Cvoice24.com

চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক জব্বারের বলীখেলা সোমবার, মেলা শুরু আজ

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০৯:৪৬, ২৪ এপ্রিল ২০২২
চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক জব্বারের বলীখেলা সোমবার, মেলা শুরু আজ

শত বছরের ঐতিহ্য জব্বারের বলী খেলাকে ঘিরে লালদীঘিজুড়ে উঠতে শুরু করেছে নতুন নতুন জিনিসপত্র। ছবি সৌজন্যে- মঞ্জুর মোরশেদ

অনেক আলোচনা-সমালোচনা নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে অবশেষে আলোর মুখ দেখছে চট্টগ্রামের শত বছরের ঐতিহ্য লালদীঘিতে ঐতিহাসিক জব্বারের বলী খেলা। এই বলী খেলাকে ঘিরে প্রতি বছরের মতো এবারও লালদিঘীর মাঠের আশপাশের দেড় বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে আজ থেকে শুরু হচ্ছে গ্রামীণ লোকজ মেলা।  ২৪, ২৫ ও ২৬ এপ্রিল তিনদিন চলবে মেলা। এর মধ্যে পসরা সাজিয়ে বসেছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ছোট বড় উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ীরা। তবে নানা কারণে এবার মেলার সময়সীমা কমে তিন দিন করায় অন্যবারের তুলনায় পণ্যের সমাহার কম।

সোমবার (২৫ এপ্রিল) বিকেল তিনটায় লালদীঘি মাঠের পাশে চার রাস্তার মোড় ঘেঁষে অস্থায়ী মঞ্চ করে হবে বলী খেলা।

১২ বৈশাখই লালদীঘিতে বলীখেলা ও মেলা হবে, দায়িত্ব নিলেন মেয়র

ঐতিহাসিক জব্বারের বলী খেলা উপলক্ষে কোতোয়ালী মোড় থেকে নিউ মার্কেট, বাংলাদেশ ব্যাংক মোড় থেকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, আন্দরকিল্লা ও জেল রোড থেকে শহীদ মিনার পর্যন্ত বসছে বৈশাখী মেলা। 

তবে মেলা ঘুরো দেখা গেছে অন্যান্যবারের তুলনায় এবার বিক্রেতা এসেছে কম। এর মধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে মাটির তৈজসপত্র, মুড়ি মুড়কি, গাছের চারা, ফুল ঝাড়ু, মাটির তৈরি তৈজসপত্র, খেলনা, ফুলদানি ও পুতুল, বেত-কাঠ ও বাঁশের তৈরি আসবাবপত্র, হাতপাখা, মাছ ধরার পলো, ডালা, কুলো, গাছের চারা, মুড়ি মুড়কি, পাটি আর নানা রকম দেশি ফলসহ খেলনা আর বাঁশ-বেতের পণ্য নিয়ে এসেছেন বিক্রেতারা। 

লালদীঘিতে জব্বারের বলীখেলা এবারও হচ্ছে না!

শত বছরের এই সাধারণত মুড়ি মুড়কি বিক্রি করতে আসেন নগরীর বাকলিয়া ও বলুয়ার দিঘীর পাড়ের ব্যবসায়ীরা। গাছের চারা নিয়ে আসে হাটহাজারী, বাঁশখালী ও সাতকানিয়ার নার্সারি মালিকরা। মাটির তৈজসপত্র আনেন টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ ও শরীয়তপুরের শিল্পীরা। ফুলঝাড়ু আসে তিন পার্বত্য জেলা থেকে। কুমিল্লা ও যশোর থেকে আসেন বিভিন্ন আসবাব বিক্রেতারা।

এদিকে, ঐতিহ্যবাহী আব্দুল জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা উপলক্ষে লালদিঘি অভিমুখী সকল প্রকার যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণের কথা জানিয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)।  

লালদীঘিতে জব্বারের বলীখেলা/ বন্ধ থাকবে যেসব পথ

শনিবার (২৩ এপ্রিল) বিকেলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (জনসংযোগ) শাহাদত হোসেন রাসেল সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। 

তিনি জানান, মেলা উপলক্ষে এখানে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিপুল সংখ্যক ক্রেতা, বিক্রেতা ও দর্শনার্থীর সমাগম হয়। মেলায় আগত লোকজনের সমাগমের কারণে মেলাকেন্দ্রিক আশপাশ এলাকায় রোববার থেকে মঙ্গলবার লালদীঘি অভিমুখী সকল প্রকার যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রিত থাকবে। আন্দরকিল্লা মোড় থেকে বক্সিরহাট-লালদিঘিগামী রাস্তা বন্ধ থাকবে। জেলা পরিষদ মার্কেট থেকে টেরিবাজার-আন্দরকিল্লাগামী রাস্তা, সিনেমা প্যালেস  থেকে কেসি দে রোড হয়ে সোনালী ব্যাংক পর্যন্ত রাস্তা, জহুর হকার্স/মহল মার্কেট থেকে বাটা ক্রসিং পর্যন্ত রাস্তা,  টেরিবাজার ফুলের দোকান থেকে টেরিবাজারগামী রাস্তা, আমানত শাহ মাজার রোডের মুখ থেকে টেরিবাজারগামী রাস্তায় যনবাহন চলাচল করতে পারবে না।  

জব্বারের বলীখেলা হচ্ছে না, আনুষ্ঠানিকভাবে জানালো আয়োজকেরা

তিনি বলেন, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স, কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং রোগীদের আসা-যাওয়ার জন্য সিএমপি সব ধরণের সহায়তা দেবে। টেরিবাজার, খাতুনগঞ্জ, আসাদগঞ্জ, চাক্তাইগামী সব ধরণের পণ্যবাহী গাড়ি, বড় গাড়ি রাজাখালী দিয়ে প্রবেশ করে মেরিন ড্রাইভ রোড দিয়ে বের হয়ে যাবে। 

যানবাহনের চালক ও নগরবাসীকে মেলা এলাকা এড়িয়ে বিকল্প সড়ক ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে সিএমপি।

লালদিঘীর সড়কে বলীখেলা-মেলার ঘোষণা দিলেন মেয়র

মেলার আয়োজক কমিটির সভাপতি জহর লাল বলেন, ‘সিএমপি সব ধরনের সহযোগিতা করছে। মেলায় যারা দোকান দিয়ে বসবেন তাদের কাছে কেউ চাঁদা দাবি করলে সাথে সাথে আমাদের জানালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে জিরো টলারেন্স থাকবে’

এদিকে শনিবার (২৩ এপ্রিল) বলীখেলার ট্রফি ও জার্সির মোড়ক উম্মোচন অনুষ্ঠান লালদীঘির আবদুল জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। বলীখেলার ট্রফি ও জার্সির মোড়ক উম্মোচন করেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী।
মোড়ক উম্মোচনকালে মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী শতোর্ধ্ব বর্ষের লোক-ঐতিহ্য আবদুল জাব্বার সওদাগরের বলীখেলা দেশপ্রেম ও স্বদেশী চেতনাকে সমুন্নত রাখে। 

বলীখেলা ও মেলার স্থান পরিদর্শন করলেন চসিক মেয়র

এসময় আন্দরকিল্লা ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহর লাল হাজারীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন বলীখেলা ও মেলা কমিটির সহসভাপতি ও চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদ চৌধুরী ফরিদ, সাধারণ সম্পাদক শওকত আনোয়ার বাদল, সাংগঠনিক সম্পাদক জামাল হোসেন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর রুমকি সেনগুপ্ত, মো. চঞ্চল প্রমুখ। 

প্রসঙ্গত, স্থানীয় বদর পাতি এলাকার বাসিন্দা আবদুল জব্বার সওদাগর চট্টগ্রামের যুবকদের ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করতে লালদীঘি মাঠে কুস্তি প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন ১৯০৯ সালে। সেই থেকে প্রতি বছর ১২ বৈশাখ লালদীঘির ময়দানে এই আয়োজন হয়ে আসছে। 

বলীখেলা নয়, হতে পারে শুধু বৈশাখী মেলা!

কিন্তু এবার লালদীঘি মাঠে সংস্কার কাজ চলমান থাকায় মাঠ মেলেনি। প্রথমে তাই বলী খেলার সঙ্গে মেলাও স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছিল আয়োজক কমিটি। পরে সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরীর উদ্যোগে খেলা ও মেলা আয়োজনের ব্যবস্থা হয়। পৃষ্ঠপোষকতা করছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।

এবারের খেলায় ১০০ জন বলী অংশ নেবেন। প্রথম স্থান অধিকারী পাবেন ২৫ হাজার টাকা পুরস্কার ও ট্রফি।

 

-সিভযেস/পিবি
 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়