Cvoice24.com

দশ বছর পেরিয়ে গেলেও উচ্চতর গ্রেড পাচ্ছেন না চসিকের ৮৭ শিক্ষক

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২২:৩৮, ১৭ আগস্ট ২০২২
দশ বছর পেরিয়ে গেলেও উচ্চতর গ্রেড পাচ্ছেন না চসিকের ৮৭ শিক্ষক

২০১১ সালে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত বিভিন্ন বিদ্যালয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত হন ৮৭ জন শিক্ষক। ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও তাঁরা এখনো সহকারী শিক্ষক। অথচ নিয়ম অনুযায়ী সরকারি চাকরিতে একই পদে ১০ বছর হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই উচ্চতর গ্রেড পাওয়ার কথা থাকলেও দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো তাঁরা নবম গ্রেডে অর্ন্তভুক্ত হতে পারেননি। এ নিয়ে কয়েকদফা আবেদন করেও কর্তৃপক্ষ থেকে কোনোরকম সদুত্তর পাননি এই শিক্ষকেরা। শিক্ষকদের দাবি, চসিকের অবহেলায় ঝুলে আছে তাঁদের এই উচ্চতর গ্রেড। উচ্চতর গ্রেড বঞ্চিত শিক্ষকদের মধ্যে এ নিয়ে চলছে জোর আলোচনা-সমালোচনা। কবে নাগাদ দেওয়া হবে তা নিয়েও মন্তব্য করতে নারাজ সিটি কর্পোরেশন।

সরকারি চাকরির বেতনস্কেল অনুসারে কোন স্থায়ী কর্মচারী পদোন্নতি ছাড়া একই পদে ১০ বছর পূর্তিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ১১তম বছরে উচ্চতর গ্রেডে বেতন পাবেন। এছাড়া ১৬ বছর পূর্তিতে আরেকটি উচ্চতর গ্রেড পেয়ে থাকেন। 

কিন্তু চসিকের এই ৮৭ জন শিক্ষকের উচ্চতর গ্রেড পাওয়ার সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো ঝুলে আছে। মূলত গত বছরের এপ্রিলে এইসকল শিক্ষকদের নবম গ্রেডভুক্ত হওয়ার কথা ছিল। এ নিয়ে তারা আবেদন করলে চসিক থেকে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়। সেই তদন্ত কমিটি একটি তালিকাও করেন। কিন্তু তালিকা করা পর্যন্তই থেমে আছে উচ্চতর গ্রেডের কাজ। এমনকি এ নিয়ে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছে খোদ চসিকের কর্মকর্তারাই। তারা বলছেন, চসিক পরিচালিত স্কুলগুলোতে শিক্ষকরা সুযোগ সুবিধা বেশি পাচ্ছেন আর সে কারণেই উচ্চতর গ্রেডে অর্ন্তভুক্ত করছেন না এসকল শিক্ষকদের।

অভিযোগ রয়েছে, উচ্চতর গ্রেড বঞ্চিত এই শিক্ষকদের আগের ব্যাচের প্রায় শতাধিক শিক্ষক ১০ বছর পূর্তিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে উচ্চতর গ্রেড পেয়ে গেছেন। প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টরা এ ৮৭ জন শিক্ষদের উচ্চতর গ্রেড স্কেল বিনাকারণে ঝুলিয়ে রেখেছেন।

জানা যায়, চসিক পরিচালিত ৩২টি বিদ্যালয়ের উচ্চতর গ্রেড বঞ্চিত ৮৭ জন শিক্ষকের মধ্যে শহীদ নগর সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪ জন, পাথরঘাটা মেনকা সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪ জন, হোসেন আহমদ চৌধুরী সিটি কর্পোরেশন স্কুল এন্ড কলেজের ৪ জন, অপর্ণাচরণ সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ জন, কাপাসগোলা সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৫ জন, কুলগাঁ সিটি কর্পোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪ জন, ইমরাতুন্নেসা সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪ জন, চর চাক্তাই সিটি কর্পোরেশন উচ্চ বিদ্যালয় ৫ জন, কাট্টলী সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ৪ জন, কৃষ্ণকুমারী সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৩ জন, পশ্চিম মাদারবাড়ি সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৩ জন, পূর্ব বাকলিয়া সিটি কর্পোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ জন, পোস্তারপাড় আছমা খাতুন সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ২ জন, আলকরণ নুর আহম্মদ সিটি কর্পোরেশন বালিক উচ্চ বিদ্যালয়ের ৩ জন, জুলেখা আমিনুর রহমান সিটি কর্পোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়ের ২ জন, ছালেহ্ জুহুর সিটি কর্পোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়ের ২ জন, পাঁচলাইশ সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪ জন, সরাইপাড়া সিটি কর্পোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়ের ২ জন, রেলওয়ে হাসপাতাল কলোনি সিটি কর্পোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়ের ১ জন, বাগমনিরাম আব্দুর রশীদ সিটি কর্পোরেশন বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ১ জন, কদম মোবারক সিটি কর্পোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়ের ১ জন, পূর্ব মাদারবাড়ি সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১ জন, ফতেয়াবাদ শৈলবালা সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ২ জন, রামপুর সিটি কর্পোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়ের ১ জন, গোসাইলডাঙা কেবি এএইচ দোভাষ সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১ জন, হাজী আবদুল আলী সিটি কর্পোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়ের ১ জন, লামাবাজার এএএস সিটি কর্পোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়ের ১ জন, আইয়ুব বিবি সিটি কর্পোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়ের ১ জন, জামালখান কুসুমকুমারী সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১ জন, দক্ষিণ পতেঙ্গা সিটি কর্পোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়ের ১ জন, বলুয়ারদিঘী সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১ জন, হালিশহর আহম্মদ মিয়া সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১ জন এবং হালিশহর আলহাজ্ব মহব্বত আলী সিটি কর্পোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়ের ১ জন রয়েছেন। এদের মধ্যে ৭৪ জন শিক্ষক ২০১১ সালের এপ্রিলে এবং বাকিরা মে মাসে বিভিন্ন স্কুলে যোগদান করেন।

আফসোসের সুরে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক সিভয়েসকে বলেন, ‘আমরা আমাদের পাওনাটা চাইছি, যেটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে পাওয়ার কথা। অথচ কর্তৃপক্ষ দেড় বছর কাটিয়ে দিল। কখন দিবে তাও বলছে না। আদৌ পাবো কিনা তাও আমরা জানি না। আমরা কয়েকদফা দেখা করতে চেয়েও আমাদের সঙ্গে দেখা করতে চাননি তারা। যেটা আমাদের পাওনা সেটা নিয়ে কেন এতো তালবাহানা করছে তার কারণ আমাদের বোধগম্য না। আমাদের আগের ব্যাচের যারা ছিলেন তারা কিন্তু উচ্চতর গ্রেডে অর্ন্তভুক্ত হয়েছে গেছে। কিন্তু আমাদেরটা ঝুলিয়ে রেখেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের কথা হচ্ছে যেটা আমরা পাবো সেটা দিক। বাড়তি সুবিধা তো চাইছিনা। এমনকি এটাও শুনছি যে এরিয়ারও দিবে না আমাদের। মানে এই একবছরের বেশি সময় হয়ে গেল আমরা এখনো এটার আওতাভুক্ত হইনি এই সময়ের বকেয়াটা আমাদের দেওয়া হবে না।’

নাম প্রকাশে আরেক শিক্ষক বলেন, ‘কতগুলো দিন আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে আসছি তার ঠিক নাই। আমরা যে শিক্ষক তারও নূন্যতম সম্মান আমাদের দেওয়া হয়নি। সাবেক মেয়রের আমলে কিন্তু এমনটা হয়নি। কর্তৃপক্ষ যদি আমাদের জানাতো এই কারণে আপনাদের উচ্চতর গ্রেড দেওয়া হচ্ছে না। আপনারা ঠিক এতোদিন পর পাবেন বা এই সময়ে পাবেন। ভালোমন্দ ব্যাপার আছে না? তারা কথাও বলতে চায় না। কর্পোরেশনের স্কুলগুলোতে এতো বেশি অব্যবস্থানার মুখোমুখি আগে হতে দেখিনি। এখন যা যা হচ্ছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার সিভয়েসকে বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ যখন সিদ্ধান্ত দিবে তখনই তারা পাবেন। এই বিষয়ে আমি কিছুই বলতে পারবো। আপনি বরং আমার অথোরিটিকে জিজ্ঞেস করেন। তারা ভালো বলতে পারবেন। কেন দেওয়া হচ্ছে না। কেন পাচ্ছেন না। সব বিষয়ে মন্তব্য তাদের কাছে জানতে চান।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সবকিছুই অথোরিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হবে। ফাইনাল ডিসিশন তো আমি দিচ্ছি না। এ নিয়ে কি হবে তা আমি বলতে পারবো না এবং জানিও না।’

প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তার সূত্র ধরে একই বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নিবার্হী কর্মকর্তা শহিদুল আলম সিভয়েসকে বলেন, ‘ঝুলে থাকার কোনো কারণ নাই। এরা (শিক্ষকরা) সিটি কর্পোরেশন থেকে অনেক সুযোগ সুবিধা নেয়। এরা যখন যেটা সুযোগ সুবিধা চায় সেটাই বাহির করে। অনেক বেসরকারি যে আইন আছে সেটা পক্ষে গেলে সেটা বাহির করে আবার সরকারি কোনো বিধিবিধান হলে সেটা বাহির করে। তারা সুযোগ সুবিধা পাওয়ার ধান্ধায় থাকে। তাদের কাজই হলো এগুলো। কিভাবে সুযোগ সুবিধা আদায় করবে সেটা নিয়ে তারা খুব ব্যস্ত। পাঠদানে আগ্রহ আছে কিনা সেটা নিয়ে আমার সন্দেহ। এজন্য দেরি করতেছি।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কেন এরিয়ার দিবো? কেন দিবো? আপনি তাদেরকে একটা জিনিস জিজ্ঞেস করিয়েন যে তারা যে হাউজ রেন্ট নেয় সেটা কোন আইনে নেয়? আবার অবসরে যাওয়ার সময় প্রভিডেন্টবাবদ লক্ষ লক্ষ টাকা নেয়, সরকারের থেকে যে ১০ পারসেন্ট ছিল সেটাও নেয়। সুযোগ সুবিধা পাওয়ার বেলায় চসিককে চুষে নিবে সেটা কি হয়? কোন আইনে তারা এসব নেয়?’

-সিভয়েস/এসআর/এআর

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়