Cvoice24.com

লিবিয়া থেকে ফিরে অভ্যর্থনা পেলেন মুফতি ইজহার, ছিলেন আ’লীগের কাউন্সিলরও

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২১:৫৯, ১৮ আগস্ট ২০২২
লিবিয়া থেকে ফিরে অভ্যর্থনা পেলেন মুফতি ইজহার, ছিলেন আ’লীগের কাউন্সিলরও

দীর্ঘদিন লিবিয়ায় থাকার পর হঠাৎ দেশে ফিরছেন ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশের চেয়ারম্যান মুফতী ইজহারুল ইসলাম চৌধুরী। একসময় চারদলীয় জোটে থাকা আলোচিত এই নেতাকে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় থেকে সবসময় জঙ্গি ও চরমপন্থী নেতা হিসেবে অভিযুক্ত করা হলেও দেশে ফিরে আসার পর নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি আবুল হাসনাত বেলালের নেতৃত্বে তাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। 

রীতিমতো মিছিল করে ফুল দিয়ে বরণ করে তাকে লালখান বাজার মাদ্রাসায় নিয়ে যাওয়া হয় আবুল হাসনাত বেলালের নেতৃত্বে। তবে বেলাল বলছেন, স্থানীয় কাউন্সিলর হিসেবে তাকে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে মাদ্রাসার তরফ থেকে। যেহেতু তিনি তাদের কাছে ভোট চাইতে গিয়েছিলেন সেহেতু তাদের দাওয়াত রাখাও তার কর্তব্য বলে মনে হয়েছে। সে কর্তব্যবোধ থেকে তিনি সেখানে গিয়েছিলেন।  

বৃহষ্পতিবার (১৮ আগস্ট) দুপুর ১২টার দিকে লিবিয়া ফেরত মুফতি ইজহারকে মিছিল করে লালখান বাজার এলাকা থেকে লালখান বাজার মাদ্রাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। মিছিলে নেতৃত্ব দেন আবুল হাসনাত বেলাল। পরে মাদ্রাসার ভেতর তাকে সংবর্ধনাও দেওয়া হয় যেখানে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে মুফতি ইজহারকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। 

মুফতি ইজহার দেশের কওমি ভাবধারার আলেমদের মধ্যে প্রভাবশালী একজন। বিভিন্ন সময়ে তাকে চরমপন্থী ও জঙ্গি হিসেবে অভিযুক্ত করে আসছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। হেফাজতের উত্থানের সময় ওয়াসার মোড়ে হেফাজতের অবস্থান কর্মসূচির সমন্বয় করেন তিনি। সেই সময়ে লালখান বাজার মাদ্রাসায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটলে তুমুল আলোচনায় আসেন তিনি। এমন একজন ব্যক্তির হঠাৎ দেশে ফেরা এবংং তাকে আওয়ামী লীগের মনোনীত একজন কাউন্সিলরের নেতৃত্বে সংবর্ধনা দেওয়ায় অবাক হয়েছেন দলটির নেতাকর্মীরা। এটি নিয়ে দিনভর নগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে চাপা গুঞ্জন থাকলেও বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে চাইছেন না দলটির কেউই।

তবে এই বিষয়ে জানতে চাইলে আবুল হাসনাত বেলাল সিভয়েসকে বলেন, ‘আসলে এখানে আমাকে কাউন্সিলর হিসেবে ইনভাইট করছে। আবার প্রচারণার সময় তাদের কাছে গেছি। এখন সরকারের সাথে যতই দূরত্ব থাকুক বিভিন্নভাবেতো এদের কাছে আমরা ভোটের জন্য যাই। তো আমরা যদি ভোটের জন্য যাই পরবর্তীতে যদি তারা আমাদেরকে দাওয়াত করে তাহলেতো যেতে হবে।’

সেখানে কাওমিদের প্রতি সরকারের মানসিকতা ও ইসলামের প্রসারে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকার বিষয়ে বার্তা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্য নিয়েই গিয়েছেন মন্তব্য করে আবুল হাসনাত বেলাল বলেন, ‘আমি জনপ্রতিনিধি হিসেবে গিয়ে সেখানে বক্তব্যটা কী করছি? আমি বলছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাদের কাওমি সনদ দিয়েছে। সারাদেশে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ৫৬০ টা মডেল মসজিদ নির্মাণ করছেন। বিগত দিনে এই দেশে ইসলামের কল্যাণে প্রধানমন্ত্রীর চেয়ে বেশি কাজ কেউ করেনি। তাদের যদি সত্যিকারের দ্বীনের জন্য কোন নেতৃত্ব মেনে নিতে হয় তাহলে তাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকেই নেতা মানা উচিৎ। এসব বলেছি। এখন আমি যদি এসব নাই বলি এসব কথাতো ওদের কাছে পৌঁছাবেনা। সরকারও চাইছে তাদের একটা পজিটিভ জায়গায় নিয়ে আসতে। যাতে শান্তি সম্প্রীতি বজায় রাখি। আমার যাওয়াটাও সেই কাজেরই একটা অংশ। আমিও চাই এলাকায় শান্তি বজায় থাকুক। তাই আমি সরকারের মানসিকতা তাদের কাছে পৌঁছে দিতে সেখানে গেছি।’

আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায় থেকে তাকে যে দেশের ‘শীর্ষ জঙ্গি’ বলা হয় সেটি মেনে নিয়ে তিনি সেখানে গেছেন নাকি সেটা তিনি বিশ্বাস করেন না? সিভয়েসের এমন প্রশ্নের জবাবে আবুল হাসনাত বেলাল বলেন, ‘আপনি হাটহাজারী মাদ্রাসাকে কেন্দ্র করে সবকিছু যদি দেখেন সব জায়গায় কিন্তু সরকার পজিটিভ ওয়ার্কের মাধ্যমে তাদের একটা আস্থার জায়গায় আনার চেষ্টা করছে। এখন উনাকে জঙ্গি বলা হয় বা উনাকে যেটাই বলা হয় উনি যেহেতু দেশের বাইরে থেকে আসছে তাহলে আপনাকে বুঝতে হবে উনার যাওয়াটা গভমেন্টের ইচ্ছার বাইরে হয়নি। উনি কিন্তু লিবিয়া থেকে ঘুরে আসছেন। তো সরকার উনাকে পজিটিভ ওয়েতে আনার চেষ্টা করেছেন হয়তো। নাহলে একজন ‘শীর্ষ জঙ্গি’ দেশের বাইরে কিভাবে যায়?'

প্রসঙ্গত এক সময় বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট শরিক আল্লামা আজিজুল হক ও মুফতি ফজলুল হক আমিনীর নেতৃত্বাধীন ইসলামী ঐক্যজোটের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন মুফতি ইজহারুল ইসলাম। ২০০১ সালে জোট সরকার গঠিত হওয়ার পর ইসলামী ঐক্যজোট ভেঙে গেলে তিনি মুফতি আমিনীর নেতৃত্বাধীন অংশের মহাসচিব হন। পরবর্তীতে তিনি নিজেই ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান হয়ে যান। এরপর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটে অংশ নেয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। ১/১১ এর সময় জোট সরকারের কঠোর সমালোচক হিসেবে পর্দায় আর্বিভূত হন।

২০১৩ সালের ১০ জুলাই চট্টগ্রামের লালখান বাজার মাদ্রাসায় ভয়াবহ গ্রেনেড বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে তিনজন নিহত হয়। আহত হয় বেশ কয়েকজন। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ২০১৩ সালের অক্টোবরে ইজহারপুত্র মুফতি হারুনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক হারুনের বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন কারাগারে বন্দি ছিলেন।

মুফতি ইজহারকেও পরবর্তীতে একই অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনিও দীর্ঘ সময় কারাগারে ছিলেন। গ্রেপ্তারের পর গোয়েন্দারা তাকে সাংবাদিকদের সামনে নিয়ে এলে তিনি দুই আঙুল তুলে ভি-চিহ্ন দেখিয়ে বলেন, আমি মহাজোটের প্রতিষ্ঠাতা।

লালখান বাজার মাদরাসায় গ্রেনেড বিস্ফোরণের পরপরই পালিয়ে যায় মুফতি ইজহারুল ইসলাম চৌধুরী। প্রায় দুই বছর পলাতক থাকার পর গত কয়েকদিন আগে তিনি লালখান বাজার মাদরাসায় ফিরে আসেন। মাদরাসায় গ্রেনেড বিস্ফোরণের ঘটনায় দায়ের করা তিনটি মামলায় মুফতি ইজহার ও তার ছেলে হারুন ইজহারসহ বেশ কয়েকজনকে আসামি করা হয়। বিস্ফোরক, এসিড নিয়ন্ত্রণ আইন ও একটি হত্যাসহ তিনটি মামলা বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।

সিভয়েস/এআরটি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়