Cvoice24.com

তাজিয়া মিছিলে আতশবাজিসহ সকল ধরনের অস্ত্র নিষিদ্ধ

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৮:০৩, ৮ আগস্ট ২০২২
তাজিয়া মিছিলে আতশবাজিসহ সকল ধরনের অস্ত্র নিষিদ্ধ

মহরম মাসের ৯ ও ১০ তারিখে নগরে বর্ণাঢ্য তাজিয়া মিছিল, শোক মিছিল ও কোনো-কোনো এলাকায় রক্তাক্ত ‘ছুরি খেলার’ প্রচলন রয়েছে। তাই আগামীকাল মঙ্গলবার পবিত্র আশুরা উপলক্ষে চট্টগ্রাম নগরে তাজিয়া ও শোক মিছিলে আতশবাজি ও সব ধরনের অস্ত্র বহন নিষিদ্ধ করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। 

সোমবার (৮ আগস্ট) সিএমপির সদর দপ্তরের কনফারেন্স রুমে আসন্ন পবিত্র আশুরা উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকদের এসব কথা জানান সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়।

সিএমপি’র পক্ষ থেকে জানিয়েছে, নগরের বিভিন্ন স্থান থেকে ৬টি মিছিল শহরের বিভিন্ন রুট প্রদক্ষিণ করবে। দিনের বেলায় তাজিয়া মিছিল সম্পন্ন করা করতে হবে। রাতের বেলায় তাজিয়া মিছিল এবং রাস্তায় কোন ধরনের সমাবেশ করা যাবে না। তাজিয়া মিছিলে বহনকারী বাঁশ-ঝান্ডার দৈর্ঘ্য ১২ ফুটের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। মিছিলে চলমান গাড়ী চলাচলকালে বৈদ্যুতিক-টেলিফোন বা অন্য কোন তারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলে তা নিরসনের জন্য ‘ভি’ আকৃতিকর আংটাযুক্ত বাঁশ সঙ্গে রাখতে হবে। মিছিলে ছোরা, বল্লম, চাকুসহ কোন ধরনের অস্ত্র বহন করা যাবে না। নির্ধারিত সময়ে মিছিল শুরু ও শেষ করা এবং তাজিয়া মিছিলের রুট ও সময় সংক্ষিপ্ত করা। মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা উশৃঙ্খল আচরণ না করা। মিছিলের জন্য নির্দিষ্ট রুট অবশ্যই অনুসরণ করা এবং এক রুটের তাজিয়া মিছিল অন্য রুটে যাওয়া থেকে বিরত থাকা। মিছিলে আতশবাজি-পটকা বহন ও ফোটানো থেকে বিরত থাকা। রাস্তায় যান চলাচলের প্রতি দৃষ্টি রেখে তাজিয়া মিছিল পরিচালনা করা এবং তাজিয়া মিছিল চলাকালে রাস্তায় যাতে কোন যানজট সৃষ্টি না হয় সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। দু’টি তাজিয়া মিছিল মুখোমুখি না হওয়া এবং এক মিছিলের রুটে অন্য মিছিল না যাওয়া। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার লক্ষে কোন উষ্কানিমূলক বক্তব্য-কার্যক্রম বা কোন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ঢিল না ছোড়া। 
  
আশুরা উদ্যাপন কমিটির উদ্দেশে সিএমপি থেকে আরও বলা হয়, কমিটির নেতৃবৃন্দরা সুশৃঙ্খলভাবে আশুরা উদযাপনের লক্ষে নিজেরা সভা করে নিজ নিজ এলাকায় দিক নির্দেশনা প্রদান করার জন্য। তাজিয়া কমিটি কর্তৃক স্ব-স্ব উদ্যোগে স্বেচ্ছাসেবক-নিরাপত্তা কর্মী মোতায়েন করা এবং স্বাক্ষরিত নামের তালিকা ও মোবাইল নম্বর সিটিএসবি-সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দেওয়া। স্বেচ্ছাসেবকদের চেনার সুবিধার্থে গেঞ্জি-ক্যাপ-আর্মডব্যান্ড ব্যবহারের ব্যবস্থা করা। মিছিলে যাতে অনাকাঙ্খিত কোন লোক প্রবেশ করতে না পারে সে ব্যাপারে স্ব-স্ব তাজিয়া কমিটির নিয়োজিত স্বেচ্ছাসেবক দ্বারা নিশ্চিত করা। শোকমিছিল শুরু হওয়ার পরে পথিমধ্যে আশেপাশের ছোট ছোট গলি থেকে কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ গ্রুপ আকারে প্রবেশ করতে না পারে তার ব্যবস্থা করা। তাজিয়া মিছিল চলাকালে নিরাপত্তার স্বার্থে কোন প্রকার ব্যাগ, ব্যাগ সদৃশ্য বস্তু, টিফিন বক্স, প্রেসার কুকার, দাহ্য পদার্থ নিয়ে প্রবেশ এবং অবস্থান করা থেকে বিরত রাখা। নামায ও আযানের সময় মাইক-লাউড স্পিকার না বাজানো। ফেসবুক, টুইটার বা অন্য কোন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তিমূলক প্রচার-প্রচারণা না করা এবং আপত্তিকর কোন কিছু মনে হলে তাৎক্ষণিক পুলিশকে অবহিত করা। একইসঙ্গে মিছিলে মাদক পরিহার করা এবং মিছিল চলাকালে দায়িত্ব পালনে পুলিশকে সহায়তা করার কথা জানানো হয়।

উল্লেখ্য, কারবালা প্রান্তরে হজরত মুহাম্মদ (স.) এর দৌহিত্র ইমাম হোসেন (রা.) এর শাহাদতবরণের শোকাবহ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মূলত শিয়ারা বিশেষভাবে আশুরা পালন করে থাকে। 

কয়েকবছর আগেও নগরের বহু এলাকা থেকে বর্ণাঢ্য তাজিয়া মিছিল বের করা হতো। কোন এলাকার তাজিয়া কতো সুন্দর এবং মিছিল কার বড়ো হয়েছে এসব নিয়ে এক ধরণের এলাকাভিত্তিক প্রতিযোগিতা চলতো। এসব মিছিল থেকে হাতাহাতি, মারামারি পর্যন্ত হয়ে যেতো। বিহারি অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে শোক মিছিল ও রক্তাক্ত ‘ছুরি খেলা’র আয়োজন করা হতো। কালের পরিক্রমায় নগরীতে বর্তমানে এসব প্রবণতা কমে এলেও বিহারি কলোনিগুলোতে এখনো বেশ কিছু প্রথা চালু আছে।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়