Cvoice24.com

ব্যবসার ভরা মৌসুমেও মসলার আমদানিতে খরা

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০৯:৪৫, ২০ জুন ২০২২
ব্যবসার ভরা মৌসুমেও মসলার আমদানিতে খরা

পবিত্র ঈদুল আজহার আর মাত্র বিশ দিন বাকি। বৃহত্তর চট্টগ্রামের ভোগ্যপণ্যের বাজার খাতুনগঞ্জের আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে তৎপরতা।

মসলাপণ্য ব্যবসার ভরা মৌসুমে ডলারের দাম ও আন্তর্জাতিক বাজারে মসলার মূল্যবৃদ্ধি, পরিবহণ ভাড়া বাড়ার কারণে ঈদকে ঘিরে কমেছে মসলা আমদানি। তবে আমদানি কমলেও আসন্ন ঈদে মসলার মূল্য বৃদ্ধি ছাড়াই পর্যাপ্ত সরবরাহের বিষয়টি জোর দিয়ে বলছেন চট্টগ্রামের আমদানিকারকরা। 

চলতি বছর জলপথের পাশাপাশি স্থলপথেও মসলা আমদানি হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে জিরা, ধনিয়া, এলাচি, লবঙ্গ ও দারুচিনি আমদানি করা হলেও এ বছর স্থলবন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি হয়েছে জিরা। ভারত থেকেই এ পণ্য আমদানি করা হয়েছে। 

আমদানিকারকদের দাবি, মসলা জাতীয় পণ্যের আমদানি খরচ বাড়তে ও বিক্রি কমে যাওয়ায় শঙ্কা কাজ করছে তাদের মনে। এ কারণে চলতি বছর কম পরিমাণে এলসি খুলেছিলেন আমদানিকারকরা। এ কারণে মসলা আমদানিও গতবছরের তুলনায় কম হয়েছে। তবে যা সরবরাহ আছে তাতে করে কোরবানির ঈদ সামাল দেয়া সম্ভব হবে বলে জানান তারা। 

চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা গেছে, মসলার ৮২ শতাংশই আমদানি হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। পবিত্র ঈদুল আজহাকে ঘিরে এত বছর গড়ে ৫০ হাজার টন মসলা আমদানি হতো। এই আমদানি মূল্য ছিল ৭শ কোটি টাকার উপরে। চলতি অর্থবছরে মসলার আমদানি তুলনামূলক কমেছে। যা বন্দর দিয়ে মসলা আমদানির চিত্রেও ফুটে উঠেছে।  

চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) ৬ হাজার ৭শ টন জিরা, ২ হাজার ১৪৭ টন ধনিয়া, ২ হাজার ৯৮৪ এলাচি, ১ হাজার ৫৫২ টন লবঙ্গ, ১২ হাজার ৯৬৫ টন দারুচিনি আমদানি হয়েছে। এর আগে গত অর্থবছর অর্থাৎ ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ে ১৮ হাজার ৪১৬ টন জিরা, ২ হাজার ২৯৯ টন ধনিয়া, ৩ হাজার ৪০৫ টন এলাচি, ১ হাজার ৮১৪ টন লবঙ্গ ও ১০ হাজার ৬২৭ টন দারুচিনি আমদানি হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। 

এদিকে ভারত থেকে চলতি বছর হিলি স্থলবন্দর দিয়ে জিরা আমদানি করা হয়েছে। ভারত থেকে পাঁচ মাসে ১০ হাজার ৬০৭ টন জিরা আমদানি করা হয়েছে। জানুয়ারি মাসে ৩ হাজার ৩শ টন, ফেব্রুয়ারি মাসে ৩ হাজার টন, মার্চে ১ হাজার ৯৭০ টন, এপ্রিলে ২ হাজার ৫শ টন ও মে মাসে ৩ হাজার ৩০ টন জিরা আমদানি হয়েছে।

খাতুনগঞ্জের মসলা আমদানিকারকরা বলছেন, আগে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে জিরা আমদানি করা হলেও গত কয়েক বছর ধরে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে জিরা আমদানি করা হচ্ছে। তবে তারা বলছেন, ওষুধসহ রান্নার কাজে ব্যবহার হওয়ায় চট্টগ্রামের বিভিন্ন মোকামে জিরার চাহিদা বেশি। এতে অনেক আমদানিকারক স্থল বন্দর দিয়ে জিরার আমদানি বাড়িয়েছেন।

বাংলাদেশ মসলা আমদানিকারক সমিতির সহ-সভাপতি অমর দাশ সিভয়েসকে বলেন, বিশ্ববাজারে মাঝারি ও নিম্নমানের মসলা আছে। সৌদি আরবসহ বিভিন্ন উন্নত ও ধনী দেশগুলো ভালো মসলা নিয়ে যায়। ভারত-বাংলাদেশে মাঝারি ও নিম্নমানের মসলা আসে। যেমন-এলাচ আসে মাঝারি মানের। বন্দরের পাশাপাশি স্থলবন্দর দিয়েও মসলা আমদানি হচ্ছে। বিশেষ করে জিরা আমদানি হচ্ছে সড়কপথে। তবে ডলারের দাম ও আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় এ বছর মসলার আমদানি তুলনামূলক কম। কারণ ক্রেতার আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। আমাদের মোকামগুলোতেও বেচাবিক্রি কমে গেছে। তাই আমদানিকারকেরা কম এলসি খুলেছেন। আমদানিও গতবছরের তুলনায় কম করেছেন। তবে আমি নিশ্চিতভাবে চলতে চাই বাজারে যে পরিমাণ মসলার সরবরাহ আছে তাতে করে কোরবানের ঈদ সামাল দেয়া যাবে। পাশাপাশি মসলার দামও বাড়বে না, এটা হলফ করে বলতে পারি। 

এদিকে খাতুনগঞ্জের পাইকারি মসলার বাজারে ইরান থেকে আমদানি করা জিরা কেজিতে ৪শ টাকা, ভারত থেকে আমদানি করা জিরা ৩৮০ থেকে ৪শ টাকা, শুকনা মরিচ ১৮০ থেকে ১৯০, লবঙ্গ ১ হাজার ২০ টাকা, ধনিয়া ১১৫ টাকা, চীনা দারুচিনি ৩৫০ থেকে ৩৬০ টাকা, ভিয়েতনামের দারুচিনি ৩৮৫ থেকে ৩৯০ টাকা, এলাচ ১ হাজার ৩৫০ টাকা, ভারতীয় হলুদ ১২০ টাকা, দেশি হলুদ ১০২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া ভারতীয় পেঁয়াজ ৪০ টাকায়, আদা বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। 

খাতুনগঞ্জের মসলা আমদানিকারক ফারুক আহমদ জানালেন, দীর্ঘদিন ধরে বাড়তি জাহাজ ও কনটেইনার ভাড়া ভুগিয়েছে আমদানিকারকদের। ডলারের দাম বাড়ায় এলসি খুলতে গিয়ে খরচও বেড়ে গেছে। আগে ৮৫ থেকে ৮৭ টাকায় এলসি খুললেও এখন ৯৫ টাকায় খুলতে হচ্ছে। বেচাবিক্রিও তুলনামূলক কম। তাই মসলা আমদানি করতে গেলে আমাদের চিন্তা-ভাবনা করতে হচ্ছে। পণ্য এনে দোকানে ফেলে রাখলে তো লোকসান আমাদের। 

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাবের) চট্টগ্রামের ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন সিভয়েসকে বলেন, কোরবানের আর বেশিদিন বাকি নেই। ব্যবসায়ীরা যতোই বলুক মসলার দাম বাড়বে না কিন্তু কোরবানের সময় ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অতি মুনাফার লোভে বাড়তি দামে মসলা বিক্রি করবেন। শুকনা মরিচ আমাদের দেশে উৎপাদিত হয়। অথচ এটিও বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে। তাই প্রশাসন, ভোক্তা অধিকারসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে এখন থেকে বাজার তদারকি করতে হবে।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়