয়ায় নানা সময়ে বির্তকিত কর্মকাণ্ডের কারণে হয়েছেন সংবাদের খোরাক। কখনো হেফাজত ইসলামকে বেপথে নেওয়ার কারণে; আবার কখনো তার পরিচালিত লালখান বাজারের পাহাড়ি এলাকায় প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসায় গ্রেনেড হামলার কারণে।

কখনো শেখ হাসিনা-খালেদা জিয়া দুই জনেরই ঘনিষ্টজন হিসেবে দাবির কারণে কখনো ২০ দলীয় জোটে আবার মহাজোটের হয়ে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়ে। তাছাড়া নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবি ও পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠন লস্কর ই-তৈয়্যবার সঙ্গে তার মাদ্রাসার কানেকশনের কারণেই তিনি আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় সংবাদের খোরাক হয়েছেন। এমনকি বলা হয়ে থাকে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন হরকাতুল জিহাদের জন্ম হয়েছিল তার মাদ্রাসায়। একই কারণে তার ছেলে মুফতি হারুন ইজহারও সমালোচিত। এবার নতুন করে আলোচনায় এসেছেন মুফতি ইজহার সম্পদের হিসাব দিতে না পারায় দুই বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড মাথায় নিয়ে জেলে যাওয়ার কারণে।

সোমবার (২০) রোববার চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ মুনসী আব্দুল মজিদের আদালত দুককের করা মামলার বিচার শেষে মুফতি ইজহারকে দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকার অর্থদণ্ড দেন। এই জরিমানা দিতে না পারলে আরও ২ মাস কারাদণ্ড ভোগ করার কথাও বলা হয় রায়ে। রায় ঘোষণার পর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

ফ্ল্যাশব্যাকে মুফতি ইজহারনামা

বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট শরিক শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক ও মুফতি ফজলুল হক আমিনীর নেতৃত্বাধীন ইসলামী ঐক্যজোটের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন মুফতি ইজহারুল ইসলাম। ২০০১ সালে জোট সরকার গঠিত হওয়ার পর ইসলামী ঐক্যজোট ভেঙে গেলে তিনি মুফতি আমিনীর নেতৃত্বাধীন অংশের মহাসচিব হন। পরবর্তীতে তিনি নিজেই ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান হয়ে যান। এরপর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটে অংশ নেয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। ১/১১ এর সময় জোট সরকারের কঠোর সমালোচক হিসেবে পর্দায় আর্বিভূত হন। মুফতি ইজহার ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশের সভাপতি নেজামে ইসলাম পার্টির একাংশের সভাপতি হিসেবেও দায়িত্বে আছেন।

২০১৩ সালের ১০ জুলাই চট্টগ্রামের লালখান বাজার মাদ্রাসায় ভয়াবহ গ্রেনেড বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে তিনজন নিহত হয়। আহত হয় বেশ কয়েকজন। মাদ্রাসায় গ্রেনেড বিস্ফোরণের ঘটনায় দায়ের করা তিনটি মামলায় মুফতি ইজহার ও তার ছেলে হারুন ইজহারসহ বেশ কয়েকজনকে আসামি করা হয়। বিস্ফোরক, এসিড নিয়ন্ত্রণ আইন ও একটি হত্যাসহ তিনটি মামলা বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ২০১৩ সালের অক্টোবরে ইজহারপুত্র মুফতি হারুনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক হারুনের বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন কারাগারে বন্দি ছিলেন। মুফতি ইজহারকেও পরবর্তীতে একই অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনিও দীর্ঘ সময় কারাগারে ছিলেন।

মুফতি ইজহারের মাদ্রাসায় নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন হরকাতুল জিহাদের জন্ম হয়েছিল বলেও অভিযোগ আছে। দেড় দশক আগে ১৯৯৯ সালের জানুয়ারি মাসে প্রয়াত কবি শামসুর রাহমানের প্রাণনাশ চেষ্টার অভিযোগে আটক হওয়া কয়েকজন জঙ্গি জানায়, তারা মুফতি ইজহারুল ইসলামের লালখান বাজার মাদ্রাসাতেই ট্রেনিং নিয়েছিল। 

সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, মুফতি ইজাহারুল ইসলামের পরিচালনাধীন লালখান বাজারে পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত জামিয়াতুল উলুম আল-ইসলামিয়া মাদ্রারাসা ঘিরে গড়ে উঠেছিল আন্তঃদেশিয় জঙ্গিদের ঘাঁটি। যেখান থেকে ২০০৯ সালের শেষ দিকে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস ও ভারতীয় হাইকমিশনার হামলার ছক তৈরি হয়েছিল। এ হামলা পরিকল্পনা করেছিল ভারতে নিষিদ্ধ ঘোষিত ইসলামী জঙ্গি সংগঠন লস্কর ই-তৈয়্যবা। এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ইজহারুল ইসলামের ছেলে হারুন ইজহার। ফের সেখান থেকেই বড় ধরনের জঙ্গি হামলার ছক কষা হয়েছিল বলে পুলিশ ও গোয়েন্দারা তখন দাবি করেছিল। এ তথ্য পেয়েই গোয়েন্দা পুলিশ ওই মাদ্রারাসায় অভিযান চালায়, গ্রেপ্তার করা হয় ইজহারপুত্র হারুন ইজহার এবং দক্ষিণ ভারতীয় সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়্যবার সদস্য ভারতীয় নাগরিক শহিদুল, সালাম, সুজন ও আল আমিন ওরফে মইফুলকে।

২০০৯ সালের ওই অভিযানকালে গোয়েন্দা পুলিশ হারুন ইজহারের কক্ষ থেকে একটি ল্যাপটপ জব্দ করে। পরবর্তীতে ওই ল্যাপটপে মার্কিন ও ভারতীয় হাইকমিশনার হামলার তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায়। পুলিশের অভিযান শুরুর আগে সেখান থেকে পালিয়ে যায় লস্কর-ই-তৈয়্যবার অন্যতম শীর্ষনেতা টি নাসির ও সরফরাজ। একই বছরের ৬ নভেম্বর কুমিরা সীমান্ত হয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে দুই ভারতীয় জঙ্গি গ্রেপ্তার হয়। ওই দুই জঙ্গি ভারতের বেঙ্গালুরু কম্পিউটার সিটিতে বোমা হামলাসহ বেশ কয়েকটি বড় সন্ত্রাসী হামলায় জড়িত। তারা ছিলেন ভারতে মোস্ট ওয়ানটেড। গ্রেপ্তার এড়াতে দুই জঙ্গি সদস্য দুবাই হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেয় মুফতি ইজহারের মাদ্রাসায়।

এর আগে, রাউজান রাবার বাগান গোদারপাড় এলাকায় পাহাড়ের চূড়ায় হুজির প্রশিক্ষণকালে অভিযান চালিয়ে জিহাদি বই ও বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার করে র‌্যাব। এ ঘটনায় বিস্ফোরক ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দুটি মামলা দায়ের করা হয়। দুটি মামলায় মুফতি ইজহারুল ইসলাম চৌধুরীসহ আটজনকে আসামি করা হয়। সর্বশেষ ২০১০ সালের ১৫ ডিসেম্বর হরকাতুল জিহাদের সঙ্গে সম্পর্ক থাকার অভিযোগে র‌্যাব-৭ এর হাতে দুই সহযোগীসহ গ্রেপ্তার হয়েছিলেন মুফতি ইজহারুল ইসলাম। হরকাতুল জিহাদের (হুজি) তৎকালীন আমির মাওলানা ইয়াহিয়া ওরফে বর্দ্দা (৪৬) এবং তার দুই সহযোগী মো. বাহাউদ্দিন (২২) ও ইয়ার মোহাম্মদকে (৫০) গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ইয়াহিয়া জানান, বৃহত্তর চট্টগ্রামে হুজির আধিপত্য বিস্তারের জন্য মুফতি ইজহারুল ইসলামের লালখান বাজার মাদ্রাসায় সাংগঠনিক অফিস খোলা হয়েছে। ১৯৯৯ সালের জানুয়ারি মাসে প্রয়াত কবি শামসুর রাহমানের প্রাণনাশের চেষ্টার অভিযোগে আটক হওয়া কয়েকজন জঙ্গি জানায়, তারা মুফতি ইজহারুল ইসলামের লালখান বাজার মাদ্রাসাতেই ট্রেনিং নিয়েছিল।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়