Cvoice24.com

বাবুল আক্তারের চট্টগ্রাম কারাগার ভীতির নেপথ্যে...

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৬:১৮, ২৩ মার্চ ২০২২
বাবুল আক্তারের চট্টগ্রাম কারাগার ভীতির নেপথ্যে...

স্ত্রী হত্যা মামলায় নিজের করা মামলাতেই গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে এখন হাজতি জীবন যাপন করছেন এক সময়ের আলোচিত প্রতাপশালী পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তার। তবে বাবুল থাকতে চাননা কারাগারে! পাচ্ছেন মরণের ভয়! স্পষ্ট করে বললে— বাবুলের আশঙ্কা চট্টগ্রাম কারাগারের ভেতর তাকে হাজতি কিংবা কয়েদিদের কেউ না কেউ যে কোনভাবে ক্ষতি করতে পারেন। এমনকি তিনি নাকি হত্যারও শিকার হতে পারেন।

বাবুলের করা আদালতে এমন আবেদেনের সত্যতা মিলেছে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে সিনিয়র জেল সুপারের কথাতেও। সেকারণেই নাকি কারাবিধি অনুযায়ী সাবেক পুলিশ সুপার এ হাজতি ডিভিশন না পেলেও তাকে রাখা হচ্ছে আলাদা সেলে। তার নিরাপত্তার বিষয়টিও সর্বোচ্চ বিবেচনায় নিয়েছেন কারা কর্তৃপক্ষ।   

গত মঙ্গলবার (২২ মার্চ) সকালে বাবুল আক্তারের উপস্থিতিতে পিবিআইয়ের আবেদেনের প্রেক্ষিতে প্রায় পৌনে তিনঘণ্টা চট্টগ্রাম অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মুহাম্মদ আবদুল হালিমের খাস খামরায় বাবুল আক্তারের হাতের লেখা পরীক্ষা করা হয়। একইদিন বাবুলের আইনজীবী মুহাম্মদ আজমুল হুদার করা আবেদনে বলা হয়— ‘...দরখাস্তকারী আসামি সাবেক পুলিশ সুপার হয়। আসামিকে বিজ্ঞ আদালতের তলব মোতাবেক ফেনী কেন্দ্রীয় কারাগার হতে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয় বটে। কিন্তু আসামি যেহেতু পূর্বে সিএমপি ডিবিতে কর্মরত থাকা অবস্থায় বিভিন্ন দুর্ধর্ষ আসামিকে গ্রেপ্তার করার কারণে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে নিরাপত্তাবোধ না করায়, আসামির শারীরিক ও মানসিক নিরাপত্তার প্রয়োজনে ফেনী কেন্দ্রীয় কারাগারে অতিস্বত্ত্বর পুনঃরায় প্রেরণের আবেদন করিতেছি।’ 

বাবুলের আইনজীবীর করা এই আবেদেন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ আবদুল হালিমের আদালত স্পষ্ট করে কিছু না বললেও কারাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।

সিএমপির অতিরিক্ত উপ কমিশনার (প্রসিকিউশন) কামরুল হাসান সিভয়েসকে বলেন, ‘বাবুল আক্তারের হাতের লেখার পরীক্ষা শেষে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। একইসাথে তার আইনজীবীর করা ফেনী কারাগারে রাখার আবেদনে স্পষ্ট করে কিছু না বললেও কারাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে বলেছেন আদালত। আমরা তাকে নিয়ম অনুযায়ী চট্টগ্রাম কারাগারেই পাঠিয়ে দিয়েছি। এখন তাকে কোথায় রাখবে সেটা কারাগারের বিষয়।’ 

গতকাল মঙ্গলবার বাবুল আক্তারকে চট্টগ্রাম কারাগারেই রাখা হয়। এমনকি বুধবার দুপুর পর্যন্ত তার চট্টগ্রাম কারাগারের বিশেষ সেলে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। 

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার শফিকুল ইসলাম বুধবার দুপুরে সিভয়েসকে বলেন, ‘বাবুল আক্তারের আইনজীবীদের করা আবেদনের বিষয়ে আদালত কারাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। তবে তার দাবি ছিল তাকে যেন চট্টগ্রামে না রেখে ফেনীতে রাখা হয়। চট্টগ্রাম কারাগারে নাকি তার জীবননাশের সম্ভাবনা রয়েছে।’

কেন এই হুমকি সেটা জানতে চাইলে সিনিয়র জেল সুপার শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বাবুল আক্তার আমাদের কাছে বলেছেন, তিনি জেলা ও সিএমপির ডিবিতে থাকাকালীন সময়ে অনেক দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করেছিলেন। তারা এখন চট্টগ্রাম কারাগারে কেউ হাজতি বা কেউ কয়েদি। সেকারণে তাদের দ্বারা কোন ক্ষতি হতে পারে বলে শঙ্কা করছেন।’ 

তাহলে চট্টগ্রাম কারা কর্তৃপক্ষ কি ব্যবস্থা নিচ্ছে— এমন প্রশ্নের উত্তরে সিনিয়র জেল সুপার বলেন, ‘বাবুল আক্তারকে বিশেষ সেলে রাখা হয়েছে আপাতত। তাকে তো এখানে শুধুমাত্র হাজিরা বা মামলার শুনানির সময় আনা হয়। পুলিশি স্কট পাওয়া মাত্রই তাকে ফেনী কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।’ 

২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরের ও আর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন তৎকালীন পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। ওই সময় এ ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচিত হয়। ঘটনার সময় মিতুর স্বামী পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার অবস্থান করছিলেন ঢাকায়। ঘটনার পর চট্টগ্রামে ফিরে পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন তিনি। জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রমের জন্য স্ত্রীকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে বলে মামলায় অভিযোগ করেছিলেন বাবুল আক্তার। তবে দিন যত গড়িয়েছে মামলার গতিপথও পাল্টেছে। একপর্যায়ে সন্দেহের কেন্দ্রবিন্দুতে আসে স্বামী বাবুল আক্তারেরই নাম। 

তদন্তে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গত বছরের ১১ মে তাকে হেফাজতে নেয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গত ৯ জানুয়ারি বাবুলের করা মামলাতেই তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেছিল পিবিআই। পরবর্তীতে আদালত কয়েকদফা শুনানি পিছিয়ে তার নিজের মামলাতেই বাবুলকে গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দেন। পিবিআই যখন ২০১৬ সালের বাবুলের করা মামলা স্বামীকে আসামি হিসেবে গণ্য করে এরআগে গত বছরের ১২ মে করা মিতুর বাবা বাবুলের শ্বশুরের মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। পরবর্তীতে আদালত মিতুর বাবার মামলার সব তথ্য উপাত্ত বাবুলের করা আগের মামলায় একীভূত করে তদন্ত কাজ চালিয়ে নেওয়ার আদেশ দেন। 

মিতু হত্যা মামলায় স্বামী বাবুল আক্তার ছাড়াও অন্য আসামিরা হলেন, কামরুল ইসলাম মুছা, কালু, ওয়াসিম, শাহজাহান, আনোয়ার, এহতেসামুল হক ভোলা ও সাকি। 

গত বছরের মে থেকে গ্রেপ্তারের পর কিছু দিন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হলেও ২৯ মে তাকে ফেনী কারাগারে হস্তান্তর করা হয়।

সিভয়েস/এডি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়